অমিত ভাটিয়া, মুম্বই: 'পহেলি এন্ট্রি পর ইতনা বাওয়াল নহি করতা, জিতনা দুসরি এন্ট্রি পর করতা হ্যায়'- এই সংলাপ পুষ্পা ২ ছবিরই, আর ঠিক তেমনই এই সিনেমাও। প্রথম বারের তুলনায় দ্বিতীয় ছবি আরও আকর্ষণীয়। এর আগে বলা হয়েছিল 'পুষ্পা ফ্লাওয়ার নেহি ফায়ার থা'। আর এবার অল্লু অর্জুনের ডায়লগ 'ম্যায় ওয়াইল্ড ফ্লাওয়ার হুঁ'। এই সংলাপ যে ঠিক কতটা সত্যি তার উদাহরণ পাওয়া গিয়েছে পুষ্পা ২- দ্য রুল ছবির পরতে পরতে। আক্ষরিক অর্থেই পুষ্পা এবার 'ওয়াইল্ড ফায়ার'। এই সিনেমার সমস্তটা জুড়ে রয়েছে শুধুই একটা জিনিস। আর তা হল এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট এবং এন্টারটেনমেন্ট। বিনোদনে ভরপুর এই সিনেমা দেখতে বসলে কিন্তু যুক্তি খুঁজলে চলবে না। বরং নিজের মস্তিষ্ক পুষ্পার 'ওয়াইল্ড ফায়ার'- এর মধ্যে রেখে দিন। ভয় বা চিন্তা কোনওটাই করার দরকার নেই। কারণ পুষ্পা আপনার বিনোদনের সব খেয়াল রাখবেন। ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিটের ছবি দেখার পর আপনার মাথা, মন-মেজাজ থাকবে একদম চাঙ্গা। যুক্তি না খুঁজে শুধু বিনোদন পেতেই যান এই সিনেমা দেখতে। আর যে ছবি এই দীর্ঘ সময় বিনা যুক্তিতে আপনাকে ভরপুর বিনোদন দেবে, সেই সিনেমা নিঃসন্দেহে সেরা। আর এই রকম সিনেমা ভালভাবে ব্যবসা করবে এমনটাই কাম্য। 


পুষ্পা ২- দ্য রুল ছবির গল্প 


এই ছবিতে পুষ্পা লাল চন্দনের বিশাল বড় স্মাগলার। চন্দন ব্যবসার সিন্ডিকেটের প্রধানও এই পুষ্পাই। কিন্তু মানুষ যত সফল হল, ততই বাড়ে তাঁর শত্রুর সংখ্যা। বাস্তবে জীবনে একথা যেমন ধ্রুব সত্য, তেমনই দেখা গিয়েছে ছবিতেও। পুষ্পা-র সিক্যুয়েলে মিঞা-বিবি মানে রশ্মিকা মান্দানা এবং অল্লু অর্জুনের অন-স্ক্রিন রসায়ন কিন্তু বেশ ভালভাবেই চাক্ষুষ করতে পারবেন দর্শকরা। বউয়ের সমস্ত কথা মেনে চলে পুষ্পা। সিনেমার গল্পে রশ্মিকা তাঁর স্বামী পুষ্পাকে বলে যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে যাবে তখন যেন ছবি তুলে নেয়। এদিকে একজন স্মাগলারের সঙ্গে মোটেই ছবি তুলতে রাজি নন মুখ্যমন্ত্রী। আর তাতেই চটে গিয়ে একবারে মুখ্যমন্ত্রী বদলে দেওয়ার পরিকল্পনা করতে শুরু করে পুষ্পা। এর জন্যই ৫০০০ কোটি টাকার লাল চন্দন বিদেশে পাচার করতে হবে পুষ্পাকে। এ কাজে আদৌ কি সে সফল হবে, কী হবে, আর পুষ্পার সবচেয়ে বড় শত্রু পুলিশ অফিসার ভানওয়ার সিং শেখাওয়াত কী করবেন, এই সবকিছু জানতে হলে যেতে হবে সিনেমা হলে। পুষ্পা ২- দ্য রুল ছবি সিলভার স্ক্রিনে দেখে মজা পাবেন আপনি। 


কেমন হয়েছে এই ছবি 


'মাস এন্টারটেনমেন্ট' বলতে যা বোঝায় পুষ্পা ২- দ্য রুল একেবারেই সেই ঘরানার ছবি। সিনেমার প্রতিটি দৃশ্যে রয়েছে ভরপুর এন্টারটেনমেন্ট। এই ছবি দেখতে বসলে যুক্তি মাথায় আসবে না আপনার, পুষ্পাকে যা করতে দেখবেন সবই বিশ্বাস হয়ে যাবে। একটার পর একটা দৃশ্য তাক লাগিয়ে দেবে। হলে সিটি, তালি সবই বাজবে নিঃসন্দেহে। পুষ্পার চরিত্রও ভারী অদ্ভুত। সে সহজেই 'সরি' বলে দেয়। এদিকে তার জীবনের মূলমন্ত্র হল 'ঝুকেগা নেহি'। তাই 'সরি' বলার পরেও গোটা ছবি জুড়ে পুষ্পা যা যা করেছে তার জন্য একটাই কথা প্রযোজ্য, 'বাওয়াল হয়েছে'। সিনেমা হলে দর্শক টানার সমস্ত মশলা রয়েছে এই ছবিতে। ৩ ঘণ্টা ২০ মিনিট, অনেকটা দীর্ঘ সময়ের ছবি, কিন্তু তাও বিরক্তি লাগবে না। বরং মনে হবে আরও কিছু দেখতে পেলেও বেশ লাগত, মন্দ হতো না। কিছু সিনেমা থাকে যা সিনেমা হলে গিয়েই দেখার জন্য আদর্শ। পুষ্পা ২- দ্য রুল ছবিটিও একদম তাই। 


অভিনয় 


ছবির মূল চরিত্র পুষ্পা সত্যিই অনন্য-অসাধারণ। অল্লু অর্জুনের অভিনয় আপনাকে বিশ্বাস করিয়ে দেবে যে রুপোলি পর্দায় আপনি যা দেখছেন সেগুলো বাস্তবে সম্ভব এবং পুষ্পা সত্যিই সেগুলো করতে পারে। এমনিতেই অল্লু অর্জুনের স্টাইল নিয়ে কিছু বলার নেই। আর পুষ্পা চরিত্রে যে ম্যানারিজম, সোয়াগ তিনি এই ছবিতে দেখিয়েছেন সেটাই আপনাকে মুগ্ধ করবে। সমস্ত দৃশ্য জুড়ে রয়েছেন শুধুই পুষ্পা, অল্লু অর্জুন। ৫ বছর ধরে যে মেহনত তিনি করেছেন, তা স্পষ্ট দেখা গিয়েছে এই সিনেমায়। সিলভার স্ক্রিনে হিরোগিরি করার একটা আলাদা মাত্রা নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন অল্লু অর্জুন। তাঁকে টেক্কা দিতে চাইলে অন্য নায়কদের কিন্তু সাংঘাতিক কিছুই করতে হবে রুপোলি পর্দায়। 


তবে শুধু অল্লু অর্জুন নন, রশ্মিকা মান্দানার অভিনয়ও এই ছবিতে নজর কেড়ে নেবে আপনার। অল্লু অর্জুনের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সের সামনে একটুও ফিকে লাগবে না রশ্মিকার অভিনয়। আর এই সঙ্গেই বলতে হবে আরও একটি নাম, ফাহাদ ফসিল। পুলিশ অফিসারের চরিত্রে অভিনয় করেছেন ফাহাদ। হিরো পুষ্পার সঙ্গে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়েছেন ভিলেনের চরিত্রে অভিনয় করা মালয়ালম অভিনেতা ফাহাদ ফসিল। এছাড়াও জগদীশ প্রতাপ ভাণ্ডারী, জগপতি বাবু, সৌরভ সচদেব সকলের অভিনয়ই প্রশংসনীয়। 


পরিচালনা এবং লেখনী 


পুষ্পা ২- দ্য রুল সিনেমায় সুকুমারের লেখনী এবং পরিচালনা, দুটোই সমান প্রশংসা পাওয়ার দাবি রাখে। এন্টারটেনমেন্ট এবং সোয়াগ- এই দুইয়ের উপর নির্ভর করেই ছবি তৈরি করেছেন তিনি। যা তৈরি করতে চেয়েছিলেন সেটাই নির্মাণ করেছেন। লক্ষ্যভ্রষ্ট হননি। আর এটাই সুকুমারের সাফল্য। একটার পর একটা তাক লাগানো দৃশ্য রয়েছে এই ছবিতে। একটা দেখে ঘোর কাটার আগেই চোখের সামনে থাকবে আরও একটা ব্লকবাস্টার সিন। 


সঙ্গীত 


পুষ্পা ২- দ্য রুল ছবির যদি কোনও খামতি থাকে তা হল এই ছবির গান। 'সামি' গানটি ছাড়া বাকি কোনও গানই সহ্য করা যায় না। তবে ছবির ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর বেশ ভাল। তবে সব মিলিয়ে বছর শেষে এই ছবি সিনেমা হলে গিয়ে দেখাই যায়, ভরপুর বিনোদন পাবেন আপনি। 


রেটিং- ৪ স্টার