মনোজ বন্দ্যোপাধ্যায়, দুর্গাপুর: দেশজুড়ে অক্সিজেনের হাহাকার। শুধু শ্বাস নিতে না পেরে প্রতিদিন মৃত্যু হচ্ছে একাধিক প্রাণের। করোনার দ্বিতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার পর থেকেই দিল্লির বিভিন্ন হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব দেখা গিয়েছে। কোথাও অক্সিজেনের অভাবে মৃত্যুর ঘটনা পর্যন্ত ঘটছে। অক্সিজেনের জন্য হাহাকার করতে দেখা গিয়েছে রোগী ও তাঁর পরিজনদের।
আর এই পরিস্থিতিতে শনিবার দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্টের অক্সিজেন প্ল্যান্ট থেকে ১২০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন রওনা দিল দিল্লিতে। এদিন এক-একটি ট্যাঙ্কারে ২০ মেট্রিক টন করে ছটি ট্যাঙ্কারে মোট ১২০ মেট্রিক টন তরল অক্সিজেন পৌঁছয় রেলের নিয়ন্ত্রণাধীন কনটেনার কর্পোরেশন ইন্ডিয়া লিমিটেডের অফিসে। সেখান থেকে ক্রেনে করে তা তোলা হয় রেলের ওয়াগানে। ঘটনাস্থলে ছিলেন দুর্গাপুর স্টিল প্ল্যান্ট ও রেলের পদস্থ আধিকারিকরা।
শনিবার বিশ্বে প্রথমবার ভারতেই দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা পেরিয়ে গিয়েছে ৪ লক্ষ। দৈনিক মৃতের সংখ্যাও লাগাতার সাড়ে তিন হাজারের ওপরে। হাসপাতালে বেডের আকাল। অক্সিজেনের অভাবে ছটফট করতে দেখা যাচ্ছে রোগীদের।
এরইমধ্যে শনিবার অক্সিজেনের অভাবে ৮ করোনা আক্রান্তের মৃত্যুর চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠল দিল্লির বত্রা হাসপাতালে। মৃতদের মধ্যে একজন চিকিত্সকও রয়েছেন। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, প্রশাসনকে অক্সিজেনের অভাবের কথা বারবার জানিয়েও কোনও লাভ হয়নি।
আর অক্সিজেনের অভাবে দেশের রাজধানীর বুকে আট-আটটি প্রাণ চলে যাওয়ার খবর পাওয়া মাত্র ক্ষোভে ফেটে পড়ে দিল্লি হাইকোর্ট। কেন্দ্রীয় সরকারকে অত্যন্ত ভৎসনা করে দিল্লি হাইকোর্টের বিচারপতি বিপিন সাঙ্ঘি ও রেখা পাল্লির ডিভিশন বেঞ্চ বলে, অনেক হয়েছে। এনাফ ইজ এনাফ। আপনাদের ব্যবস্থা (অক্সিজেন) করতেই হবে। এবার মাথার ওপর দিয়ে জল বইতে শুরু করেছে। কেন্দ্রকে কড়া সুরে দিল্লি হাইকোর্ট বলে, আপনাদের কি মনে হচ্ছে, দিল্লিতে মানুষ মরবে, আর আমরা চোখ বন্ধ করে থাকব? আমাদের সামনে ৮ জনের প্রাণ চলে গেল। আমরা চোখ বন্ধ করে থাকতে পারব না।
এরপরই কেন্দ্রীয় সরকারকে দিল্লি হাইকোর্ট স্পষ্ট নির্দেশ দেয়, আজ থেকেই দিল্লিকে তার বরাদ্দ ৪৯০ মেট্রিক টন অক্সিজেন দিতে হবে। এই নির্দেশ অমান্য করা হলে, তা আদালত অবমাননা হিসাবে ধরা হবে। আমরা কাজ চাই। অক্সিজেনের যোগান নিয়ে এর আগেও কেন্দ্রকে তিরস্কার করেছিল দিল্লি হাইকোর্ট।