নয়াদিল্লি: বিমানের চাকা আঁকড়ে এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি। যুদ্ধ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে নয়, বিপর্যয় এড়াতেও নয়, শুধুমাত্র কৌতূহলের বশবর্তী হয়েই এমন কাণ্ড ঘটাল এক কিশোর। বিষয়টি জানাজানি হতেই যদিও তাকে আবার বাড়ি ফেরত পাঠানো হয়েছে। তবে কিশোরের সাহস দেখে তাজ্জব সকলে। (Afghan Boy Flew to Delhi)
রবিবার দিল্লির ইন্দিরা গাঁধী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ট্যাক্সিওয়েতে সাদা কুর্তা-পাজামা পরিহিত এক কিশোরকে দেখা যায়। তাকে এদিক ওদিক ঘোরাঘুরি করতে দেখে সন্দেহ জাগে কর্মীদের। খবর দেওয়া হয় বিমানবন্দরের সিকিওরিটি অপারেশন্স কন্ট্রোল সেন্টারে। (Afghanistan News)
ওই কিশোরের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আফগানিস্তানের কুন্দুজের বাসিন্দা ওই কিশোর। Kam Airlines-এর RQ-4401 বিমানে চেপে কাবুল থেকে দিল্লি এসো পৌঁছয় সে। রবিবার সকাল ১১টা বেজে ১০ মিনিটে বিমান দিল্লিতে এসে নামে। এই টানা দেড় ঘণ্টার যাত্রাপথে বিমানের চাকা ধরে ঝুলে ছিল সে।
কিন্তু ওই কিশোর যে বিমানের চাকায় ঝুলে এতটা পথ পাড়ি দিল, তা কারও নজরে পড়ল না? জানা গিয়েছে, বিমানের পিছনের চাকার মধ্যে এমন ভাবে সেঁধিয়ে গিয়েছিল ওই কিশোর, যে কেউই তাকে দেখতে পাননি। শুধু লাল রংয়ের একটি অডিও স্পিকার ছিল তার হাতে। প্রচণ্ড ঠান্ডার মধ্যেও চাকা আঁকড়ে বসেছিল ওই কিশোর। অক্সিজেনের ঘাটতি সত্ত্বেও নিরাপদেই দিল্লিতে নামে সে।
খবর পেয়েই ওই কিশোরকে আটক করা হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা ৩ নম্বর টার্মিনালে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে CISF. ওই কিশোর জানায়, কৌতূহলবশতঅ বিমানের চাকা ধরে ঝুলে পড়েছিল সে। রবিবার বিকেলেই অন্য বিমানে চাপিয়ে ওই কিশোরকে কাবুল ফেরত পাঠানো হয়। লাল রংয়ের অডিও স্পিকারটি আটকে রাখা হলেও, বিমানটিতে তল্লাশি চালিয়ে কিছু পাওয়া যায়নি।
চার বছর আগে আফগানিস্তান থেকে যখন সরে যায় আমেরিকার সেনা, সেই সময়ও বিমানের চাকায় ঝুলে পালানোর চেষ্টা করেন কাবুলের বহু মানুষ, যার পরিণতি হয়েছিল ভয়ঙ্কর। তবে এই ধরনের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ২০২৪ সালে ডমিনিকান রিপাবলিক থেকে আমেরিকার ফ্লোরিডায় নামা বিমানের চাকা থেকে দু’টি দেহ উদ্ধার হয়। ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসে আলজিরিয়ার এক যুবককে আশঙ্কাজনক অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। বিমানের চাকায় ঝুলে প্যারিস রওনা দিয়েছিল সে। ২০২১ সালে গুয়াতেমালানের এক যুবক বিমানের চাকায় ঝুলেই মায়ামিতে নামেন।
আমেরিকার ফেডারেল এভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের পরিসংখ্যান বলছে, ১৯৪৭ থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত বিমানের চাকায় চেপে অন্যত্র পালানোর চেষ্টা করেন ১৩২ জন। তবে এক্ষেত্রে মৃত্যুর হার অত্যন্ত বেশি, ৭৭ শতাংশ। কারণ এই ধরনের যাত্রা বেশ ঝুঁকিপূর্ণ এবং দুঃসাধ্যও। আকাশে ওড়ার পর চাকার অংশ ভাঁজ হয়ে গেলেও, অবতরণের সময় চাকায় পিষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকে। অত উঁচুতে ঠান্ডায়, অক্সিজেনের অভাবেই মৃত্য়ু হতে পারে। শ্রবণশক্তি হারানো, দেহের তরলে অ্যাসিডের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, কোমায় চলে যাওয়ার বিপদও রয়েছে।