সিওল: ২১ ঘণ্টার শিফট। তার মধ্যে ৪০০ ডেলিভারি। অসম্ভব মনে হলেও এটাই বাস্তব। দক্ষিণ কোরিয়ায় ঠিক এতটাই চাপ নিয়ে কাজ করে চলেছেন অনলাইন সংস্থার ডেলিভারি বয়রা। এই অতিরিক্ত চাপ নিতে না পেরে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন ১৪জন।


পরপর কয়েকটি ডেলিভারি বয়ের টেক্সট মেসেজের দিকে চোখ রাখলেই তাঁদের দুর্দশার কথা টের পাওয়া যাবে। ভোর পাঁচটা বাজতে না বাজতেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়তেন কিম। এক সহকর্মীকে কিমের টেক্সট—


এটা অত্যধিক চাপ। আর পারছি না।


এমন মেসেজের চারদিন পরেই মারা যান কিম।


জাং দেওক। লাগাতার নাইট শিফট করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলেন। শরীর এতটাই খারাপ হয়ে পড়ে যে ১৮ মাসে ১৫ কেজি ওজন কমে যায় তাঁর। ২৭ বছরের দেওকের একই পরিণতি হয়েছে। নাইট শিফট শেষ করে দেওক বাড়ি ফিরেছিলেন ভোর ছটায়। বা়ড়ি ঢুকে স্নান করতে যান। এরপরের ঘটনা অত্যন্ত মর্মান্তিক। বাথ টাবে ছেলেকে মৃত অবস্থায় পান বাবা।


কিম বা জাং শুধু নন। এই অমানবিক শিফটের বলি হয়েছেন তাদের মতো আরও বারো জন। পরিবার-পরিজনদের কাছে দক্ষিণ কোরিয়ার ভাষায় এই ম়ৃত্যুর কারণ কোয়ারোসা—যার অর্থ অতিরিক্ত পরিশ্রম করার ফলে হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হয়ে মৃত্যু।


অতিমারির জেরে বিশ্বব্যাপী মানুষের অনলাইনে কেনাকাটা বেড়েছে। প্রতিবারের চেয়ে এবার দক্ষিণ কোরিয়াতেও অনলাইনে কেনাকাটা প্রায় দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অনলাইন ডেলিভারি দিনের ভিত্তিতে হিসেব হয় না। ঘণ্টার হিসেবে ডেলিভারি দিতে হয়। আর সেটাই বাড়তি চাপ হয়ে দাঁড়াচ্ছে কর্মীদের কাছে। শুধু অতিরিক্ত কাজের চাপ নয়, পে প্যাকেজ নিয়েও অনলাইন সংস্থার কর্মীদের মধ্যে ক্ষোভ রয়েছে। এমনকি ডেলিভারি দিতে দেরি হলে, বা কোনও কারণে পার্সেল হারিয়ে গেলে তাঁদের প্রাপ্য টাকা থেকে ফাইন বাবদ টাকা কেটে নেওয়া হয়। এই শোচনীয় কাজের পরিবেশের বিরুদ্ধে সরবও হয়েছেন কর্মীরা। অগাস্ট মাসে দক্ষিণ কোরিয়ার শ্রমমন্ত্রক বিষয়টিতে নজর দিয়েছিল। সংস্থাগুলির কাছ থেকে মন্ত্রক প্রতিশ্রুতি আদায় করেছিল, যাতে এই ধরনের কর্মীদের লাগাতার ওভারনাইট শিফট করতে না হয়, এবং ডেলিভারি বয়রা যথেষ্ট বিশ্রাম পান। কিন্তু এত কিছুর পরে তাদের অবস্থার যে পরিবর্তন হয়নি, ১৪ জনের মৃত্যু তার প্রমাণ।