কলকাতা : পেট্রোপণ্যের লাগাতার মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিঃশ্বাস উঠেছে মধ্যবিত্তের। ফি দিনই পেট্রোল-ডিজেলের দাম বেড়েই চলেছে। এই ইস্যুতে ইতিমধ্যেই তৃণমূল রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় প্রতিবাদ আন্দোলেন নেমেছে। পথে নেমেছেন জনপ্রতিনিধিরাও। সরব হয়েছে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে। এবার ২১ জুলাই উপলক্ষে বক্তব্য রাখার সময় সরব হলেন দলীয় সুপ্রিয়ো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সরকারের পরিচয় কাজে, মন কি বাতে নয়। পেট্রোল-ডিজেল-রান্নার গ্যাসের আকাশছোঁয়া মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে মোদি সরকারকে এইভাবেই আক্রমণ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তৃণমূল কর্মীদের প্রতিদিন আধ ঘণ্টা ধরে আন্দোলনের নির্দেশ দেন তিনি। তিনি প্রশ্ন করে, পেট্রোল, ডিজেল, রান্নার গ্যাসের দাম বাড়ছে কেন ? মানুষের রান্নাঘরে আগুন জ্বলছে। কেউ চিন্তা করবার নেই। প্রতিদিন যখন সময় পাবেন, মানুষকে ডিস্টার্ব না করে আধ ঘণ্টা করে প্রতিবাদ করবেন। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বাড়ল কেন জবাব চাই, জবাব দাও।


শনিবার, লিটারপ্রতি ৩৪ পয়সা বেড়ে কলকাতায় পেট্রোলের দাম হয়েছে ১০২ টাকা ০৮ পয়সা। অন্যদিকে, লিটারপ্রতি ডিজেলের দাম একই রয়েছে ৯৩ টাকা ০২ পয়সায়। ২ মে পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের ফল ঘোষণার পর থেকে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ৪১ বার। আর ডিজেল বেড়েছে ৩৭ বার। জ্বালানির এই রেকর্ড দাম নিয়ে কেন্দ্রের তরফে বরাবরই বিশ্ব বাজারে অপরিশোধিত তেলের দামবৃদ্ধির কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু পরিসংখ্যান বলছে উল্টো কথা। গত ১০ দিনে বিশ্ববাজারে অপরিশোধিত তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ৪ ডলার অর্থাৎ, প্রায় ৩০০ টাকা কমেছে। কিন্তু, এই সময়ে কমা তো দূরের কথা, উল্টে লিটারে পেট্রোলের দাম বেড়েছে ২ টাকা। জ্বালানির দাম নিয়ে কেন্দ্র ও তেল সংস্থাগুলির বিরুদ্ধে অস্বচ্ছতার অভিযোগ তুলেছেন পেট্রোল ডিলাররা।


করোনাকালে ত্রাহি ত্রাহি অবস্থা। প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতেও। কাজ হারিয়েছেন বহু মানুষ। আবার অনেকের বেতন কমেছে। এই অবস্থায় পকেটে টান পড়া অসংখ্য মানুষের উদ্বেগ বাড়িয়েই চলেছে জ্বালানির দাম। পেট্রোল-ডিজেলের এইভাবে দাম বেড়ে চলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে প্রতিবাদে পথে নেমেছে তৃণমূল। পেট্রোল-ডিজেলের অগ্নিমূল্যের প্রতিবাদে দিন দুয়েক আগেই প্রতিবাদস্বরূপ সাইকেলে চড়ে সংসদে যান তৃণমূল সাংসদরা। বৃষ্টির মধ্যেই দিল্লিতে তৃণমূলের সদর দফতর সাউথ অ্যাভিনিউ থেকে স্লোগান দিতে দিতে প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে সাইকেলে চেপে রওনা দেন ডেরেক ও ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অর্পিতা ঘোষরা। ছিলেন অসিত মালও। সাত তৃণমূল সাংসদ সাদার্ন অ্যাভিনিউতে অবস্থিত তৃণমূলের দফতর থেকে সাইকেল চালিয়ে সংসদে পৌঁছন। কিন্তু, বিজয় চকে ব্যারিকেড থাকায় পুলিশের সঙ্গে বচসায় জড়ান তৃণমূল সাংসদরা। পুলিশের তরফে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখান দিয়ে যাবেন। তাই রাস্তা বন্ধ। তৃণমূল সাংসদরা দাবি করেন, ইচ্ছে করেই পুলিশ বাধা দেয়, যাতে তাঁরা সংসদে না পৌঁছতে পারেন। কিছুক্ষণ পর, ফের তাঁরা রওনা দেন সংসদ ভবনের উদ্দেশে। পেট্রোপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে তৃণমূলের প্রতিবাদ যে আরও বাড়তে চলেছে তা আজ দলনেত্রীর বক্তব্যেই স্পষ্ট।