নয়াদিল্লি: ২২টি বিরোধী দল একজোট হয়ে কেন্দ্রের সরকারকে উমপুনের তাণ্ডবে ঘটে যাওয়া ধ্বংসলীলাকে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণার দাবি করল কেন্দ্রের কাছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় নজিরবিহীন প্রলয় ঘটানো সাইক্লোনে ক্ষতিগ্রস্ত পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষাকে পর্যাপ্ত সহায়তা দিতে হবে বলেও দাবি তাদের। শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ২২টি দলের নেতারা একটি প্রস্তাব গ্রহণ করে বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার হওয়া উচিত ত্রাণ ও পুনর্বাসন। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, আমরা, বিরোধী দলগুলি পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িষার জনগণ ও সরকারের প্রতি সমবেদনা, সমর্থন জানাই যাতে তাঁরা উমপুনের ক্ষয়ক্ষতি, আঘাত মোকাবিলা করতে পারেন। করোনাভাইরাসের দাপটের মধ্যেই উমপুনের মতো প্রাকৃতিক বিপর্যয় মানুষের ওপর দ্বিগুণ আঘাত, তাদের মনোবল ভেঙে গিয়েছে বলে অভিমত বিরোধীদের। তাই বিরোধী দলগুলি কেন্দ্রকে অবিলম্বে একে জাতীয় বিপর্যয় ঘোষণা করে এর ধাক্কা মোকাবিলায় রাজ্যগুলিকে পর্যাপ্ত সহায়তা দিক।
কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধীর ডাকা বৈঠকে যোগ দেয় তৃণমূল, এনসিপি, ডিএমকে, বামেরা ও অন্য দলগুলি। সনিয়ার পাশাপাশি ছিলেন রাহুল গাঁধী, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী ও শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে,
ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী ও ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চার হেমন্ত সোরেন, এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার,
প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও জনতা দল সেক্যুলারের এইচ ডি দেবগৌড়া, সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি, ডিএমকে প্রধান স্ট্যালিন, সিপিআইয়ের ডি রাজা, রাষ্ট্রীয় লোক সমতা পার্টির নেতা উপেন্দ্র কুশওয়াহা, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, ন্যাশনাল কনফারেন্সের ওমর আবদুল্লা, AIUDF সাংসদ বদরুদ্দিন আজমল-সহ বিজেপি বিরোধী নেতারা।
শুরুতে সনিয়া বলেন, মাত্র ৪ ঘণ্টার নোটিসে, ২৪ মার্চ লকডাউন ঘোষণা হয়েছিল, তখন সরকারের সিদ্ধান্তে পরিকল্পনাহীনতার ছাপ থাকলেও, আমরা লকডাউনের সিদ্ধান্ত সমর্থন করেছিলাম। প্রাথমিকভাবে প্রধানমন্ত্রীর আত্মবিশ্বাস দেখে মনে হয়েছিল, তিনি ২১ দিনের মধ্যে করোনার বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করে ফেলবেন। পরে তা ভ্রান্ত ধারনায় পরিণত হয়েছে। এখন মনে হচ্ছে, এই ভাইরাস দীর্ঘদিন থাকবে, যতদিন না এর ভ্যাকসিন আবিষ্কার হচ্ছে। পরপর লকডাউন হচ্ছে। তাতে লাভের লাভ কিছু হচ্ছে না। পরীক্ষার ক্ষেত্রেও সরকারি ভূমিকা সদর্থক নয়। অর্থনীতি পঙ্গু হয়ে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী ২০ লক্ষ কোটি টাকার প্যাকেজ ঘোষণা করেছিলেন। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ৫ দিন ধরে তার ব্যাখ্যা দিলেন, যা গোটা দেশের কাছে নির্মম পরিহাস বলেই মনে হয়েছে। শুধুমাত্র পরিযায়ী শ্রমিকরাই নন, সেই ১৩ কোটি পরিবার - যাঁরা কারও জমিতে খেতমজুরের কাজ করেন, যাঁরা ছোট্ট দোকান চালিয়ে সংসার চালান, যে ৬ কোটি মানুষ ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করে, তাঁরাই সবচেয়ে সমস্যায়। এঁরাই দেশ চালান। আমাদের মতো বহু বিরোধী দল সেই সমস্ত মানুষদের হাতে সরাসরি টাকা পৌঁছে দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করেছে।