রায়পুর: ঘন জঙ্গলে রুদ্ধশ্বাস অভিযান নিরাপত্তা বাহিনীর। গুটি গুটি পায়ে মাওবাদীদের ডেরায় হানা, তার পর দীর্ঘ গুলির লড়াই। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে শেষ পর্যন্ত মৃত্যু হল ২৯ মাওবাদীর। নিহত মাওবাদীরা নিষিদ্ধ কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মাওয়িস্ট) সংগঠনের সদস্য বলে জানা গিয়েছে। নিহতদের মধ্যে সংগঠনের শীর্ষ তিন ক্যাডার রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে। (Chhattisgarh Maoist Encounter)


ছত্তীসগঢ়ের বস্তারের জঙ্গলে এই অভিযান চালায় নিরাপত্তা বাহিনী। কাঙ্কের-নারায়ণপুর সীমানা এলাকায় অভিযান চালানো হয়। মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে নিরাপত্তা বাহিনীর তিন জওয়ানও আহত হয়েছেন বলে খবর। গুলিবিদ্ধ হন তাঁরা। তবে তাঁদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানা গিয়েছে। নিহতের সংখ্যার নিরিখে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে এটাই ছত্তীসগঢ়ে এযাবৎকালীন বৃহত্তম অভিযান বলে দাবি রাজ্য সরকারের। এর আগে, ২০১৮ সালে মহারাষ্ট্রের গডচিরৌলিতে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে ৩৭ মাওবাদীর মৃত্যু হয়। (Bastar Maoist Encounter)


ছত্তীসগঢ় পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কাঙ্কের ডিস্ট্রিক্ট রিজার্ভ গার্ড (DRG)  এবং বর্ডার সিকিওরিটি ফোর্স (BSF) যৌথ ভাবে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে অভিযান চালায়। কাঙ্কেরের ছোটেবিটিয়া থানা এলাকার মধ্যে পড়ে ওই এলাকা। সেখানে মাওবাদীরা ঘাঁটি গেড়ে রয়েছেন বলে গোপন সূত্রে খহর মেসে। এর পরই অভিযান চালানো হয়। 



আরও পড়ুন: Ram Navami: ভোটের মুখে রামনবমী, হাওড়ায় কাল বিশ্ব হিন্দু পরিষদের পাশাপাশি তৃণমূলেরও মিছিল


বস্তার রেঞ্জের ইনস্পেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ পি সুন্দররাজ জানিয়েছেন, তল্লাশি অভিযান চালাতে গিয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ বাধে মাওবাদীদের। দু'পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়। সংঘর্ষ থামলে জঙ্গলের  মধ্যে থেকে ২৯ মাওবাদীর দেহ উদ্ধার হয়। পাশাপাশি, মাওবাদীদের ডেরা থেকে AK-47, INSAS, SLR, Carbine 303-সহ বিপুল অস্ত্রশস্ত্র উদ্ধার হয়েছে বলেও খবর। 


BSF জানিয়েছে, ১৫ এপ্রিল রাতে মাওবাদীদের বিরুদ্ধে যৌথ অভিযান চালানো হয়। মাওবাদীদের গতিবিধি, তাদের অবস্থান নিয়ে গোপন সূত্রে খবর এসে পৌঁছেছিল। জানা যায়, এপ্রিল মাস থেকে জঙ্গলের মধ্যে ওই এলাকায় পাকাপাকি আশ্রয় গড়ে তুলেছে মাওবাদীরা। নিহতদের মধ্যে মাওবাদীদের উত্তর বস্তার ডিভিশনের দুই শীর্ষ ক্যাডার রয়েছেন, শঙ্কর এবং ললিতা। আগেই ৫০ লক্ষ টাকা করে তাঁদের মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছিল।


নিহত ২৯ মাওবাদীদের মধ্যে সকলকে এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। তাঁদের শনাক্ত করতে রাজ্য পুলিশের সাহায্য নেওয়া হচ্ছে। এখনও জঙ্গলের মধ্যে থেকে সব দেহগুলি বের করা যায়নি। দেহগুলি বের করে আনার কাজ চলছে বলে জানা গিয়েছে।


গত বছরই ছত্তীসগঢ় বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হয়ে রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি, তার পর থেকেই সেখানে মাওবাদীদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়েছে বলে অভিযোগ। কড়া হাতে মাওবাদীদের দমন করতে নেমেছে নিরাপত্তা বাহিনী। চলতি বছরের গোড়া থেকে এখনও পর্যন্ত সেকানে ৭৯ মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে। ২০১৯ সালে ছত্তীসগঢ়ে নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে ৮০ মাওবাদী মারা যান, সেই নিরিখে এ বছর প্রথম চার মাসেই ৭৯ মাওবাদীর মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে রাজ্য পুলিশ। 


বস্তারের এই অভিযান নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্য়, 'উন্নয়ন, শান্তি এবং যুবসমাজের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের সবচেয়ে বড় শত্রু নকশালবাদ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে এই নকশালবাদের হাত থেকে ভারতকে মুক্ত করতে বদ্ধপরিকর আমরা। সরকারের কড়া নীতি এবং নিরাপত্তা বাহিনীর প্রচেষ্টাতেই বর্তমানে নকশালবাদ কোণঠাসা। খুব শীঘ্র ছত্তীসগঢ় এবং গোটা দেশ নকশালমুক্ত হবে'। অভিযান সফল হওয়ার জন্য নিরাপত্তা বাহিনীকে অভিনন্দনও জানিয়েছেন শাহ।