টোকিও: প্রতি নিয়ত প্রযুক্তি জগতে বিপ্লব ঘটে চলেছে। ভার্চুয়ার দুনিয়ার বিস্তার বাড়ছে জীবনে। কিন্তু এতকিছুর মধ্যেও নিঃসঙ্গতা রয়ে যাচ্ছে জীবনে, কোনও কিছুতেই যা পূরণ হচ্ছে না। বরং সেই নিঃসঙ্গতা প্রতিদিন কুরে কুরে খেয়ে নিচ্ছে আমাদের। নিঃসঙ্গতা কতটা ভয়াবহ হতে পারে, এবার তার প্রমাণ মিলল হাতে-কলমে। পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে জাপানে বাড়িতে নিঃসঙ্গ অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার মানুষ মারা গিয়েছেন। (Japan Lonely Deaths)


জাপানের পুলিশ-প্রশাসনের তরফে এই পরিসংখ্যান প্রকাশ করা হয়েছে। বলা হয়েছে, বছরের প্রথম ছ'মাসেই একাকী, নিঃসঙ্গ অবস্থায় নিজের বাড়িতে প্রায় ৪০ হাজার নাগরিক মারা গিয়েছেন। এর মধ্যে, অনেকের মৃত্যুর খবরই বাইরে আসেনি। মৃত্যুর এক মাসেরও বেশি সময় পর ৪০০০ মানুষের দেহ উদ্ধার করা হয়। (Loneliness in Japan)


রাষ্ট্রপুঞ্জের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পৃথিবীর প্রবীণতম জনসংখ্যার বাস জাপানে। সেই আবহেই এই রিপোর্ট সামনে আনল জাপানের ন্যাশনাল পুলিশ এজেন্সি। দেশের প্রবীণ জনসংখ্যা কতটা নিঃসঙ্গ, তা-ই প্রতিফলিত হয়েছে এই রিপোর্টে। ২০২৪ সালের প্রথম ছ'মাসের রিপোর্টেই নিঃসঙ্গ অবস্থায় প্রায় ৪০ হাজার (৩৭ হাজার ২২৭) মানুষের মৃত্যুর হিসেব মিলেছে। এর মধ্যে ৭০ শতাংশেরই বয়স ৬৫ ঊর্ধ্ব। বাড়িতেই একাই বাস করতেন তাঁরা। 


যে ৩৭ হাজার ২২৭ জনের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষের দেহ উদ্ধার হয় এক দিনের মধ্যে। কিন্তু ৩ হাজার ৯৩৯ জনের দেহ উদ্ধার হয় এক মাসেরও বেশি সময় পর। ১৩০ জনের দেহ পড়ে ছিল এক বছর ধরে। পরে উদ্ধার হয় সেগুলি। যত দেহ উদ্ধার হয়, তার মধ্যে ৭ হাজার ৪৯৮ জনের বয়স ছিল ৮৫ ঊর্ধ্ব, ৫ হাজার ৯২০ জনের ৭৫-৭৯ বছর, ৫ হাজার ৬৩৫ জনের ৭০ থেকে ৭৪ বছরের মধ্যে। যাঁদের পরিবার-পরিজনের খোঁজ মেলেনি, তাঁদের নিয়ে প্রাপ্ত তথ্য সরকারি সংস্থার হাতে তুলে দেবে পুলিশ। 


এর আগে, চলতি বছরের শুরুতে জাপানের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ পপুলেশন অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিওরিটি রিসার্চ জানায়, ৬৫ ঊর্ধ্ব, জাপানের প্রবীণ নাগরিকের সংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ ১ কোটি ৮০ লক্ষে পৌঁছতে পারে। ওই একই সময়ে বাড়ি পিছু একাকী মানুষের সংখ্যা দাঁড়াবে ২ কোটি ৩৩ লক্ষ। এ বছর এপ্রিল মাসে জাপান সরকার একটি বিল আনে, যাতে প্রবীণ নাগরিকদের একাকীত্ব ঘোচানোর বেশ কিছু উপায়ের উল্লেখ ছিল। বার্ধক্যের পাশাপাশি, জন্মের হারে যে পতন ঘটেছে, তা-ও চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে জাপানে। চিন, দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশেও একই অবস্থা।