নয়াদিল্লি: ঘরে ঘরে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্র চোখে পড়ে। কিন্তু গোটা পৃথিবীতে এখনও ৬৭ কোটি ৫০ লক্ষ মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত। এর মধ্যে অধিকাংশ মানুষই আফ্রিকা, বিশেষ করে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে, আফ্রিকা মহাদেশের বাসিন্দা (Electricity Access)। আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির (IEA) একটি রিপোর্টে এমনই দাবি করা হল (Energy Crisis)।


IEA জানিয়েছে, ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সি, রাষ্ট্রপুঞ্জের রাশিবিভাগ, বিশ্বব্যাঙ্ক এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে লাগাতার প্রচেষ্টা চালানো হলেও, গোটা বিশ্বকে বিদ্যুৎ সংযোগের আওতায় আনার কাজ এগোচ্ছে ঢিমে তালে। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার কাজে বড় ধরনের ফারাক থেকে যাচ্ছে। 


IEA-র পরিসংখ্যান অনুযায়ী, পরিষেবা এবং দামের নিরিখে বিদ্যুৎ সংযোগকে সহজলভ্য করে তোলার ক্ষেত্রে এখনও অনেক পিছিয়ে রয়েছে বিশ্ব। এর আগে, ২০১৫ সালে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্য নিয়েছিল রাষ্ট্রপুঞ্জ। কিন্তু ২০৩০ সাল পর্যন্তও সেই লক্ষ্যপূরণ সম্ভব নয় বলে জানানো হয়েছে। বরংযে গতিতে কাজ এগোচ্ছে, তাতে ২০২৩ সাল পর্যন্তও গোটা পৃথিবীতে ৬৬ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত থাকবেন বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। 


আরও পড়ুন: Most Expensive Cities: প্রবাসে থাকা-খাওয়ার খরচ জোগাড় হতে পারে দুষ্কর, সামনে এল বিশ্বের ব্যয়বহুল শহরের তালিকা


বিগত দশকের শেষার্ধে এ ব্যাপারে যথেষ্ট উন্নতি চোখে পড়েছিল। ২০১০ সালে যেখানে পৃথিবীর ১১০ কোটি মানুষ বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত ছিলেন, ২০২১ সালে তা কমে হয় ৬৭ কোটি ৫০ লক্ষ হয়। এর মধ্যে ৮০ শতাংশই আফ্রিকা, বিশেষ করে সাহারা মরুভূমির দক্ষিণে, আফ্রিকা মহাদেশের বাসিন্দা। ২০১০ সাল থেকেই আফ্রিকার ওই অংশে বিদ্যুতের ঘাটতি রয়েছে। 


এ প্রসঙ্গে বিশ্ব ব্যাঙ্কের পরিকাঠামো বিভাগে ভাইস প্রেসিডেন্ট গুয়াংঝে চেং বলেন, "বৈদ্যুতিকরণের গতি সম্প্রতি শ্লথ হয়ে পড়েছে। একটি বা দু'টি দেশে নয়, বিশ্বের সর্বত্রই প্রায় একই চিত্র।" সাম্প্রতিক কালে পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদনে বৃদ্ধি চোখে পড়লেও, ঘাটতি মেটানোর পক্ষে তা যথেষ্ট নয় বলে মত বিশেষজ্ঞদের। 


IEA-র ফাতিহ বিরলের কথায়, "অনেকেই ভাবছেন, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তির উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু সকলের কাছে, সস্তায়, নিরাপদে তা পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। তাই কোটি কোটি মানুষ আজও বিদ্যুৎহীন থেকে গিয়েছেন।" তবে এর জন্য কোভিড পরিস্থিতিতে দায়ী করতে নারাজ বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, দরিদ্র দেশগুলিতে অতিমারির ঢের আগে থেকেই পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। 


এই পরিস্থিতির যে ব্যাখ্যা মিলেছে, তা হল, বিদ্যুতের দাম যে হারে বাড়ছে, দরিদ্র দেশগুলি যে ভাবে ঋণের ভারে নুয়ে পড়ছে, তাতেই সকলের কাছে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার কাজ দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।   পরিস্থিতি এতটাই সঙ্কটজনক যে, ২০৩০ সাল পর্যন্ত পৃথিবীর ১৯০ কোটি মানুষ রান্নার গ্য়াস থেকে বঞ্চিত থেকে যাবেন বলে আশঙ্কা। 


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার একটি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ক্ষতিকর জ্বালানির প্রভাবে গোটা পৃথিবীতে প্রত্যেক বছর প্রায় ৩২ লক্ষ প্রাণহানি ঘটে। তাই ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগ, নির্ভরযোগ্য স্বাস্থ্য পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া অত্যাবশ্যক বলে সম্প্রতি মন্তব্য করেন WHO প্রধান টেড্রস অ্যাডানম গেব্রিয়েসাস। নইলে ভবিষ্য়ৎ প্রজন্মের জন্য ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।