নয়াদিল্লি: মায়ের পেট থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েই পৃথিবীর সঙ্গে প্রথম পরিচয় শিশুর। কিন্তু ব্রিটেনে ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটল। কারণ সেখানে একটি শিশুই দ্বিতীয় বার জন্ম নিল পৃথিবীত। চিকিৎসা বিজ্ঞানের দুনিয়ায় বিরল ঘটনা হিসেবেই চিহ্নিত হল শিশুটির জন্ম। (Baby Born Twice)
ব্রিটেনের অক্সফোর্ডের শিক্ষিকা লুসি আইজ্যাক ও তাঁর স্বামী অ্যাডাম আইজ্যাকের কোল আলো করে পৃথিবীতে এসেছে ছোট্ট ব়্যাফার্টি আইজ্যাক। কিন্তু ছোট্ট ব়্যাফার্টি এই প্রথম বার পৃথিবীর আলো দেখল না। বরং দ্বিতীয় বারের জন্য় মায়ের পেট থেকে পৃথিবীতে আগমন ঘটল তার। (UK Rare Uterus Surgery)
ব্রিটেনের DailyMail জানিয়েছে, ৩২ বছর বয়সি তখন তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা। আলট্রাসাউন্ড করালে তাঁর ডিম্বাশয়ে ক্যান্সার ধরা পড়ে। জন ব়্যাডক্লিফ হাসপাতালের চিকিৎসকরা কোনও ঝুঁকি নিতে চাননি। যত শীঘ্র সম্ভব লুসির অস্ত্রোপচার করতে চেয়েছিলেন তাঁরা। সন্তানের জন্মের জন্য অপেক্ষা করালে ক্যান্সার ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা ছিল তাঁদের।
কিন্তু লুসি যেহেতু তিন মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তাই কিহোল সার্জারি সম্ভব ছিল না। আবার লুসিও পেটের সন্তানকে নিয়ে কোনও ঝুঁকি নিতে নারাজ ছিলেন। সেই অবস্থায় চিকিৎসক সোলেমানি মজদ জটিল অস্ত্রোপচারের প্রস্তাব দেন। তিনি জানান, শিশুটিকে জরায়ুতে রেখেই অস্ত্রোপচার চালাবেন তিনি। জরায়ুটিকে বের করে আনবেন লুসির শরীর থেকে। ক্যান্সারের কোষ ছেঁটে ফেলার পর ফের সেটি লুসির শরীরে প্রতিস্থাপন করা হবে।
হাতেগোনা কয়েক বারই পৃথিবীতে এই পদ্ধতিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। কিন্তু ছেলে এবং মা, উভয়ের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করেই লুসির পরিবার চিকিৎসকের প্রস্তাবে রাজি হয়ে যায়। সেই মতো অক্টোবর মাসে, সেই সময় ২০ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা লুসি অস্ত্রোপচার করাতে ভর্তি হন হাসপাতালে। সবমিলিয়ে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় ধরে চলে অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচার সফলও হয়। এর পর জানুয়ারি মাসের শেষ দিকে ছেলে ব়্যাফার্টির জন্ম দেন লুসি।
লুসি এবং অ্যাডাম আগেও অনেক ঝড়ঝাপটা সয়েছেন। ২০২২ সালে কিডনি প্রতিস্থাপন হয় অ্যাডামের। লুসি ক্যান্সারকে হারিয়ে ফিরেছেন। অ্যাডাম জানিয়েছেন, ছেলেকে কোলে নিতে পারাই তাঁদের জীবনের মিরাকল। জন্মের কয়েক সপ্তাহ পর ব়্যাফার্টিকে নিয়ে চিকিৎসক সোলেমানির সঙ্গে দেখা করেন লুসি এবং অ্যাডাম। চিকিৎসককে ধন্যবাদ জানান তাঁরা। ছোট্ট ব়্যাফার্টিকে দেখে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন ওই চিকিৎসক। জানান, তিনিও আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। আগেও একবার দেখেছিলেন ব়্যাফার্টিকে, তখন সে ছিল ভ্রূণ। এখন সুস্থ শিশু।
জটিল অস্ত্রোপচারে চিকিৎসক সোলেমানিকে সাহায্য় করেন ১৫ জন চিকিৎসক। লুসির জরায়ু বের করে আনা হলেও, রক্তনালি এবং টিস্যু থেকে সেটিকে আলাদা করা হয়নি, যাতে ব়্যাফার্টির জন্য কোনও ঝুঁকি না দেখা দেয়। সেই সময় লুসির জরায়ুটিকে উষ্ণ স্যালাইনের প্যাকেটে মুড়ে রাখা হয়, যাতে তাপমাত্রার হেরফের হওয়ায় ভ্রূণটি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। প্রতি ২০ মিনিট বদলানো হয় অন্তর স্যালাইনের প্যাকেটও। স্টেজ টু ক্যান্সার ধরা পড়েছিল লুসির। ডিম্বাশয় থেকে ক্যান্সারের কোষ ছেঁটে আবারও জরায়ুটিকে আগের জায়গায় প্রতিস্থাপন করেন চিকিৎসক সোলেমানি। সবমিলিয়ে ভ্রূণ অবস্থায় প্রায় দু’ঘণ্টা মায়ের পেটের বাইরে ছিল ব়্যাফার্টি। তাই চিকিৎসকদের মতে, দু’-দু’বার পৃথিবীতে জন্ম হল তার।
লুসি জানিয়েছেন, ক্যান্সারের কোনও উপসর্গই ছিল না তাঁর। তা সত্ত্বেও যে চিকিৎসকরা ক্য়ান্সার শনাক্ত করতে পারেন, তার জন্য কৃতজ্ঞ তিনি। পরিসংখ্যান বলছে, ব্রিটেনে প্রতিবছর ৭০০০-এর বেশি মহিলা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যার মধ্যে দুই তৃতীয়াংশেরই অনেক দেরিতে রোগ ধরা পড়ে। ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে ব্রিটেনে প্রতিবছর ৪০০০ মৃত্যু হয়।