নয়াদিল্লি: সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকানো যাচ্ছে না। চেনা যাচ্ছে না ভিড়ে মিশে যাওয়া বিদেশীদের। এমন পরিস্থিতিতে ভারতের নাগরিকত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নয়া মাপকাঠি বেঁধে দিল সরকার। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, আধার, প্যান ও রেশন কার্ড দেখালেই আর ভারতের নাগরিক গণ্য হবেন না কেউ। পরিবর্তে দু’টি অন্য নথির মধ্যে যে কোনও একটি থাকা বাধ্যতামূলক করা হল। (India Citizenship Proofs)

বাংলাদেশ, পাকিস্তান এবং মায়ানমারের মতো দেশ থেকে প্রচুর মানুষ রাজধানীতে ভিড় করেছেন বলে অভিযোগ। ঘুরপথে আধার, রেশন কার্ড বানিয়ে ভারতের নাগরিক হিসেবেই সেখানে তাঁরা বসবাস করছেন বলে অভিযোগ উঠে আসছে বরাবর। সেই আবহেই দিল্লি পুলিশের তরফে নাগরিকত্ব প্রমাণ করার ক্ষেত্রে নয়া মাপকাঠি বেঁধে দেওয়া হল। এখন থেকে দু’টি নথি নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরা হবে বলে জানিয়েছে তারা। (Narendra Modi Government)

দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, সন্দেহভাজন বিদেশি, যাঁরা বেআইনি ভাবে দিল্লিতে বাস করছেন, নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে তাঁদের ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট দেখাতে হবে। দিল্লি পুলিশের এক আধিকারিক সংবাদমাধ্যমে বলেন, “তথ্য যাচাই করতে গিয়ে দেখলাম বেআইনি অভিবাসীরা আধার, রেশন, প্যান কার্ড তৈরি করে ফেলেছেন। ভারতের নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র হিসেবে সেগুলি পেশ করেন তাঁরা। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের রাষ্ট্রপুঞ্জের তরফে যে UNHCR কার্ড দেওয়া হয়েছিল, তাও দেখান। তাই নাগরিকত্ব প্রমাণের ক্ষেত্রে ভোটার আইডি কার্ড এবং পাসপোর্ট বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।” দু'টির মধ্যে যে কোনও একটি থাকলেই হবে বলে জানানো হয়েছে।

পরিসংখ্যান প্রকাশ করে জানানো হয়েছে, এই মুহূর্তে দিল্লিতে ৩৫০০ পাকিস্তানি নাগরিক রয়েছেন, যাঁদের মধ্যে ৫২০ জন মুসলিম। তাঁদের মধ্যে থেকে আবার ৪০০ জনকে ইতিমধ্যেই আটারি সীমান্ত দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়েছে। পহেলগাঁও হামলার পর পাকিস্তানি নাগরিকদের দেশে পাঠাতে তৎপর হয়েছে সরকার। আর সেই আবহেই এই ঘোষণা।

কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের অধীনস্থ দিল্লি পুলিশ জানিয়েছে, আধার, প্যান এবং রেশন কার্ড প্রশাসনিক ও সামাজিক কল্যাণমূলক কাজে নথি হিসেবে গৃহীত হবে। কিন্তু ওই সব নথি নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। এই মুহূর্তে মূলত দু’টি নথিকে নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার, ১) জন্মের শংসাপত্র, ২) ডমিসাইল সার্টিফিকেট, স্থায়ী নিবাসের শংসাপত্র। ভারতে নাগরিকদের একাধিক পরিচয়পত্র রয়েছে, আধার কার্ড, প্যান কার্ড, রেশন কার্ড। আধার যদিও পরিচয়পত্র, কিন্তু তা নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। প্যানকার্ড কর সংক্রান্ত কাজে ব্যবহৃত হয়, রেশন কার্ড ব্যবহৃত হয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্পে। এর কোনওটিই নাগরিকত্বের প্রমাণপত্র নয়। 

তাই জন্মের শংসাপত্র এবং নিবাসের শংসাপত্রই নাগরিকত্বের প্রমাণ হিসেবে ধরে কেন্দ্র। ১৯৬৯ সালের জন্ম ও মৃত্যু আইনে এদেশে জন্মগ্রহণকারীদের শংসাপত্র প্রদানের মাধ্যমে নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা আছে। দেশের কোনও রাজ্য বা কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে স্থায়ী ভাবে বসবাসের নথি হল নিবাসের শংসাপত্র।