রোম: করোনাভাইরাসকে হারাতে হলে, ঠিক যেমনটা তিনি করেছেন, একজনকে সাহসী হতে হবে। একইসঙ্গে রাখতে হবে আস্থা। আর এই মন্ত্রেই করোনা হবে কুপোকাৎ। মনে করছেন ১০৩ বছর বয়সী ইতালীয় "ঠাম্মা" আদা জানুসো, যাঁকে এই কদিনে গোটা পৃথিবী চিনে গিয়েছে।


করোনায় যেখানে বলা হচ্ছে, বয়স্কদের বাঁচার সম্ভাবনা ক্ষীণ, ঠিক সেখানেই বেঁচে থাকার নতুন আশার আলো দেখালেন জানুসো, যিনি শতোর্ধ্ব হওয়া সত্ত্বেও করোনায় আক্রান্ত হয়ে দিব্যি সুস্থ হয়েছেন এবং বহাল তবিয়তে রয়েছেন। বললেন, ১০৪ বছর ধরে নিজের ওপর আস্থা কখনই হারাইনি। সেটাই করোনার বিরুদ্ধে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে ছিল তাঁর হাতিয়ার।


ইউরোপের যে দুই দেশ যেখানে বৃদ্ধের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি তা হল ইতালি ও ফ্রান্স। ১০০ বা তার কাছাকাছি বয়স্ক ব্যক্তিদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি এই দুই দেশে। বর্তমানে, মৃত্যু সংখ্যার নিরিখে ইতালি এক নম্বরে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, গড় বয়স বেশি হওয়াই এর প্রধান কারণ। ইতালিতে মৃতদের অধিকাংশই বয়স্ক। সেই দিক দিয়ে জানুসোর এই উহাহরণ এক নতুন আশা ও অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে।


উত্তর ইতালির পিয়েডমন্টের শহর লেসোনায় নিজের বাসভবন থেকে সংবাদমাধ্যমকে জানুসো বলেন, আমি ঠিক আছি। সুরক্ষার জন্য সর্বদা মাস্ক পরে থাকেন তিনি। ৩৫ বছর ধরে যে চিকিৎসক তাঁকে দেখছেন, তিনিও মাস্ক, চশমা ও পিপিই পরে থাকেন।


জানুসো জানান, তাঁর জ্বর ছিল। এক সপ্তাহ ধরে শয্যাশায়ী ছিলেন। চিকিৎসক বলেন, আমরা ওনাকে লিক্যুইড ডায়েট দিতাম। কারণ উনি কিছু খেতে পারতেন না। বহুক্ষেত্রেই মনে হত, হয়ত তিনি বাঁচবেন না, কারণ, অধিকাংশ সময়ই তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন থাকতেন। কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যেত না।


কিন্তু, এক সপ্তাহ পর, বিছানা ছেড়ে ওঠেন বৃদ্ধা। আগের মতোই কথা বলতে শুরু করেন। কিন্তু কী করে এই চমৎকার হল? জানুসো বললেন, সাহস-শক্তি-আস্থা। এটাই তাঁর জন্য কাজ করেছে। তাঁর পরামর্শ, সকলের উচিত নিজেকে সাহস জোগানো এবং আস্থা রাখা।


কোভিড-১৯ সংক্রমণে অল্প থেকে মাঝারি উপসর্গ দেখা দেয়। সাধারণত, এর ক্ষতি করার ক্ষমতাও সীমিত। কিন্তু, বয়স্কদের ক্ষেত্রে তা মারাত্মক কারণ, তাঁদের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতা কমে আসে। ইতালিতে ১৮ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন করোনায়। বিশ্বে এই সংখ্যাটি প্রায় ৯০ হাজার। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু) এর মতে, ইউরোপে মৃতদের ৯৫ শতাংশের গড় বয়স ৬০-এর ওপর।


ভেনেত্তো অঞ্চলের ত্রেভিসো শহরে বড় হয়েছেন জানুসো। বস্ত্রশিল্পে তিনি দীর্ঘদিন কাজ করেছেন। আগামী ১৬ অগাস্ট তিনি ১০৪ বছর পূর্ণ করবেন। তাঁর চার সন্তান- এর মধ্যে তিনজন জীবিত। চার নাতি-নাতনি এবং তিন প্রপৌত্র রয়েছে।


চিকিৎসক জানিয়েছেন, জানুসোর একেবারে সুস্থ। তাঁর মধ্যে অসুস্থতা বা রোগ নেই। যদিও, এখনও তাঁকে হোম কোয়ারান্টিনে থাকতে হবে। জানুসোর একটি ফলো-আপ পরীক্ষা করা হবে, তিনি পুরোপুরি সংক্রমণ-মুক্ত কি না তা দেখার জন্য।