নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাস মহামারী সারা দেশ তো বটেই, গোটা বিশ্বের অর্থনীতিতেই একেবারে ধস নামিয়ে দিয়েছে। মোটা মাইনের বড় কোম্পানির চাকুরে থেকে শুরু করে দিনমজুর, পরিযায়ী শ্রমিক- সকলেরই জীবনেই ধাক্কা লেগেছে। লোকসানের কারণে বন্ধ কারখানা। অর্ডারের অভাবে বন্ধ ফার্ম লক্ষ লক্ষ মানুষের চাকরি গিয়েছে, যাচ্ছে। তেমনই একজন উনাদাদি শারদা। হায়দ্রাবাদের এক বহুজাতিক কোম্পানিতে চাকরি করতে ২৬ বছরের এই তরুণী। চাকরি গিয়েছে। কিন্তু দমবার পাত্রী তিনি নন। ওয়ারাঙ্গল জেলার এই যুবতী শাক-সবজি বিক্রি করতে বসে গিয়েছেন বাজারে। একেবারে পেশাদার সবজি বিক্রেতারা যা করেন, তিনি সেটাই করছেন। ভোর চারটের সময়ে ঘুম থেকে উঠে পাইকারি বাজারে গিয়ে সবজি কিনছেন, ফিরে এসে ফুটপাথে বিক্রি করতে বসে যাচ্ছেন। ১২ ঘন্টা দোকান সাজিয়ে বিক্রি করে যাচ্ছেন। ঝুটো সম্মানবোধ নিয়ে আদৌ ভাবতে রাজি নন। যা অবস্থা, তাতে দুটো খেয়ে বেঁচে থাকলে তবে তো অন্য কিছু।
শারদার কথায়, এতে অসম্মানের কিছু আছে? আমি কোনও অনৈতিক বা অন্যায় কাজ করছি নাকি, পরিশ্রম করে কোনও কাজ করলে তাতে আবার কিসের অসম্মান! তাছাড়া বাড়িভাড়া দিতে হবে, সকলের জন্য খাবারের ব্যবস্থা তো করতে হবে। তাছাড়া আমার বাবা সবজিই বিক্রি করতেন। তাঁকে তো কেউ অসম্মান করেন না।


কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের স্নাতক শারদা। বেশ কয়েক বছর দিল্লিতে কাজ করেছেন প্রোজেক্ট অ্যানালিস্ট হিসেবে। সে কাজ ছেড়ে দেন বছর দুয়েক আগে। নিজের প্রোজেক্ট শুরু করার চেষ্টা করেন। পরে তিনি হায়দ্রাবাদের এমএনসি-তে যোগ দেন। কিন্তু মাস তিন কাজের পরই লকডাউনে কাজ গিয়েছে তাঁর। টিকে থাকার জন্য সবজি বিক্রি করে যাচ্ছেন। পরিস্থিতি ঠিকঠাক হলে আবার অন্য চাকরি খুঁজবেন শারদা। তবে তার আগেই একটা বড় চমক পেলেন তিনি। সোস্যাল মিডিয়া মারফত তাঁর সংগ্রামের কাহিনি জেনে সোনু সুদ, যিনি করোনাভাইরাস পরবর্তী পর্বে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে বহু মানুষের ত্রাতা হয়ে উঠেছেন, তাঁকে চাকরির অফার দিয়েছেন। রিচি সেলসন নামে জনৈক ট্যুইটার ব্যবহারকারী সোনুকে ট্যাগ করে শারদাকে সাহায্য করার আর্জি জানালে সোনুই তাঁকে জানান, তিনি ইতিমধ্যেই শারদার সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। তাঁর প্রতিনিধি তাঁর কাছে গিয়ে ইন্টারভিউ নিয়েছেন, চাকরির নিয়োগপত্রও ইতিমধ্যে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।