নয়াদিল্লি: ১৯৮৪-র শিখ দাঙ্গা মামলায় কংগ্রেস নেতা সজ্জন কুমার দিল্লি হাইকোর্টে দোষী সাব্যস্ত হয়ে যাবজ্জীবন কারাবাসের সাজা পাওয়ায় দেরিতে হলেও ন্যয়বিচার হল বলে অভিমত জানালেন অরুণ জেটলি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী তথা বিজেপি শীর্ষনেতা আজ সজ্জনের সাজা ঘোষণায় প্রথম প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কংগ্রেস ও গাঁধী পরিবার সেই দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্তদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেছে। ১৯৮৪-র দাঙ্গার পাপের প্রায়শ্চিত্ত করে যেতে হবে ওদের।
প্রসঙ্গত, ট্রায়াল কোর্টে দাঙ্গা মামলায় রেহাই পেয়েছিলেন সজ্জন। আজ সেই রায় পাল্টে তাঁকে সাজা দিল দিল্লি হাইকোর্ট। ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সজ্জন কুমারকে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
৩৪ বছর পুরানো সেই হিংসায় অন্যতম দোষীর সাজাপ্রাপ্তিতে জেটলি দাবি করেন, কংগ্রেস ৮৪-র দাঙ্গার শিকার লোকজনকে ন্যয়বিচার দেয়নি, কিন্তু এনডিএ ন্যয় ও দায়বদ্ধতা পুনরুদ্ধার করেছে।
কংগ্রেস নেতারা অবশ্য বলছেন, আদালতে সজ্জন কুমারের দোষী সাব্যস্ত, সাজা হওয়া নিয়ে রাজনীতি করা উচিত নয়, আইনকে নিজের পথে চলতে দেওয়া হোক। বিচারপতি এস মুরলিধর রেড্ডি ও বিচারপতি বিনোদ গোয়েলের বেঞ্চ সোমবার ফৌজদারি ষড়যন্ত্র, বিদ্বেষ ছড়ানো, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিরোধী কাজকর্মের জন্য দোষী ঘোষণা করে যাবজ্জীবন কারাবাস দেওয়ার পর কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভি বলেন, দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে একে যুক্ত করা চলবে না, এর থেকে যেন রাজনৈতিক ফায়দা তোলা না হয়। আইন তার মতো চলুক। অতীতে এমন অনেক রায় হয়েছে যেখানে কেউ কেউ দোষী সাব্যস্ত হয়েছে, অন্যরা রেহাই পেয়েছে।
সজ্জন কুমার কংগ্রেসে কোনও পদ, ক্ষমতায় নেই বলে সওয়াল করেন আরেক দলীয় নেতা কপিল সিবাল। তিনি সোহরাবুদ্দিন শেখ এনকাউন্টার মামলা ও তার শুনানি করা বিচারপতি বি এইচ লোয়ার রহস্যজনক মৃত্যুর প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আদালত সিদ্ধান্ত নিয়েছে আইনি প্রক্রিয়ার পথে। আমরা তো দেখেছি সোহরাবুদ্দিন শেখ মামলায় কী ভাবে আড়াল করার চেষ্টা চলছে। আর বিচারপতি লোয়ার মৃত্যুর ব্যাপারটা কী? আদালতের রায়ে রাজনৈতিক রং দেবেন না। ২০০২ এর গুজরাত দাঙ্গার প্রসঙ্গ তুলেও সিবাল সেই সংক্রান্ত মামলায় বেশ কয়েকজন বিজেপি নেতা অভিযুক্ত বলে দাবি করেন। নিজের ঘর থেকেই প্রথম দৃ্ষ্টান্ত তৈরি করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
পঞ্জাব প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সুনীল কুমার জাখর অবশ্য বলেন, দল বরাবরই স্পষ্ট বলে আসছে, যে-ই সেই দাঙ্গায় যুক্ত থাকুন, তাঁর সাজা হওয়া উচিত। সুতরাং অবশেষে বিলম্ব হলেও ন্যয়বিচার মিলল। কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। এমন জঘন্য অপরাধে যে-ই জড়িত থাকুক, তার সাজা হওয়া উচিত। তবে আরেক শীর্ষ কংগ্রেস নেতা কমল নাথের নাম কখনই সেই দাঙ্গায় জড়িত নেতাদের তালিকায় ওঠেনি বলে দাবি করেন জাখর।
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল ট্যুইট করে সজ্জন কুমারের সাজাপ্রাপ্তির খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেন। লেখেন, ক্ষমতাসীন লোকজনের হাতে নিহত নিরপরাধ লোকজনকে দীর্ঘদিন ধরে, বহু যন্ত্রণা সহ্য করতে হয়েছে। কোনও দাঙ্গাতেই জড়িত কাউকে পালাতে দেওয়া উচিত নয়, তা সে যতই প্রভাবশালী হোক না কেন।
শিরোমনি অকালি দল নেতা, দিল্লির বিধায়ক মজিন্দার সিংহ সিরশা আদালতের রায় আমাদের বিরাট তৃপ্তি দিয়েছে বলে মন্তব্য করে বলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় ছিল বলে ন্যয়বিচার পেতে দীর্ঘ ৩৪টা বছর লাগল। মামলাটি বন্ধ করে দেওয়ায় হয়েছিল, কংগ্রেস দীর্ঘদিন সেটি ধামাচাপা দিয়ে রেখেছিল। সেটি ফের চালু করে নানাবতী কমিশন।