কলকাতা: কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের চালু করা সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সমর্থন করছেন না পশ্চিমবঙ্গবাসীর একটা উল্লেখযোগ্য অংশ। কেন্দ্রের বিজেপি-এনডিএ সরকারের দাবি, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও আফগানিস্তান, এই তিন দেশ থেকে ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার হয়ে ভারতে পালিয়ে আসা অ-মুসলিম ৬টি সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর শরণার্থীদের এদেশের নাগরিকত্ব দিতেই ওই আইন। কিন্তু তাঁরা সিএএ-কে সমর্থন করেন কিনা, এবিপি আনন্দ-সিএনএক্স যৌথ জনমত সমীক্ষায় প্রশ্ন করা হলে এ রাজ্যের ৫৩ শতাংশ সিএএ-কে সমর্থন করেন না বলে জানিয়েছেন। যদিও ৪৩ শতাংশ বিতর্কিত আইনের পক্ষে মত দিয়েছেন। ‘জানি না বা বলতে পারব না’ বলেছেন ৪ শতাংশ। গত ৮-৯ জানুয়ারি ২১৩৪ জনকে নিয়ে সমীক্ষাটি করা হয়েছে ।
দেশের একাধিক রাজ্যে বিজেপি-বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি সমাজের নানা গোষ্ঠীর সিএএ-এনআরসি বিরোধী স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভ, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে পশ্চিমবঙ্গে কী প্রভাব পড়তে চলেছে কেন্দ্রের এই পরিকল্পনার, তার আঁচ পেতেই জনমত সমীক্ষাটি চালানো হয়।
সমীক্ষায় ৪৯ শতাংশ মতদাতা সিএএ-কে মোদি সরকারের মুসলিম বিরোধী পদক্ষেপ বলে জানিয়েছেন। তবে ৪৭ শতাংশ বলেছেন, এর লক্ষ্য মুসলিমরা নন। জানি না বা বলতে পারব না বলে জানিয়েছেন ৪ শতাংশ।
এমনকী সমীক্ষায় ৫০ শতাংশ মানুষই এই মত সমর্থন করেছেন যে, নাগরিকত্ব আইনে সংশোধন ঘটিয়ে মোদি সরকার ধর্মীয় বিভাজনের পথেই হেঁটেছে। তবে ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন, এর পিছনে ধর্মীয় বিভাজনের লক্ষ্য নেই। নির্দিষ্ট মতামত দিতে চাননি ২০ শতাংশ।
সিএএ-র পাশাপাশি অসমের পর এবার গোটা দেশেও জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) হবে কিনা, তা নিয়ে বিভ্রান্তি, সংশয়ের মধ্যেই সমীক্ষায় ৫৫ শতাংশের পরিষ্কার মত, এই প্রক্রিয়া চালু করা উচিত নয়। যদিও এনআরসির পক্ষে মত দিয়েছেন ৪১ শতাংশ। ৪ শতাংশ জানিয়েছেন, জানি না বা বলতে পারব না।
প্রসঙ্গত, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের এনআরসি সংক্রান্ত বক্তব্য বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের। অমিত শাহ সারা দেশে ২০২৪ সালের মধ্যেই প্রতিবেশী দেশগুলি থেকে আসা অনুপ্রবেশকারীদের চিহ্নিত করে তাড়ানোর জন্য এনআরসি প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ করা হবে বলে ঝাড়খন্ডের নির্বাচনী জনসভায় ঘোষণা করেছেন। তার আগেও তিনি বলেছেন, ধরে নিন, এনআরসি হচ্ছেই। নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে সবাইকে। এমনকী, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সহ দলের রাজ্য নেতারা একাধিকবার সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশের ফলে জনসংখ্যার ভারসাম্য বদলে যাচ্ছে বলে জানিয়ে এনআরসির পক্ষে সওয়াল করেছেন।
মুসলিমরাই এই প্রক্রিয়ার টার্গেট হবে বলে নানা মহলের দাবি, প্রতিবাদ, বিক্ষোভের মধ্যেই রামলীলা ময়দানের জনসভায় এনআরসি নিয়ে ২০১৪ সালে তিনি ক্ষমতায় আসার পর থেকে সরকার কোনও আলোচনাই করেনি বলে পাল্টা জানান স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী।
এই প্রেক্ষাপটে ধন্দ জিইয়ে রেখে মন্দা, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি থেকে দেশবাসীর নজর ঘোরাতেই কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এনআরসি, সিএএ চালু করতে চায় বলে অভিযোগ বিরোধীদের। সমীক্ষায় এই ধারণার সারবত্তা কতটা, জানতে চাওয়া হয়েছিল। তাতে ৬৩ শতাংশই বলেছেন, মানুষের নজর দেশের আসল সমস্যাগুলি থেকে ঘোরাতে চাইছেন মোদি। তবে ৩১ শতাংশের মত এর বিপরীত। আর ৬ শতাংশ মতদাতা বলেছেন, জানি না বা বলতে পারব না।