শ্রীরামপুর: গাড়ি নেই। অথচ অক্সিজেনের জন্য অসহায় মানুষের অবিরাম আর্তি। অগত্যা প্রাণ বাঁচাতে টোটোই ভরসা। ব্যাটারিচালিত এই যানে চেপেই বাড়ি বাড়ি প্রাণবায়ু পৌঁছে দিচ্ছেন হুগলির একদল কোভিড-যোদ্ধা। তাও সম্পূর্ণ নিখরচায়!
গত বছর করোনা সংক্রমণের প্রথম ঢেউয়ের সময় পশ্চিমবঙ্গে গড়ে উঠেছিল কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক। কোভিড সংক্রমণ নিয়ে আতঙ্ক দূর করে সতর্কতার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সবরকমভাবে বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোই ছিল প্রধান উদ্দেশ্য। প্রথমে কলকাতায় এবং পরে তা কলকাতার গণ্ডি ছাড়িয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ২০২০ সালের অগাস্ট মাস নাগাদ হুগলি জেলার উত্তরপাড়া থেকে ব্যান্ডেল পর্যন্ত বিজ্ঞানমনস্ক একদল ব্যক্তি ও কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে গড়ে ওঠে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের হুগলী শাখা। নেপথ্যে চিকিৎসক অভিজিৎ চৌধুরী ও পার্থসারথী মুখোপাধ্যায় এবং সত্যরূপ সিদ্ধান্ত। সাফল্যের সঙ্গে করোনা চিকিৎসায় সাড়া ফেলে দেওয়া শ্রীরামপুর শ্রমজীবী হাসপাতালও এই কর্মকান্ডের অন্যতম শরিক হয়।
সোমবার থেকে কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কারে হুগলি জেলা শাখা শুরু করল 'অক্সিজেন অন হুইলস্' পরিষেবা। হুগলি জেলার উত্তরপাড়া থেকে মগরা পর্যন্ত বাড়িতে বাড়িতে বিপন্ন মানুষের কাছে অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা চালু হল। অন্যতম করোনা-যোদ্ধা তথা শ্রমজীবী হাসপাতালের সহ সম্পাদক গৌতম সরকার বলছেন, 'কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্ক এবং লিভার ফাউন্ডেশনের সৌজন্যে হুগলি জেলার জন্য আমরা জন হপকিন্স ইন্সটিটিউট থেকে আসা ছ'টি অক্সিজেন কনসেনট্রেটর পেয়েছি। তারকেশ্বর, মগরা, চুঁচুড়া, চন্দননগর, শ্রীরামপুর ও উত্তরপাড়ায় একটি করে কনসেনট্রেটর রেখে পরিষেবা শুরু করা হয়েছে।' তিনি আরও বললেন, 'অনেকেই সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমাদেরই কিছু বন্ধুর উদ্যোগে গড়ে ওঠা 'বর্গী এলো দেশে'-র পক্ষ থেকে সম্প্রতি পনেরোটি অক্সিমিটার এবং দশটা মাস্ক ও ন্যাজাল ক্যানুলা পেয়েছি। ন্যাজাল ক্যানুলা অক্সিজেন পরিষেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রয়োজন। তবে আমাদের কোনও গাড়ি নেই। সোমবার প্রথম দিন টোটোয় করেই অক্সিজেন কনসেনট্রেটর শ্বাসকষ্টে থাকা মানুষের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। একটা গাড়ির ব্যবস্থা করতে পারলে আরও দ্রুত অনেক বেশি সংখ্যক করোনা আক্রান্তকে পরিষেবা দিতে পারব।'
উদ্যোগের সঙ্গে জড়িত চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, কোভিড আক্রান্ত কারও অক্সিজেন স্যাচুরেশন মাত্রা ৯০ শতাংশের নীচে নামতে থাকলে শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তাঁদের অবিলম্বে হাসপাতালে ভর্তি করা প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। কিন্তু হাসপাতালে বেড পাওয়ার ক্ষেত্রে দেরি হচ্ছে বলে অনেকের প্রাণ সংশয়ও হচ্ছে। সেই সমস্ত সংক্রমিতদের কথা ভেবেই এই পরিষেবা। পাশাপাশি চিকিৎসকেরা জানাচ্ছেন, অক্সিজেন কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে অক্সিজেন সহায়তা করোনা আক্রান্ত হয়ে শ্বাসকষ্টের মধ্যে থাকা মানুষের সাময়িক স্বস্তি। হাসপাতালে চিকিৎসার বিকল্প কোনওভাবেই নয়। কোভিড কেয়ার নেটওয়ার্কের যুগ্ম আহ্বায়ক মোহিত রণদীপ বলছেন, 'করোনা আক্রান্ত মানুষের যে প্রবাহে অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন তা কনসেনট্রেটরের মাধ্যমে সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে যত দ্রুত সম্ভব রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি। আমরা শ্বাসকষ্ট সাময়িক প্রশমনের চেষ্টাই করছি।'