নয়াদিল্লি: রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর পদে ইস্তফা দিলেন উর্জিত পটেল। কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে মনোমালিন্যর জেরেই এই ইস্তফা বলে মনে করা হচ্ছে। যদিও তাঁর পদত্যাগের কারণ ব্যক্তিগত বলে উল্লেখ করেছেন উর্জিত। বারবার রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো স্বশাসিত সংস্থার কাজকর্মে নজিরবিহীনভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠছিল নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে। বিশেষজ্ঞদের একাংশ ভেবেছিলেন, মুম্বইয়ে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির বৈঠকে হেস্তনেস্ত হবে একটা! তখন কিছু না হলেও শেষপর্যন্ত পদত্যাগের ঘোষণা করলেন তিনি। উর্জিতের এই পদত্যাগ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তাঁর উত্তরসূরী রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজন। তিনি বলেছেন, এই ঘটনায় প্রত্যেক ভারতীয়রই উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ, দেশের আর্থিক বৃদ্ধি ও উন্নয়নের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলির শক্তি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
রাজন বলেছেন, এই পদত্যাগের মাধ্যমে উর্জিত পটেল একটা বার্তা দিয়েছেন। আমি মনে করি, এটা একটা চূড়ান্ত বার্তা, যা কোনও নিয়ন্ত্রক বা আমলা দিতে পারেন।
রাজন বলেছেন, যে অচলাবস্থার কারণে তাঁকে এই চরম সিদ্ধান্ত নিতে হল তার বিস্তারিতটা জানা উচিত সবার।
তিনি বলেছেন, আমি মনে করি, এই বিষয়টা নিয়ে সমস্ত ভারতীয়র উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত। কারণ, বৃদ্ধি, দীর্ষস্থায়ী বৃদ্ধি ও আর্থিক নায্যতার ক্ষেত্রে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলির শক্তি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উল্লেখ্য, ২০১৬-র সেপ্টেম্বরে রাজনের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গভর্নর নিযুক্ত হয়েছিলেন উর্জিত।
রাজনের কার্যকালে তাঁর সঙ্গে সরকারের মতভেদ হয়েছে। তাঁর মেয়াদও বাড়ানো হয়নি।
উর্জিত পটেলের আমলে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের মতো স্বশাসিত সংস্থার কাজকর্মে নজিরবিহীনভাবে হস্তক্ষেপের অভিযোগ উঠেছে। আগে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডের ভূমিকা ছিল পরামর্শদাতার এবং কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের পেশাদাররাই সিদ্ধান্ত নিতেন। কিন্তু সম্প্রতি মোদি সরকার আরএসএস-ঘনিষ্ঠ, স্বদেশি জাগরণ মঞ্চের নেতা স্বামীনাথন গুরুমূর্তি ও কোঅপারেটিভ ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এস কে মারাঠেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্কের বোর্ডে মনোনীত করে। পরোক্ষে ওই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে রাজন বলেছেন, বোর্ডকে আরও বেশি কার্যকরী কর্তৃত্ব দেওয়া হলে তা ব্যাঙ্ক নিয়ন্ত্রণ ও তত্ত্বাবধানের কাজে পেশাদার ম্যানেজমেন্টের কাজে বাধা সৃষ্টি করবে। আর এমনটা হলে বোর্ডকেও পেশাদারদের দিয়ে গঠন করতে হবে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক আইনের অব্যবহৃত ধারা উল্লেখ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগের মতো ক্ষেত্রগুলির জন্য ঋণের নিয়ম শিথিল করা, কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের তহবিল যথাযথ বহাল রাখা এবং দুর্বল ব্যাঙ্কগুলির জন্য নিয়ম সহজ করার প্রস্তাব কেন্দ্র খতিয়ে দেখতে বলার পরই সংঘাতের সূত্রপাত হয়। ওই সময় থেকেই উর্জিত পটেলের ইস্তফার জল্পনা শুরু হয়েছিল।