নামখানা: অতীতে সব হারানোর অভিজ্ঞতা, সব হারানোর যন্ত্রণা ওঁদের আছে। দুই, তিন কিলোমিটার দূরে থাকা সমুদ্রও যে এক ছোবলে সব কেড়ে নিতে পারে, তা ওঁরা জানে। আয়লা, ফণী, বুলবুলের মতো একের পর ঝড় তাঁদের সয়ে গিয়েছে। তবে আমপানে ভয় হচ্ছে। ভয় হচ্ছে আবারও সব হারিয়ে ফেলার। বিশেষ করে যাঁদের কাঁচামাটির বাড়ি তাঁদের ভয় আরও বেশি। হাতে আর ২৪ ঘণ্টাও নেই। আকাশ কালো করে হু হু শব্দে আছড়ে পড়ার সংকেত দিচ্ছে সুপার সাইক্লোন আমপান। তার আগে শেষ সম্বলটুকু বাঁচিয়ে রাখতে কেউ দিচ্ছেন বাঁধ, কেউ বা জাল দিয়ে বেঁধে রাখছেন ঘরের চাল।


নামখানার উপকূল অঞ্চলের এক বাসিন্দাকে দেখা গেল ঘরের চাল জাল দিয়ে বেঁধে রাখতে। ওই মহিলা এবিপি আনন্দকে বললেন, “আগেও ঝড়ে সব ভেঙে পড়েছিল। কিছুই ছিল না। তাই যেটুকু আছে সেটুকুই বেঁধে রাখছি। যদি বাঁচে!”


মন্দারমণিতে বাঁধ দিয়ে চলছে প্রবল ঘূর্ণিঝড় ঠেকানোর মরিয়া চেষ্টা। এক গ্রামবাসীর কথায়, “আগে বাঁধ ভেঙেছে বুলবুলি, ফণী। আয়লাও ছিল ভয়ঙ্কর। তবে আয়লার থেকেও ভয়ঙ্কর হতে পারে এই ঝড়। তাই বালি বোঝাই বস্তা দিয়ে বাঁধ দিচ্ছি। এতে যতটুকু বাঁচানো যায় বাঁচবে।” সেখানে দেখা গেল, ঘরের চাল বেঁধে দেওয়া হয়েছে বাঁশের সঙ্গে।


শুধু গ্রাম বাংলাই নয়, বিপদ সংকেত রয়েছে শহর কলকাতাতেও। তাই আগাম সতর্কতা পেয়েই নিরাপদে যাচ্ছেন শহরবাসীরা। বিপজ্জনক বাড়ি থেকে বাসিন্দাদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। উল্টোডাঙায় নিজে দাঁড়িয়ে থেকে পুরনো বাড়ির বাসিন্দাদের নিরাপদে নিয়ে যেতে দেখা গেল তৃণমূল কাউন্সিলর অনিন্দ্য রাউতকে।


আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস বুধবার বিকেল থেকে সন্ধের মধ্যে দিঘা ও হাতিয়ার মধ্যে আছড়ে পড়তে পারে সুপার সাইক্লোন। ওই সময় ঝড়ের গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৮৫ কিলোমিটার। দুই ২৪ পরগনা, মেদিনীপুরের পাশাপাশি প্রভাব পড়বে কলকাতাতেও। দক্ষিণবঙ্গের সব জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা। কাল সকাল থেকে কলকাতায় ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ১৩০ কিমি গতিবেগে বইবে ঝোড়ো হাওয়া। কাল কলকাতায় বাজার বন্ধের অ্যাডভাইসারি জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। মানুষ যাতে বাইরে না বেরোন, তারও পরামর্শ দিয়েছেন আবহবিদরা।