কলকাতা: উমপুনের সঙ্গে এক ভয়াল দিনের সাক্ষী থাকল বাংলা। হাওয়ার ঝাপটায় থরহরি কম্পমান হল কলকাতা। সমুদ্র উত্তাল। চারিদিকে নেমে এল আঁধার। উথালপাথাল হল সমুদ্র। কেড়ে নিল প্রাণ। গাছ-পালা, বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে দিয়ে কয়েকঘণ্টা ধরে ধ্বংসলীলা চালাল উমপুন। স্মরণাতীত কালে এমন ঝড় দেখেনি শহর কলকাতায আয়লা, বুলবুল, ফণীর মতো অনেক ঘূর্ণিঝড়ের ঝাপটা খেয়েছে কলকাতা। তবে উমপুনের তুলনায় তা কিছুই নয়। বরং মনে করাল ১৭৩৭ সালের সাইক্লোনের কথা। যা বইয়ের পাতায় পড়েছিলেন সবাই।

১৭৩৭-এর ১১ অক্টোবর বঙ্গোপসাগরের ওপর দিয়ে ধেয়ে এসে আছড়ে পড়েছিল সেই ভয়াবহ সাইক্লোন। তার তাণ্ডবলীলায় তছনছ হয়ে গেছিল চারদিক। সাইক্লোনের ঝাপটায় সেদিন গঙ্গায় প্রায় ৪০ ফুট উঁচু ঢেউ উঠেছিল বলে জানা যায়। প্রায় ৬ ঘণ্টা ধরে চলেছিল মুষলধারে বৃষ্টি। ঝড়ের অভিঘাতে ধ্বংস হয়ে গেছিল প্রায় ২০ হাজার জাহাজ। মৃত্যু হয়েছিল ৩ হাজার মানুষের।

এরপর মনে আসে কলকাতায় ১৮৬৪ সালের ৫ অক্টোবরের সাইক্লোনের কথা। সেদিনের ঝড়ের তাণ্ডবলীলায় প্রায় ৬০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। ধূলিসাৎ হয়ে যায় দু’টি গির্জার চূড়া।

খিদিরপুর ডক থেকে নোঙর ছিঁড়ে গঙ্গায় ভেসে যায় বহু জাহাজ। ২০টি জাহাজ গঙ্গায় ডুবে যায় এবং ১৪৫টি জাহাজ বিভিন্ন ঘাটে গিয়ে ধাক্কা মারে। একটি জাহাজ বরানগরে লোচন ঘোষের ঘাটে উঠে পড়ে। দ্বিতীয় জাহাজটি বরানগর জুট মিলের ঘাটে ধাক্কা মারে। তৃতীয়টি বরানগরের কুটিঘাটের কাছে জয়মিত্র কালীবাড়িতে ধাক্কা মেরে একাংশ ভেঙে দেয়।

এসব কথা মাথায় রেখেই এবার সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। শালিমারে দুরন্ত এক্সপ্রেসের চাকা চেন দিয়ে ট্র্যাকের সঙ্গে বেঁধে রাখা হয়েছে। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে লঞ্চ। তবে এসবের মধ্যেও উমপুনের তাণ্ডবলীলা দেখে অনেকেরই মনে পড়ে যাচ্ছে ১৭৩৭ কিংবা ১৮৬৪-র সেই ছবি।