নয়াদিল্লি: অনিল অম্বানির রিলায়েন্স টেলিকমিউনিকেশনসের অধীনস্থ ফ্রান্সে রেজিস্ট্রিকৃত টেলিকম কোম্পানির কাছ থেকে  ১৪৩.৭ মিলিয়ন ইউরো কর মকুব করেছে ফ্রান্স এবং তা করা হয়েছে ভারতের ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের ঘোষণার কয়েক মাস পর। এমনই দাবি করে প্রথম সারির ফরাসি সংবাদপত্র লে মঁদ-এ একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এক্ষেত্রে কোনও অনিয়মের অভিযোগ পত্রপাঠ নাকচ করে দিয়েছে রিলায়েন্স কমিউনিকেশন। সংশ্লিষ্ট আইনি পদ্ধতি মেনেই কর সংক্রান্ত বিবাদের নিষ্পত্তি হয়েছে বলে তাদের দাবি। আর এই পদ্ধতি ফ্রান্সে সক্রিয় সমস্ত কোম্পানির ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
ফরাসি সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কর বাবদ দাবি ছিল ১৫১ মিলিয়ন ইউরো। সেখানে ফরাসি রাজস্ব কর্তৃপক্ষ রিলায়েন্স ফ্ল্যাগ আটলান্টিক ফ্রান্সের কাছ থেকে বিবাদের নিষ্পত্তি হিসেবে ৭.৩ মিলিয়ন ইউরো গ্রহণ করেছে।
২০১৫-র ১০ এপ্রিল প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ফ্রাসোয়াঁ ওলাঁদের সঙ্গে আলোচনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৩৬ টি রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয়ের ঘোষণা করেছিলেন। চূড়ান্ত চুক্তি হয় ২০১৬-র ২৩ সেপ্টেম্বর।
কংগ্রেস এই চুক্তিতে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ করে। কংগ্রেস দাবি করে, ইউপিএ জমানায় চুক্তি নিয়ে আলোচনার সময় প্রতিটি বিমানের দাম ৫২৬ কোটি টাকা করে স্থির হয়েছিল। সেখানে মোদি সরকার প্রত্যেকটি বিমান ১,৬৭০ কোটি টাকা দামে কিনছে। দাসোঁ অ্যাভিয়েশনের অফসেট পার্টনার হিসেবে অনিল অম্বানির রিলায়েন্স ডিফেন্সকে বেছে নেওয়ার বিষয়েও কংগ্রেস সরকারকে নিশানা করেছে। যদিও সরকার কংগ্রেসের ওই অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছে।
ফরাসি সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, অনিল অম্বানির কোম্পানি সম্পর্কে তদন্ত করে ফরাসি রাজস্ব কর্তৃপক্ষ জানায় যে, কোম্পানির কাছ থেকে ২০০৭ থেকে ২০১০-এ ৬০ মিলিয়ন ইউরো প্রাপ্য। রিলায়েন্স এক্ষেত্রে ৭.৬ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে নিষ্পত্তির প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাব খারিজ করে দেয় ফরাসি রাজস্ব কর্তৃপক্ষ। কর্তৃপক্ষ ২০১০ থেকে ২০১২ পর্যন্ত পর্বের জন্য আরও একটি তদন্ত চালায় এবং কোম্বানিকে কর হিসেবে আরও ৯১ মিলিয়ন দিতে বলে।


প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, ২০১৫-র এপ্রিলের মধ্যে কর বাবদ রিলায়েন্সের কাছ থেকে ফরাসি কর্তৃপক্ষের প্রাপ্য হয় কমপক্ষে ১৫১ মিলিয়ন ইউরো। প্যারিসে মোদির রাফাল চুক্তি ঘোষণার ছয়মাস পর অক্টোবরে ফরাসি কর্তৃপক্ষ ১৫১ মিলিয়ন ডলারের পরিবর্তে বিবাদ নিষ্পত্তি ৭.৩ মিলিয়ন ইউরো গ্রহণ করে।
রিলায়েন্স কমিউনিকেশনস-এর এক মুখপাত্র বলেছেন, ফরাসি কর্তৃপক্ষ যে পরিমাণ কর দাবি করেছিল তা অযৌক্তিক ও অন্যায্য। এজন্যই কোম্পানি এক্ষেত্রে কোনও ধরনের সুবিধা পাওয়ার কথা অস্বীকার করেছে।
ওই মুখপাত্র বলেছেন, ফরাসি রাজস্ব কর্তৃপক্ষ ২০০৮ থেকে ২০১২, প্রায় দশ বছর আগের যে সময় পর্বের বিষয়টি বিবেচনা করেছে, সেই সময় ফ্ল্যাগ ফ্রান্সের অপারেটিং লোকসান ছিল ২০ কোটি টাকা (২.৭ মিলিয়ন ইউরো)। ফরাসি কর্তৃপক্ষ ওই পর্বের জন্য ১১০০ কোটি টাকা করের দাবি জানিয়েছিল। তিনি আরও বলেছেন, আইন অনুসারে ফরাসি কর নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া অনুযায়ী চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হিসেবে ৫৬ কোটি টাকা প্রদানের ব্যাপারে একটি পারস্পরিক সমঝোতা স্বাক্ষরিত হয়।