নয়াদিল্লি আজ থেকে সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু। সকাল ১১টায় অধিবেশন শুরু হয় সংসদের সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের ভাষণ দিয়ে। ভাষণে নিজের সরকারের সাফল্য ব্যাখ্যার পাশাপাশি কোবিন্দের ভাষণ ছুঁয়ে যায় সাম্প্রতিক কালের জ্বলন্ত ইস্যু সিএএ-এনআরসি ও তারপর দেশজোড়া বিক্ষোভ প্রসঙ্গ। সেন্ট্রাল হলে রাষ্ট্রপতির ভাষণ চলাকালীন এ নিয়ে হই-হট্টগোলও করেন বিরোধীরা।


রামনাথ কোবিন্দ তাঁর ভাষণে বলেন, সংসদের উভয় কক্ষে দুই তৃতীয়াংশ সংখ্যারগিষ্ঠতায় সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ এ ধারার বিলোপ শুধু ঐতিহাসিকই নয়, তা জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখের সমতার ভিত্তিতে উন্নয়নের পথ প্রশ্বস্ত করেছে।

তিনি বলেন, ‘৭ দশক পর জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে শ্যামাপ্রসাদের স্বপ্নপূরণ হয়েছে।জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ দেশের বাকি মানুষদের মতোই সমান সুবিধা পাচ্ছে।দেশের উন্নয়নযজ্ঞে জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখ এখন জুড়ে গেছে।জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের উন্নয়ন আমার সরকারের প্রধান লক্ষ্য।এখন জম্মু-কাশ্মীর ও লাদাখের মানুষ সরকারের সব প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন।’
রাষ্ট্রপতি বলেছেন, পারস্পরিক আলোচনা ও বিতর্ক গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী করে বলেই সরকারের অভিমত। একইসঙ্গে প্রতিবাদের নামে কোনও ধরনের হিংসা সমাজ ও দেশকে দুর্বল করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশের মানুষের আশা ও আকাঙ্খা পূর্ণ করতে এবং জাতীয় স্বার্থের বিষয়কে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ণের এই সংসদ ও প্রত্যেক সদস্যের কাছ থেকে আমাদের সংবিধান প্রত্যাশা করে।
রাষ্ট্রপতি বলেন, সংসদের উভয়কক্ষে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন প্রণয়ণের মাধ্যমে জাতির পিতা মহাত্মা গাঁধীর ইচ্ছে পূরণ হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি বলেন, মহাত্মা গাঁধী বলেছিলেন, যে সমস্ত সংখ্যালঘু পাকিস্তানে থাকতে চাইবেন না, তাঁদের ভারতে স্থান পাওয়া উচিত। এই সরকার গাঁধীজীর সেই স্বপ্নকে বাস্তব রূপ দিয়েছে।

সিএএ নিয়ে রাষ্ট্রপতির বক্তব্যের সময় সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য হৈহট্টগোল শুরু হয়।

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘এই দশক দেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আমার সরকার এই দশককে ভারতের দশক হিসেবে গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর।আমরা ভারতবাসীরা দেশের সব স্বপ্ন পূরণ করব।

আমাদের সংবিধান নাগরিকের কর্তব্য বোধ নির্দিষ্ট করে দিয়েছে।

তিনি বলেন, ‘গত ৭ মাসে এই  সংসদ কাজের নতুন মানদন্ড তৈরি করেছে।আমার সরকার মুসলিম মহিলাদের জন্য তিন তালাক বিরোধী আইন পাশ করেছে।এছাড়াও একাধিক ঐতিহাসিক আইন তৈরি করেছে আমার সরকার।’

তিনি বলেন,  ‘সরকারের একাধিক পদক্ষেপের কারণেই আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভারত উপরে উঠে এসেছে।

রাষ্ট্রপতি উজ্জলা যোজনার উল্লেখ করে বলেন, ‘৮ কোটি গরিব মানুষকে বিনামূল্যে রান্নার গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হয়েছে।’

তিনি বলেন ‘আমার সরকার রেকর্ড সময়ের মধ্যে কর্তারপুর করিডর তৈরি করেছে।উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়নে সরকার বিশেষ ভাবে নজর দিয়েছে।রেল-সড়ক-বিমান যোগাযোগ ব্যবস্থা আরও উন্নত হতে চলেছে। উত্তর-পূর্বে শান্তি স্থাপনের জন্য সম্প্রতি বোড়ো সংগঠনের সঙ্গে ঐতিহাসিক চুক্তি হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘আদিবাসীদের উন্নয়নের স্বার্থে সরকার একাধিক পদক্ষেপ করেছে।’

রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘গ্রামীণ অর্থনীতি মজবুত করার জন্য আগামী দিনে ২৫ লক্ষ কোটি টাকা খরচ করা হবে।কৃষককে ফসলের ন্যূনতম সহায়কমূল্য দেড়গুণ করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার ৫ ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি তৈরিতে বদ্ধপরিকর।আগের তুলনায় ব্যাঙ্কগুলির ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বেড়েছে।চলতি অর্থবর্ষে অধিকাংশ সরকারি ব্যাঙ্কের মুনাফা হয়েছে’।

তিনি বলেন, ‘দেশকে সন্ত্রাসমুক্ত করতে সরকার সবরকম চেষ্টা করছে।জঙ্গি দমনে নিরাপত্তা বাহিনীকে স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে।

‘আমাদের মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিগত চিন্তাধারার আগে দেশ।’