গুয়াহাটি: অসমে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হল। বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষের বেশিও মানুষের নাম। নাগরিকপঞ্জীতে অন্তর্ভূক্তির জন্য আবেদন করেছিলেন মোট ৩ কোটি ৩০ লক্ষ,২৭ হাজার ৬৬১ জন। এরমধ্যে তালিকায় অন্তর্ভূক্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১১ লক্ষ, ২১ হাজার ৪ জন। বাদ পড়েছে ১৯ লক্ষ ৬ হাজার ৬৫৭ জনের নাম। বাদ পড়া এই লোকজন অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সম্মুখীন। এবার এই মানুষগুলোর পরিণতি কী হবে? এদের সকলেই কি সত্যিই এ দেশের নাগরিক নন? যাঁরা বাদ পড়েছেন তাঁদের ১২০ দিনের মধ্যে ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের দ্বারস্থ হতে পারেন। ট্রাইব্যুনালের রায়ে সন্তুষ্ট হতে না পারলে তাঁদের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টেও যাওয়ার রাস্তাও খোলা থাকছে। তালিকা থেকে যাঁরা বাদ পড়েছেন, তাঁরা যাতে আতঙ্কিত হয়ে না পড়েন সেজন্য অসম সরকার ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে যে, ফরেনার্স ট্রাইব্যুনাল বিদেশী ঘোষণা না করা পর্যন্ত তাদের আটক করা হবে না।


এদিন সকাল ১০ টায় চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশিত হয়। এনআরসি সেবা কেন্দ্র (এনএসকে), ডেপুটি কমিশনারের অফিস ও সার্কেল অফিসারদের অফিসে তালিকার প্রতিলিপি জনগনের দেখার জন্য রাখার কথা জানিয়েছিল এনআরসি কর্তৃপক্ষ। তালিকা প্রকাশের পর প্রচুর মানুষ ওই দফতরগুলিতে ভিড় জমান। তাঁদের মধ্যে তালিকায় নিজের নাম দেখে কেউ খুশি মনে ফিরেছেন, আবার কাউকে চূড়ান্ত হতাশ হতে হয়েছে। তবে নাগরিকপঞ্জীর তালিকা নিয়ে অসমে এদিন কোনও ধরনের অশান্তির খবর পাওয়া যায়নি। রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে জারি হয়েছিল ১৪৪ ধারা। মোতায়েন করা হয়েছিল আধা সামরিক বাহিনীর ২০ হাজার জওয়ানকে। সেইসঙ্গে ছিল রাজ্য পুলিশের টহলদারি। তালিকা প্রকাশের পরই রাজ্যের প্রায় সমস্ত রাজনৈতিক দলই নাগরিকপঞ্জীকে ক্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেছে। কেউ কেউ আবার এর বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যাওয়ার কথাও বলেছে।

বিজেপি শুরু থেকেই জাতীয় নাগরিক পঞ্জী বা এনআরসি চালুর ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি সরব হলেও, অসমে ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার পর এখন তাদের গলাতেই ক্ষোভের সুর! অসমের প্রভাবশালী মন্ত্রী তথা উত্তর পূর্বে অমিত শাহের প্রধান সেনাপতি হিমন্ত বিশ্বশর্মা ট্যুইট করে বলেছেন, ‘১৯৭১ সালের আগে যাঁরা বাংলাদেশ থেকে উদ্বাস্তু হিসাবে অসমে এসেছিলেন, তাঁদের অনেকেরই নাম চূড়ান্ত তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। কারণ, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ শরণার্থী সংশাপত্রকে মান্যতা দিতে চায়নি। আবার ‘লিগাসি ডেটা’ কারচুপি করে অনেকেই নিজেদের নাম তালিকায় ঢোকাতে পেরেছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।’

যে অসম গণ পরিষদ জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর অন্যতম বড় সমর্থক এবং লোকসভা ভোটে বিজেপির সঙ্গে জোট করে লড়াই করেছে, তারাও চূড়ান্ত তালিকা দেখে অসন্তুষ্ট। অসমে জাতীয় নাগরিক পঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকায় ১৯ লক্ষ মানুষের নাম বাদ পড়ার পর জরুরি বৈঠকে বসেন সনিয়া-রাহুলরা। অসমের জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর চূড়ান্ত তালিকা থেকে ১৯ লক্ষ লোকের নাম বাদ পড়া নিয়ে নিয়ে বঙ্গেও এখন জোর রাজনৈতিক তরজা। ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালে আবেদনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তুলছে সিপিএম।