নয়াদিল্লি: হিন্দি বলয়ে দলের চমত্কার পারফরম্যান্সের পরদিন সনিয়া গাঁধী বললেন, এটা বিজেপির ‘নেতিবাচক রাজনীতি’র বিরুদ্ধে কংগ্রেসের জয়। গতকালের ফলে বিজেপিকে হটিয়ে তিন রাজ্য মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগঢ়, রাজস্থানে সরকার গড়তে চলেছে কংগ্রেস। আজ প্রথম প্রতিক্রিয়ায় প্রাক্তন কংগ্রেস সভানেত্রী সন্তোষ প্রকাশ করে এই প্রতিক্রিয়া দেন। গত বছর ডিসেম্বরে কংগ্রেসের নেতৃত্বের ব্যাটন ছেলে রাহুল গাঁধীর হাতে তুলে দেন সনিয়া। তবে ৫ রাজ্যের মধ্যে তিনটিতে দারুণ ফল করার আগে পর্যন্ত রাহুলের নেতৃত্বে ২০১৮-য় দাগকাটা সাফল্য পায়নি কংগ্রেস।
গতকাল হিন্দি বলয়ের তিনটি রাজ্যে কংগ্রেসের পুনরুজ্জীবনের পর কংগ্রেস সভাপতি সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, গতকাল মায়ের সঙ্গে আলোচনার সময় তাঁকে বলেছি, আমার কাছে সবচেয়ে সেরা ব্যাপার ছিল ২০১৪-র নির্বাচন। সেবার অনেক কিছু শিখেছি। ২০১৪-র নির্বাচন থেকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যেটা তিনি শিখেছেন, সেটা বিনয় বলে জানান রাহুল। বলেন, আমাদের দেশ মহান, এখানে সবচেয়ে মূল্যবান হল এখানকার মানুষ কী ভাবেন। বিজেপির উল্লেখ করে রাহুল বলেন, আমরা এবার ওদের হারিয়েছি, ২০১৯-এও হারাব।
এর মধ্যেই আজ হায়দারাবাদে কংগ্রেসের প্রথম সারির নেতা এম বীরাপ্পা মইলি বললেন, রাহুল গাঁধী নেতৃত্বের সব পরীক্ষায় উতরে গিয়েছেন, পরবর্তী লোকসভা নির্বাচনের পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উঠে আসবেন। মধ্যপ্রদেশে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে কংগ্রেস সরকার গড়ার প্রয়োজনীয় সংখ্যা পাওয়ার পর বহুজন সমাজ পার্টি (বসপা)সভানেত্রী মায়াবতী সরকার গঠনে তাদের সমর্থনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। তিনি বিজেপিকে ক্ষমতা দখল থেকে দূরে রাখতেই এই পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে জানান, এও বলেন, দরকার হলে রাজস্থানেও সরকার গঠনে কংগ্রেসকে তাঁর দল সমর্থনের হাত বাড়িয়ে দেবে।
মইলি বলেন, মানুষ বহুদিন ধরে নরেন্দ্র মোদি ও তাঁর এনডিএ সরকারের অপশাসন, ব্যর্থ শাসন সহ্য করেছে। এই নির্বাচনী ফল দেখাল, তারা তাঁর ওপর প্রবল অসন্তুষ্ট। যেভাবে বিজেপি সনিয়াজি, রাহুলজিকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছে, তা জনগণ মেনে নেয়নি। এই সাফল্য শুধু কংগ্রেস দলের নয়, তার নেতৃত্বেরও। গতকাল ফল বেরনো ৫ রাজ্যের নির্বাচন রাহুল গাঁধীর নেতৃত্বের বড় পরীক্ষা ছিল বলে উল্লেখ করে কর্নাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলেন, এর অর্থ, ২০১৯ এর মে-র পর থেকে দেশের নেতা ও প্রধানমন্ত্রী হিসাবে উঠে আসবেন তিনি। রাহুল যে সহনশীলতা, ধৈর্য্য, খাটাখাটনি করেছেন, তার প্রশংসা করে মইলি বলেছেন, ভোটে এতে দারুণ ফল মিলেছে। নেতা হয়ে ওঠার যাবতীয় পরীক্ষায় তিনি উতরে গিয়েছেন। মানুষ অবশ্যই তাঁকে মোদির চেয়ে অনেক ভাল নেতা বলে দেখছেন।
মোদি-বিরোধী সব শক্তিকে একজোট করায়ও রাহুল সফল বলে দাবি করে মইলি বলেন, মোদি ও এনডিএ-র বিরুদ্ধে সব বিরোধী দলের জোটের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে এই নির্বাচনে।

মুম্বইয়ে কংগ্রেস নেতা জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া তিন রাজ্যে দলের জয়ের কৃতিত্ব দিয়েছেন রাহুল গাঁধীকে। এক অনুষ্ঠানে তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দেওয়ার অভিযোগ এনে বলেন, ভারতের জনগণ চিন্তিত নিজেদের জীবন, দিনযাপন, উন্নয়নের ব্যাপারে। শান্তি, সুস্থিতি, নিরাপত্তা, সহনশীলতার পরিবেশ নিয়ে তাঁরা উদ্বিগ্ন। বিজেপি এইসব ফ্যাক্টরের উল্টো পথে রয়েছে, যা ভোটাররা প্রত্যাখ্যান করেছেন বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জ্যোতিরাদিত্য বলেন, এটা স্পষ্ট রাহুল গাঁধীর নির্বাচন। কংগ্রেসকে ভারতের মূল রাস্তায় ফিরিয়ে এনেছেন তিনি।