নয়াদিল্লি: নয়া সন্ত্রাসবাদ বিরোধী আইনে সন্ত্রাসবাদী ব্যক্তি ঘোষিত হল জয়েশ-ই-মহম্মদ প্রতিষ্ঠাতা মাসুদ আজহার ও লস্কর-ই-তৈবা স্থপতি হাফিজ মহম্মদ সঈদ। সংসদে ১৯৬৭ সালের বেআইনি কার্যকলাপ রোধ আইনে গুরুত্বপূর্ণ সংশোধনী গৃহীত হওয়ার মাসখানেক বাদে এই বড় মাপের সিদ্ধান্ত নেওয়া হল। পুলওয়ামা সন্ত্রাসের মস্তিষ্ক জয়েশ প্রধান, ২০০৮ এর মুম্বই জঙ্গি হামলার মাথা হাফিজের পাশাপাশি তার সংগঠনের আরেক শীর্ষ নেতা জাকিউর রহমান লকভি, ১৯৯৩ এর মুম্বই সিরিয়াল বিস্ফোরণের অন্যতম প্রধান চক্রী দাউজ ইব্রাহিমকেও সন্ত্রাসবাদী তকমা দেওয়ার ঘোষণা করেছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক।
এনআইএ-র মোস্ট ওয়ান্টেড তালিকায় থাকা সঈদের লস্কর বাহিনীর ১০ জন ২০০৮ এর ২৬ নভেম্বর মুম্বই মহানগরীতে নির্বিচারে হামলা চালায়, মহানগরীর বুকে চারদিন ধরে গোলাগুলি চালায়, বিস্ফোরণ ঘটায়। ৯ হামলাকারী সহ ১৭৪ জন নিহত হয়, ৩০০-র বেশি জখম হয়। ভারত ইতিমধ্যে সঈদের লস্কর, নাম বদলে জামাত-উদ-দাওয়াকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ব্রিটেন, রাশিয়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নও একই পদক্ষেপ করেছে।
দাউদ বহু বছর ধরে পাকিস্তানের বাসিন্দা। ১৯৯৩ এর মুম্বই সিরিয়াল বিস্ফোরণে ৩০০-র বেশি লোক নিহত হয়। আহত হয় ৩০০-র বেশি। ২০১০ থেকে সে বিশ্বের দশ মোস্ট ওয়ান্টেড সন্ত্রাসবাদীর তালিকায় সে আছে। তাকে ‘বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী’ও ঘোষণা করা হয়েছে।


গত জুলাইয়ে সংসদে কেন্দ্রীয় সরকার যে বিল পাশ করিয়ে নতুন আইন কার্যকর করেছে, তাতে খাতায় কলমে কোনও জঙ্গি সংগঠনের সদস্য না হলেও সন্ত্রাসবাদী যোগ আছে সন্দেহ হলেই যে কোনও লোককে সন্ত্রাসবাদী ব্যক্তি বলে ঘোষণা করা যাবে। ন্যাশনাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সিকে (এনআইএ) রাজ্য পুলিশের সম্মতি ছাড়াই সন্ত্রাস মামলার তদন্তের সঙ্গে জড়িত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে নতুন আইনে। আগের আইনে সন্ত্রাস ছড়ানোর দায়ে কেবলমাত্র সংগঠনকেই জঙ্গি বলা যেত, ব্যক্তিদের নয়। সংশোধিত আইনে কেন্দ্র, রাজ্যগুলিকে ব্যক্তিকেও সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করে তার সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
১৯৬৭-র বেআইনি কার্যকলাপ রোধ সংশোধনী (ইউএপিএ)বিলে সংশোধনের উদ্দেশ্য ছিল কোনও ব্যক্তিকে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা। লোকসভার পর গত ২ আগস্ট সেটি রাজ্যসভায়ও পাশ হয়ে আইনে পরিণত হয়। লোকসভায় বিলের ওপর বিতর্কে যোগদান করে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ সন্ত্রাসবাদের মূলোচ্ছেদ করতে ব্যক্তিকেও জঙ্গি ঘোষণার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। ইউএপিএ বিলে সন্ত্রাসবাদী কাজে সামিল হতে, তাতে সামিল হওয়ার প্রস্তুতি নিতে বা সাহায্য করতে দেখা গেলে কোনও লোককে সন্ত্রাসবাদী ঘোষণার ক্ষমতা দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদী সংগঠন বলে ঘোষণা করা যাবে এমন সংস্থাগুলির জন্য একই ব্যবস্থা রয়েছে ওই আইনের ৪ ও ৬ নম্বর ভাগে।
আজ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় সরকারের বিশ্বাস, মৌলানা মাসুদ আজহার সন্ত্রাসবাদে যুক্ত, তাকে উল্লিখিত আইনে সন্ত্রাসবাদী বলা হচ্ছে, অন্যদিকে এও হাফিজ মহম্মদ সঈদও সন্ত্রাসবাদে জড়িত, তাকেও ওই আইনে জঙ্গি তকমা দেওয়া হচ্ছে।
রাষ্ট্রপুঞ্জ কোনও ব্যক্তিকে বিশ্ব সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করলে তার আসা যাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা, সম্পত্তি বাজেয়াপ্তকরণ, অস্ত্রশস্ত্র সংগ্রহে নিষেধ সহ নানা বিধিনিষেধ চাপানো হয়। ইউএপিএ বিলে অবশ্য এব্যাপারে কোনও উল্লেখ নেই।