ঢাকা: বাংলাদেশে অশান্তির মূল চক্রী সিসি ক্যামেরা বন্দি। চিহ্নিত যুবকের নাম ইকবাল হোসেন। পরিকল্পনা করেই তাণ্ডব চালানো হয়েছে, জানাল বাংলাদেশ প্রশাসন। সিসিটিভি-র এই ফুটেজ অষ্টমীর রাতের। পেশায় রং মিস্ত্রি ইকবালকে এই চক্রান্তে কে বা কারা জড়িত, তার তদন্ত করছে বাংলাদেশ পুলিশ।


উৎসবের আবহে বাংলাদেশে অশান্তির ঘটনায় মূল অভিযুক্ত চিহ্নিত এই সেই ব্যক্তি। যে মসজিদ থেকে কোরান নিয়ে এসে, পুজো মণ্ডপে রেখেছিল। এ দিন বাংলাদেশ প্রশাসন জানায়, এরপরই কোরানের অপমানের গুজবে, পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে দুর্গাপুজো মণ্ডপে হামলা হয়। হিন্দুদের বাড়ি দোকানে-ভাঙচুর-আগুন, মন্দিরে তাণ্ডবের ঘটনা ঘটে। সিসিটিভির যে ফুটেজ পুলিশের হাতে এসেছিল তাও দেখিয়েছে পুলিশ। 


কুমিল্লা জেলার পুলিশ জানিয়েছে, ১৩ অক্টোবর অর্থাত অষ্টমীর দিন গভীর রাতের এই ফুটেজে যাকে দেখা যাচ্ছে, সেই ইকবাল! ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, এই যুবক মসজিদ থেকে কোরান হাতে বেরিয়ে আসছে। তারপর হাঁটতে হাঁটতে সে ঢুকে যাচ্ছে নানুয়ায় দিঘির পাড় পুজো মণ্ডপে। কিছুক্ষণ পরে দেখা যায়, হাতে হনুমানের গদা নিয়ে মণ্ডপ থেকে বেরিয়ে আসছে ইকবাল। সেই সময় তার হাতে কোরান ছিল না।


বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন, 'কুমিল্লার ঘটনাটি যে লোকটি করেছেন, তাঁকে ক্যামেরার মাধ্যমে চিহ্নিত করা হয়েছে। তিনি মাজারের সঙ্গের মসজিদে দিবাগত রাত ৩টার দিকে গিয়েছিলেন। এক, দুইবার নয় তিনবার গিয়েছেন। ওই মসজিদের দু-জন খাদেম ছিলেন, তাঁদের সঙ্গে ইকবাল কথা বলেছেন। আমাদের অভিজ্ঞ টিম দীর্ঘক্ষণ এটা বিশ্লেষণ করে সুনিশ্চিত হয়েছে যে এই ব্যক্তিটি (ইকবাল) মসজিদ থেকে পবিত্র কোরআন শরিফ এনে রেখেছেন, সেটা তাঁরই কর্ম। রেখে তিনি প্রতিমার গদাটি সেখান থেকে কাঁধে করে নিয়ে এসেছেন।'


কুমিল্লার সুজানগরের এই সিসিটিভি ফুটেজ প্রকাশ্যে আসতেই অনেকে বলছেন, দুর্গাপুজোর সময় অশান্তি পাকানোর ঘটনা পূর্ব পরিকল্পিত ছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, ইকবাল পুজো মণ্ডপে কোরান রাখার পর, মহম্মদ ফয়েজ নামের এক ব্যক্তি ঘটনাটি ফেসবুকে লাইভ করতে শুরু করে। লাইভে কোরান অবমাননার কথা উল্লেখ করে মানুষকে রুখে দাঁড়ানোর প্ররোচনা দেন। এর পর থেকেই ধীরে ধীরে মানুষ জমায়েত হতে থাকে। পুলিশ তাঁকেও গ্রেফতার করেছে। 


ইকবালের মা আমেনা বেগম জানিয়েছেন, 'ভিডিও ফুটেজে যাকে দেখা যাচ্ছে, সেটা আমার ছেলের ছবি। ও রংয়ের কাজ করত। নেশাখোর।' এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, হিন্দুদের ওপর পরিকল্পিত হামলার যে ছক কষা হয়েছিল, তাতে ইকবালকে ব্যবহার করল কারা? কারা ভবঘুরে ইকবালকে নির্দেশ দিয়েছিল কোরান দুর্গাপুজো মণ্ডপে রেখে আসতে?


বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, খোদ সে দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালও বলেছেন, 'এই লোকটি প্ল্যানমাফিক করেছেন। কাজেই নির্দেশিত হয়ে কিংবা কারও প্ররোচনা ছাড়া এই কাজটি করেছেন বলে আমরা এখনও মনে করি না।'


কুমিল্লার যে ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের নানা প্রান্তে হিন্দুদের ওপর হামলা নেমে এসেছে সেই অশান্তির কড়া নিন্দা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন এর ফলে শুধু অন্যের ধর্মকে অসম্মান নয়, নিজ ধর্মকেও হেয় করা হয়েছে। এ দিন আওয়ামি লিগের কার্যালয়ের উদ্বোধন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে ভার্চুয়ালি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, 'অন্যের ধর্মকে হেয় করলে নিজের ধর্মকেই অসম্মান করা হয়। কুমিল্লার ঘটনাটা যদি বিশ্লেষণ করি সেটাই দেখতে পায়। আমাদের পবিত্র কোরানকে অবমাননা করা হয়েছে। অন্যের ধর্মকে অসন্মান করতে গিয়ে। এটাই হচ্ছে সব থেকে দুঃখজনক। নিজের ধর্মের সম্মান নিজেকেই রক্ষা করতে হবে। নিজের ধর্ম পালনের অধিকার যেমন সবার আছে। অন্যের ধর্মকে কেউ হেয় করতে পারে না। নিজের ধর্মকে সম্মান করার সঙ্গে সঙ্গে অন্যের ধর্মকেও সম্মান করতে হয়।’


অশান্তির ঘটনায় আইন নিজেদের হাতে তুলে না নেওয়ার আবেদন জানানোর পাশাপাশি, বিচারের আশ্বাস দেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। দ্রুত মূল চক্রান্তকারীকে গ্রেফতারের হুঁশিয়ারি বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর।