কলকাতা: দক্ষিণ মেরুর অস্থায়ী রেডিও স্টেশন থেকে সম্প্রচারিত বার্তা বারাসতের বাড়িতে বসে ধরে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল গুপ্ত। ছোট বেলা থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের রেডিও স্টেশনগুলির হদিশ করার নেশা  ৬৪ বছরের বাবুলের। এই হবিকে বলা হয় ডিএক্সিং। আর যাঁরা তা করেন, তাঁদের বলা হয় ডিএক্সার। ১৯৬৮-তে মাত্র ১২ বছর বয়সে রেডিও অস্ট্রেলিয়ার সম্প্রচারিত বার্তা তিনি ধরেছিলেন। আর এ কথা জানিয়ে চিঠি পাঠিয়েছিলেন তিনি। রেডিও অস্ট্রেলিয়া কিশোর বাবুলের প্রশংসা করে উত্তরও পাঠিয়েছিল। তাঁর নামও রেডিও অস্ট্রেলিয়ায় সম্প্রচারিত হয়েছিল বলে জানিয়েছেন বাবুল। এরপর তো বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেরই বিভিন্ন রেডিও স্টেশনের সম্প্রচার শুনেছেন বাড়িতে বলেই হাই ফ্রিকোয়েন্সি রেডিওতে। ক্যারিবিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কোনও দ্বীপ বা প্রশান্ত মহাসাগরের ছোট্ট একটি দ্বীপের রেডিও বার্তাও ধরা পড়েছে তাঁর রেডিওতে। এরমধ্যে অনেক রেডিও স্টেশনের অস্তিত্ব এখন আর নেই।

দক্ষিণ মেরুর আন্টার্কটিকায় বেস স্টেশনের রেডিও বার্তা শোনার আগ্রহ ছিল দীর্ঘদিনের। ওই বেস স্টেশনে প্রায় প্রতি বছরই পরিবেশ, খনিজ সম্পদ নিয়ে গবেষণার জন্য বিজ্ঞানীরা শিবির করেন। গবেষণার বিষয়ে তাঁরা  রেডিও বার্তা পাঠান। এবার এলআরএ ৩৬ রেডিও ন্যাশনাল অ্যারকাঞ্জেল স্যান গ্যাব্রিয়েল রেডিও স্টেশন থেকে বার্তা পাঠানো হয়। এই রেডিও স্টেশন ধরতে দীর্ঘ দিন ধরেই চেষ্টা চালাচ্ছিলেন বাবুল। এবার ওই রেডিও স্টেশন থেকে বার্তা সম্প্রচার হওয়ার কথা জানতে পেরে আগেভাগেই প্রস্তুত ছিলেন তিনি। এবার ৮ অগাস্ট রাত সাড়ে দশটা থেকে ৯ অগাস্ট রাত সাড়ে দশটা, অর্থাত্ ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার করা হয়েছিল। ১৫,৪৭৬ কিলোহার্টর্জে রেডিওতে কান পেতেছিলেন তিনি। ৮ অগাস্ট রাত ১২ টা পর্যন্তও রেডিও কোনও সাড়াশব্দ পাননি। কোন সময় তরঙ্গ ভালো থাকতে পারে, তা ইন্টারনেটে খোঁজখবর নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন তিনি। ভেবেছিলেন ভোর পাঁচটায় উঠবেন। কিন্তু একটু দেরি হয়ে যায়। সাড়ে পাঁচটা নাগাদ তড়িঘড়ি হেডফোন কানে নিয়ে রেডিও-র নব ঘোরাতেই স্বপ্নপূরণ! প্রায় ১২ হাজার কিলোমিটার দূরের রেডিও স্টেশনের বার্তা ভেসে এল রেডিওতে। আসলে যে পথ পেরিয়ে তরঙ্গ এসেছে, তার দূরত্ব প্রায় ২১ হাজার কিলোমিটার। সঙ্গে সঙ্গে তিনি তা রেকর্ড করেন। প্রায় মিনিট কুড়ি পর ১৫,8৮০ কিলোহার্টর্জের একটি চিনা রেডিও স্টেশন (সিআরআই)অ্যান্টার্কটিকার রেডিও স্টেশনের সম্প্রচারের মাঝে ঢুকে পড়ে ব্যাঘাত ঘটায়। যাই হোক, রেকর্ড করা বার্তা তিনি সংশ্লিষ্ট স্টেশন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়ে দেন। দক্ষিণ মেরু থেকে কলকাতার কাছে বারাসতের কাজিপাড়ার সুর্বণপত্তণে ওই রেডিও বার্তা ধরে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন বাবুল। কারণ, এই রেডিও বার্তার অভিমুখ ইউরোপ ও লাতিন আমেরিকার দিকে। এই পরিস্থিতিতে বারাসতে এই রেডিও স্টেশনের সম্প্রচার শোনা এক কথায় প্রায় অসাধ্য সাধন। বাবুল জানিয়েছেন, তাঁর আর্জেন্টিনার বাসিন্দা এক বন্ধু তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তিনি ৩ হাজার কিমি দূরত্বে বসেও ওই রেডিও স্টেশনের বার্তা ধরতে পারেননি।

বাবুল জানিয়েছেন, তাঁদের মতো ডিএক্সার-দের ফিডব্যাক রেডিও স্টেশনগুলিকে তাদের ট্রান্সমিশনের মাণ সম্পর্কে অবহিত হওয়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হয়। সেই অনুসারে, পরিষেবা উন্নত করার ক্ষেত্রে তা সহায়ক হয়। এজন্য ডিএক্সারদের কিউএলএল কার্ড প্রদান করে রেডিও স্টেশনগুলি।

ডিএক্সিং আসলে একটি নেশা। ডিএক্সার-দের একটি ক্লাবও রয়েছে। তা হল ইন্ডিয়ান ডিএক্স ক্লাব ইন্টারন্যাশনাল। জিপিও-তে বক্সও রয়েছে ক্লাবের। জিপিও বক্স ৬৪৬, কলকাতা-৭০০০০১-এর মাধ্যমে এই ক্লাবের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তুলতে পারেন আগ্রহীরা। এছাড়াও রয়েছে ওয়েবসাইট- ডব্লুডব্লুডব্লু ডট আইডিএক্সআই ডট ইন।

এই ক্লাবের সদস্যরা বছরের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন স্থানে শিবিরও করেন।