শিলিগুড়ি: করোনায় দেশব্যাপী এক ত্রাসের পরিবেশ। গ্রাম, শহর, জেলা, রাজ্য, দেশ, একের পর এক সহ নাগরিকের মৃত্যুতে বাড়ছে মৃত্যু মিছিল। দেশে এখনও পর্যন্ত কোভিড-১৯ নামের এই ভাইরাসের কবলে রয়েছে ২ হাজারের ওপরে আক্রান্ত। কমিউনিটি স্প্রেডিং ঠেকাতে না পারলে সংখ্যাটা যে শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার ইয়ত্তা নেই। সারা দেশ লকডাউনে। চিকিৎসা, আপতকালীন পরিষেবা ছাড়া সব বন্ধ। ট্রেন চলছে না। আন্তর্জাতিক সহ আন্তঃরাজ্য, সমস্ত রকম বিমান পরিষেবা বন্ধ। জলপথেও যোগাযোগ স্তব্ধ। সড়ক পরিবহণের ব্যবস্থা থাকলেও তা খুবই সীমিত। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কড়া নির্দেশ, রাস্তাঘাটে কোথাও ৫ জনের বেশি জমায়েত করা চলবে না। ধর্মীয় আচার আচরণের ক্ষেত্রেও সরকার জনসাধারণের কাছে অনুরোধ করেছে, ‘বাড়িতেই ধর্মাচরণ করতে।’ এমন অবস্থায় সমস্ত পরিশ্রমের ওপর কার্যত জল ঢেলে দিয়েছে দিল্লির নিজামউদ্দিনের ঘটনা। ধর্মীয় সভায় কাতারে কাতারে জমায়েত। লকডাউনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে তঘবিল-ই-জামাতের এই দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণের খেসারত দিতে হচ্ছে দেশকে। বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা, বাড়ছে মৃত্যুও। চারিদিকে খোঁজ চলছে নিজামউদ্দিন ফেরতদের। এই শঙ্কিত পরিবেশেই সচেতন এবং দায়িত্বশীল নাগরিকত্বের উজ্জ্বল উদাহরণ রাখল শিলিগুড়ির দাস পরিবার।



বাড়িতে বাসন্তী পুজো হচ্ছে। এই নিয়ে তৃতীয়বার। তবে বিগত ২ বছর যে আড়ম্বরের সঙ্গে এই পুজো হয়েছে, এবার তা হচ্ছে না। আলোকসজ্জা নেই। প্যান্ডেল হয়নি। এমনকি এবার ঢাকও বাজছে না শিলিগুড়ির সূর্য নগরের পুজো বাড়িতে। নিয়ম মেনে সব হচ্ছে ঠিকই, তবে মানুষ রয়েছে হাতে গোনা।


পেশায় গ্রাফিক্স ডিজাইনার অনিকেত দাস ও তাঁর পরিবারের কয়েকজন এবং তাঁর বন্ধু মিলিয়ে মোট ৬-৭ জনই পুজোর সমস্ত আয়োজন করেছেন। টেলিফোনে অনিকেত এবিপি আনন্দকে জানান, “অষ্টমীতে অন্তত ৪০০ সাড়ে ৪০০ মানুষ মায়ের ভোগ খায়। এবার তা হচ্ছে না। ফুলের বাজার বন্ধ থাকায় ঘরের ফুল দিয়েই হচ্ছে পুজো। নিজের পরিচিত কাউকে ঢুকতে দেওয়া যাচ্ছে না। অঞ্জলি হয়েছে, তবে সুরক্ষা বলয়ের মধ্যে থেকেই। একে অপরের থেকে দূরত্ব বজায় রেখেই সবাই অঞ্জলি দিয়েছেন।”


তাছাড়াও যাঁরা চেয়েও করোনা আবহে দাস বাড়ির চৌকাঠে পা রাখতে পারেনি, তাঁদের জন্য অনলাইনে পুজো দেখাচ্ছেন অনিকেত। আরতি, পুজো সবই লাইভ স্ট্রিমিং হচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউবে।



কোনও রকম জমায়েত যেন না হয়, সেজন্য পর্যাপ্ত বন্দোবস্ত করেছেন অনিকেত। পুজো দেখতে আসছেন যাঁরা, তাঁদের হাত ধোয়া থেকে শুরু করে যতটা সম্ভব স্যানিটাইজ করা, সবই করা হচ্ছে। বেশি মানুষ যেন একসঙ্গে জড়ো না হন সেজন্য বিসর্জনও পিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। অনিকেত জানিয়েছেন, “শুক্রবার দশমী হলেও প্রতিমা বিসর্জন হবে না। নিয়ম অনুযায়ী ঘট নিরঞ্জন হবে। লকডাউন শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রতিমা থাকবে বাড়িতেই।”