কৃষ্ণেন্দু অধিকারী, কলকাতা: বাংলা সাহিত্য জগতে ইন্দ্রপতন। কবি শঙ্খ ঘোষের জীবনাবসান। বয়স হয়েছিল ৯০ বছর। ১২ এপ্রিল থেকে সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন। পরে তাঁর করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। বর্ষীয়ান কবি হাসপাতালে যেতে অনিচ্ছুক ছিলেন। তাই হোম আইসোলেশনেই চলছিল চিকিৎসা। আজ সকালে বাড়িতেই জীবনাবসান হয় শঙ্খ ঘোষের।
১৯৩২ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের চাঁদপুরে জন্ম হয় শঙ্খ ঘোষের। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় স্নাতকোত্তর। কর্মজীবনে বঙ্গবাসী কলেজ, সিটি কলেজ, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেছেন। পড়িয়েছেন বিশ্বভারতী ও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়েও। পেয়েছেন জ্ঞানপীঠ, সাহিত্য অ্যাকাডেমি-সহ একাধিক পুরস্কার। তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থগুলি হল ‘বাবরের প্রার্থনা’, ‘মুখ ঢেকে যায় বিজ্ঞাপনে’, ‘পাঁজরে দাঁড়ের শব্দ’, ‘মূর্খ বড় সামাজিক নয়’।
শঙ্খ ঘোষের তাঁর প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। গান স্যালুট ছিল অপছন্দের, তাই পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রয়াত কবিকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষ শ্রদ্ধা জানানো হবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী।
শঙ্খ ঘোষের বাড়িতে ফোন মুখ্যমন্ত্রীর। সূত্রের খবর, আড়ম্বরহীন শেষকৃত্য চায় পরিবার। নীরবে শেষকৃত্য সম্পন্ন হোক, চায় পরিবার।
১৯৭৭ সালে বাবরের প্রার্থনা কাব্যগ্রন্থের জন্য সাহিত্য অ্যাকাডেমি পুরস্কার পান শঙ্খ ঘোষ। ‘ধূম লেগেছে হৃৎকমলে’ কাব্যগ্রন্থের জন্য ১৯৮৯ সালে রবীন্দ্র পুরস্কার পান তিনি। ১৯৯৯ সালে কন্নঢ় ভাষায় লেখা নাটক অনুবাদের জন্য দ্বিতীয়বার সাহিত্য অ্যাকাডেমি সম্মান পান তিনি। ১৯৯৯ সালে দেশিকোত্তম সম্মানে ভূষিত করা হয় তাঁকে। ২০১১ সালে পান পদ্মভূষণ সম্মান। ২০১৬ সালে পান জ্ঞানপীঠ পুরস্কার।
‘মহা বটবৃক্ষের পতন ঘটল। তরুণ কবি-লেখকদের মাথার উপর পিতা ও অভিভাবকসম ছিলেন তিনি এতদিন। তিনি ছিলেন জাতির বিবেক।’ শঙ্খ ঘোষের প্রয়াণে শোকজ্ঞাপন করে বললেন কবি জয় গোস্বামী।
‘খুবই ভারাক্রান্ত। কিছুদিন আগেই শঙ্খদাকে ফোন করেছিলাম। তিনি নিজে ফোন ধরতে পারতেন না। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, শঙ্খদা কেমন আছেন? তিনি বললেন, ভাল। শরীর বিকল হলেও, এই বয়সেও তাঁর স্মৃতি ও মনোবল সতেজ ছিল।’ শোকপ্রকাশ করে বললেন সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়।