নয়াদিল্লি: নাগরিকত্ব সংশোধন বিল, ২০১৯ নিয়ে আমেরিকার কোনও কোনও মহলের প্রতিক্রিয়ায় অসন্তুষ্ট ভারত। গতকাল লোকসভায় বিলটি পাশ হওয়ার পর আমেরিকার ধর্মীয় স্বাধীনতা সংক্রান্ত একটি কমিটি ভারতীয় নাগরিকত্ব অর্জনের ক্ষেত্রে ধর্মীয় পরিচয়কে মাপকাঠি, ভিত্তি করার জন্য আইন তৈরির চেষ্টা করায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও অন্য প্রধান রাজনৈতিক নেতৃত্বের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারির দাবি তুলেছে। ওই আইনে অগণিত মুসলিম নাগরিকত্ব হারাবে বলে তাদের অভিযোগ।
আজ বিদেশমন্ত্রক পাল্টা বিবৃতি দিয়েছে, মার্কিন কমিটি প্রকাশিত অবস্থান তাদের পুরানো রেকর্ডের কথা মাথায় রাখলে বিস্ময়কর নয়। কিন্তু এটা দুঃখজনক যে, যে বিষয়ে তাদের জ্ঞান খুবই সীমিত, তা নিয়ে কেবলমাত্র নিজেদের সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, পক্ষপাত দ্বারা নিজেদের চালিত হতে দিল কমিটি। নাগরিকত্ব সংশোধন বিলের ওপর কমিটির বিবৃতি সঠিক বা বাঞ্ছনীয়, কোনওটাই নয়। বিলে বিশেষ কয়েকটি প্রতিবেশী দেশ থেকে ইতিমধ্যে ভারতে পালিয়ে আসা ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের দ্রুত ভারতীয় নাগরিকত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।
বিবৃতিতে ভারত বলেছে, নাগরিকত্ব সংশোধন বিল বা জাতীয় নাগরিকপঞ্জি, কোনওটাতেই কোনও ধর্মীয় বিশ্বাসের অধিকারী কোনও ভারতীয়েরই নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়ার কথা নেই। কিন্তু সেটাই দেখানোর যেসব চেষ্টা হচ্ছে, তা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অন্যায়। আমেরিকা সমেত প্রতিটি দেশের নিজের নাগরিকপঞ্জি খতিয়ে দেখে সর্বশেষ হিসাব ঠিক করা, বিভিন্ন নীতির মাধ্যমে তার অগ্রাধিকার স্থির করার অধিকার আছে।
প্রসঙ্গত, মার্কিন কমিটি নাগরিকত্ব সংশোধন বিলকে ‘ভ্রান্ত দিশায় এক বিপজ্জনক মোড়’ বলে উল্লেখ করে বলেছে, এটি ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ বহুমুখী ঐতিহ্যের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও ভারতীয় সংবিধান, যাতে আইনের চোখে ধর্মীয় পরিচয় নির্বিশেষে সমান মর্যাদা নিশ্চিত করা হয়েছে, তার পরিপন্থী। সংসদের দুই কক্ষেই ‘ধর্মীয় মাপকাঠি’ সমেত বিলটি গৃহীত হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ও অন্য নেতাদের বিরুদ্ধে বিধিনিষেধ জারির দাবি করেছে কমিটি।


মার্কিন কংগ্রেস গঠিত এই কমিটি স্বাধীন, দ্বিস্তরীয় ফেডেরাল সরকারি সংস্থা। তারা দুনিয়াব্যাপী ধর্মীয় স্বাধীনতার সামনে বিপদ খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দেয়। কমিটি তার ওয়েবসাইটে জানিয়েছে, তারা ধর্মের ভিত্তিতে নির্যাতন রোধ ও ধর্মীয় বিশ্বাস, মতামত প্রকাশের স্বাধীনতা জোরদার করার লক্ষ্যে প্রেসিডেন্ট, বিদেশ সচিব ও কংগ্রেসকে বৈদেশিক নীতি সংক্রান্ত সুপারিশ দেয়।
২০০৮-এর জুলাইয়ে তত্কালীন গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে ট্যুরিস্ট ভিসা প্রত্যাখ্যান করার আগের সিদ্ধান্তে অটল থাকতে মার্কিন বিদেশ দপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছিল এই কমিটি। মোদীকে নিউ জার্সিতে একটি সম্মেলনে হাজির থাকার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।