কলকাতা: কয়লা পাচারকাণ্ডে চার রাজ্যের পঁয়তাল্লিশ জায়গায় তল্লাশি সিবিআইয়ের। কয়লা ব্যবসায়ী লালার কলকাতা ও জেলার বাড়ি-ফ্ল্যাট-অফিস ও ঘনিষ্ঠদের ডেরায় হানা গোয়েন্দাদের। ইসিএলের ৪ জেনারেল ম্যানেজারের বাড়িতেও তল্লাশি চালান হয়। অভিযোগ, সেই সময় অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ইসিএলের সিকিওরিটি ইনচার্জের।

গরু পাচারের কারবারের পর সিবিআই র‍্যাডারে কয়লা! আয়কর দফতরের পর, এবার কয়লা পাচারকাণ্ডে চার রাজ্যের ৪৫ জায়গায় ম্যারাথন অভিযান সিবিআইয়ের! সিআরপিএফকে নিয়ে উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ড, বিহার-সহ এরাজ্যের কলকাতা, সল্টলেক, রানিগঞ্জ, আসানসোল, দুর্গাপুর, পুরুলিয়া-সহ ৪৫টি জায়গায় একসঙ্গে তল্লাশি অভিযান চালান কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার প্রায় তিনশো জন অফিসার! অবৈধ কয়লা কারবারে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী লালার শেক্সপিয়র সরণি ও সল্টলেকের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়। অণ্ডালের কাজোরায় একটি কয়লা খাদানে গিয়েও তথ্য সংগ্রহ করেন তদন্তকারীরা।

কোটি কোটি টাকার অবৈধ কয়লা কারবারের মালিক। তাঁর মাধ্যমেই টাকা পৌঁছায় প্রভাবশালীদের কাছে। এমনই অভিযোগ উঠেছে কয়লা ব্যবসায়ী অনুপ মাঝি ওরফে লালার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি, লালার খোঁজে বিভিন্ন ঠিকানায় তল্লাশি চালায় আয়কর দফতর। এবার তাঁদের থেকে তথ্য সংগ্রহ করে ময়দানে নামল সিবিআই। সূত্রের খবর, প্রভাবশালী যোগ খুঁজতে মামলা রুজু করেছে CBI যেখানে ইস্টার্ন কোলফিল্ড লিমিটেড বা ECL-এর একাধিক আধিকারিকের নাম রয়েছে। তার ভিত্তিতেই এদিন ইসিএলের চারজন জেনারেল ম্যানেজারের বাড়িতে তল্লাশি চালান সিবিআই অফিসাররা।

অভিযোগ, রানিগঞ্জের কুনুস্তরিয়ার বাড়িতে তল্লাশি চলাকালীনই অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় ইসিএলের এরিয়া সিকিওরিটি ইনচার্জ ধনঞ্জয় রায়ের। ইসিএলের আধিকারিক নিলাদ্রী রায় বলেছেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় সিবিআই রেড চলছে। সে সময় আমাদের একজন কর্মী মারা গেছে।’

শনিবার কলকাতার শেক্সপিয়র সরণি এবং সল্টলেকে অনুপ ওরফে লালার বাড়ি ও ফ্ল্যাটে তল্লাশি চালান গোয়েন্দারা। CRPF-কে সঙ্গে নিয়ে তল্লাশি চালান হয় লালা-র পুরুলিয়ার নিতুড়িয়ার বাড়িতেও! জানা গিয়েছে, রাস্তার স্ট্রিটল্যাম্পে সিসি ক্যামেরা লাগিয়েছে লালা। লালার সঙ্গীদের বাড়িতেও তল্লাশি চালানো হয়!

সম্প্রতি কলকাতায় এসে এই ইস্যুতে তৃণমূলকে নিশানা করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এই প্রেক্ষাপটে সিবিআই অভিযান নিয়ে তীব্র বাগযুদ্ধে জড়িয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপি। বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ বলছেন, ‘মানুষ জানে টাকা কোথায় যায়। আমরা বহুবার বলেছি, লুঠ হয়ে যাচ্ছে। পার্টি, প্রশাসনের লোক যুক্ত আছে, সামনে আসা উচিত, সাজা পাওয়া উচিত। সিবিআই কান ধরেছে, এবার মাথাও আসবে।’

অন্যদিকে, তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেছেন, ‘সরকারি সংস্থা সিবিআই, আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা করবে, এর সঙ্গে রাজনীতির কী আছে। আইন মেনে করলে, কী আছে। দিলীপ ঘোষ অনাবশ্যক এসব কথা বলছেন।’

সব মিলিয়ে কয়লাকাণ্ডে সিবিআইয়ের ম্যারাথন তল্লাশি অভিযান ঘিরে সরগরম রাজ্য রাজনীতি।