নয়াদিল্লি: প্রায় ৫০ জনকে খুন করার অভিযোগ রয়েছে এই চিকিৎসকের বিরুদ্ধে। তার মধ্যে প্রায় এক ডজন অপহরণ ও খুনের মামলার বিচারের পর আজীবন কারাদণ্ড হয়েছে। কিন্তু এহেন অপরাধীই জেল থেকে প্যারোলে ছাড়া পেয়ে উধাও হয়ে যান। তিনি বিয়ে করে বহাল তবিয়তে দিন কাটাচ্ছিলেন। শেষপর্যন্ত অবশ্য তাঁকে খুঁজে বের করে ফের গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

উপন্যাসের চরিত্রের মতো এই অপরাধীর নাম দেবেন্দ্র শর্মা। তাঁর বয়স ৬২ বছর। তিনি ন’য়ের দশক থেকে চলতি শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন ট্যাক্সি ও ট্রাকচালককে খুন করেছেন বলে অভিযোগ। তাঁর অপরাধের জাল দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ ও রাজস্থানে বিস্তৃত ছিল। তবে বেশিরভাগ অপরাধেরই বিচার হয়নি।

দিল্লির ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম ব্র্যাঞ্চ) রাকেশ পাওয়েরিয়া জানিয়েছেন, ‘বিহারে ডাক্তারি পড়ার পর রাজস্থানের জয়পুরে ১১ বছর ধরে একটি ক্লিনিক চালান এই ব্যক্তি। এরই মধ্যে তিনি অপরাধের দুনিয়ায় পা রাখেন। কিডনি পাচার চক্র, জাল গ্যাস এজেন্সি, গাড়িচালকদের খুন করে দেহ উত্তরপ্রদেশে কুমিরভর্তি খালে ফেলে দেওয়ার মতো নানা অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তিনি। ১৯৯৪ সালে একটি জাল গ্যাস এজেন্সিতে ১১ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ করে ক্ষতির মুখে পড়ার পরেই তিনি অপরাধ শুরু করেন। প্রথমে তিনি নিজেই কয়েকজন সঙ্গীকে নিয়ে একটি জাল গ্যাস এজেন্সি খোলেন। তাঁরা গ্যাস সিলিন্ডার নিয়ে যাওয়া ট্রাকগুলির চালকদের খুন করে সেই সিলিন্ডারগুলি নিয়ে গ্রাহকদের কাছে বিক্রি করে দিতেন। ১৯৯৬ সালে পুলিশ এই জাল গ্যাস এজেন্সির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেফতার করে। তবে জামিন পেয়ে ফের একটি জাল গ্যাস এজেন্সি খোলেন শর্মা। এরপর তিনি কিডনি পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত হন। জয়পুর, গুড়গাঁও, বল্লভগড়ে এই চক্রের জাল ছড়িয়ে পড়ে। শর্মা আমাদের জানিয়েছেন, তিনি বেআইনিভাবে ১২৫টি কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করেছেন। প্রতিটি ক্ষেত্রে পাঁচ থেকে সাত লক্ষ টাকা করে পেয়েছেন। ২০০৪ সালে গুড়গাঁওয়ের কিডনি চক্রের পর্দাফাঁস হওয়ার পর আরও কয়েকজন চিকিৎসকের পাশাপাশি শর্মাও গ্রেফতার হন। তারপর আজীবন কারাদণ্ড পেয়ে তিনি জয়পুর সেন্ট্রাল জেলে বন্দি ছিলেন। এ বছরের জানুয়ারিতে তিনি প্যারোলে ২০ দিনের জন্য ছাড়া পান। এরপর তিনি আর জেলে ফেরেননি। প্রথমে তিনি আলিগড়ে যান। সেখান থেকে পশ্চিম দিল্লির উত্তম নগরে গিয়ে বসবাস শুরু করেন। সেই সময় এক বিধবা মহিলার সঙ্গে আলাপ হয় তাঁর। তিনি ওই মহিলাকে বিয়ে করেন।’

ডিসিপি আরও জানিয়েছেন, ‘শর্মা জয়পুর থেকে আলিগড় যাওয়ার কথা বলে ট্যাক্সি ভাড়া নিতেন। মাঝপথে তিনি চালককে খুন করে উত্তরপ্রদেশের কাশগঞ্জে একটি খালে মৃতদেহ ফেলে দিতেন। সেই খালে কুমিরভর্তি। ফলে দেহগুলি খুঁজে পাওয়া কঠিন। এভাবে অন্তত ৫০টি খুন করেছেন তিনি।’

পুলিশ সূত্রে খবর, শর্মার অপরাধের কথা জানতে পেরে তাঁকে ছেড়ে চলে যান প্রথম স্ত্রী ও সন্তানরা। সোমবার পশ্চিম দিল্লির বাপরোলা গ্রাম থেকে গ্রেফতার হওয়ার পর শর্মা দাবি করেছেন, তিনি কনট প্লেসে জমি-বাড়ি কেনাবেচার ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা করছিলেন। তাঁর এই দাবি খতিয়ে দেখছে পুলিশ।