কলকাতা: পুরো নাম সোমেন্দ্রনাথ মিত্র। তবে তাঁকে পরিচিতি দিয়েছিল সোমেন মিত্র নাম। আর কংগ্রেসের অন্দরে ছোড়দা। রাজনীতিতে হাতেখড়ি ছাত্রবেলায়, ছাত্র রাজনীতির পথ ধরে ষাটের দশকের শেষে কংগ্রেসে যোগ দেন। তারপর থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাননি সোমেন মিত্র।


সোমেনকে বলা হত বরকত গনি খান চৌধুরীর শিষ্য। প্রথমবার শিয়ালদহ বিধানসভা কেন্দ্র থেকে নির্বাচিত হন বাহাত্তর সালে। সাতাত্তরের প্রবল ইন্দিরা গাঁধী বিরোধী হাওয়ায় ওই আসনে জেতেন জনতা দলের প্রার্থী। ৮২-তে ফের শিয়ালদহ আসন থেকে নির্বাচিত হন সোমেন। সেই থেকে ২০০৬ পর্যন্ত শিয়ালদহ কেন্দ্র তাঁকে ফেরায়নি। ৭ বারের বিধায়ক, দলের চরম দুর্দিনেও কংগ্রেস না ছাড়া সোমেনও শেষমেষ দল বদলান। ২০০৮-এ গঠন করেন প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস। তখন বাম আমল। সোমেন বলেছিলেন, কেন্দ্রে বামেদের সমর্থনে সরকার ধরে রাখা কংগ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা কোনওটিই নেই, তাই বিশ্বাসযোগ্য বিকল্পের সন্ধান দিতে তাঁদের এই নতুন দল গঠনের সিদ্ধান্ত।

এরপর ২০১১-য় ৩৪ বছর পর রাজ্যে ঘটে রাজনৈতিক পালাবদল। সিপিএমকে সরিয়ে ক্ষমতায় আসে তৃণমূল। ২০০৯ সালে সোমেন তাঁর প্রগতিশীল ইন্দিরা কংগ্রেস মিশিয়ে দেন তৃণমূলের সঙ্গে। সেই তৃণমূল, শোনা যায়, যার নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সোমেনের জন্যই কংগ্রেস ছেড়েছিলেন। প্রদেশ সভাপতি নির্বাচনের লড়াইয়ে তৎকালীন যুব কংগ্রেস নেত্রী মমতাকে হারিয়ে দেন সোমেন। এরপর কংগ্রেস ছাড়েন মমতা। নির্বাচনে বিপর্যয়ের দায় নিয়ে সোমেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে ইস্তফা দেন ১৯৯৮ সালে।

২০০৯-র লোকসভা ভোটে মমতা সব থেকে বড় চমক দেন সোমেনকে লোকসভায় নিয়ে গিয়ে। তৃণমূলের টিকিটে ছোড়দা ভোটে লড়েন ডায়মন্ডহারবার আসন থেকে। হারিয়ে দেন ৪ বারের সাংসদ সিপিএমের শমীক লাহিড়িকে। কিন্তু ২০১৪-য় ফের তৃণমূল ছেড়ে কংগ্রেসে ফেরেন সোমেন। তার আগে দেন সাংসদ পদে ইস্তফা। ২০ বছর পর ২০১৮-র ২২ সেপ্টেম্বর ফের প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি হন তিনি। আমৃত্যু সেই পদেই ছিলেন তিনি।