ডেলাওয়্যার: অন্যান্য বছরের থেকে এবার আমেরিকার এই শহরের বসন্ত অনেকটাই অন্যরকম। কবিগুরুর কথায়, ‘রোদনভরা এ বসন্ত কখনও আসেনি বুঝি আগে!’
অথচ প্রতিবার এপ্রিলের এই সময়টায় শীত রুক্ষতা ঢেকে আসে বসন্ত। গাছে নতুন পাতা, চেরিব্লসমের শোভা, ঝকঝকে দিন, নীল আকাশ...যাকে বলে পর্যটনের আদর্শ পরিবেশ তৈরি হয়। নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটন ডিসি পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয় কিন্তু এই বছর সব এলোমেলো হয়ে গেছে।
১৭৮৭ সালের ৭ই ডিসেম্বর ডেলাওয়্যার’কে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্টেট হিসাবে অন্তর্ভূক্ত করা হয়।আমাদের যেমন প্রত্যেকের বাড়িতে ডাকনামে ডাকার চল আছে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি রাজ্যেরই একটা ডাকনাম আছে। ডেলাওয়্যারের নিকনেম “ফার্স্ট স্টেট”।
ফার্স্ট স্টেট স্টেটাসের কারণে ডেলাওয়্যারে বিক্রিত প্রতিটি পণ্যে স্টেট ট্যাক্স মকুব করা হয় এবং সেই কারণে ডেলাওয়্যার অন্যতম শপিং ডেস্টিনেশন। আশেপাশের রাজ্যগুলি থেকে প্রত্যহ বহু মানুষ এখানে কেনাকাটি করতে আসতেন। এখন সামান্য কিছু গ্রসারি স্টোর,মেডিসিনশপ,খাবারের দোকান ও এমার্জেন্সি সার্ভিস ব্যতীত সব বন্ধ। দীর্ঘ লকডাউনে স্থানীয় ছোটো ব্যবসায়ীরা বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। বড় বড় ব্র্যাণ্ডগুলির অনলাইন শপিং ব্যবস্থা অব্যাহত রয়েছে, আকর্ষণীয় ছাড়ের অফারের ছড়াছড়ি। মানুষও হামলে পড়ে ফ্রিজ, টিভি, ফ্যাশন অ্যাপারেল, খাদ্যদ্রব্য, গৃহস্থালির সামগ্রী ও প্রয়োজনীয় সব কিছুই অনলাইনে কিনছেন।
১ মাসের উপর ‘স্টে অ্যাট হোম’ অর্ডার জারি থাকা সত্ত্বেও অর্থনীতি এখনও থমকে যায়নি তার অন্যতম বড় কারণ আইটি সেক্টর সচল আছে। ট্রাম্প সরকার ২ট্রিলিয়ন ডলার আর্থিক অনুদান ঘোষণা করেছেন নির্দিষ্ট আয়ের মানুষের জন্য। অনেকেরই এতে প্রভূত উপকার হবে। ইতিমধ্যেই অগুনতি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।
গত সপ্তাহে নতুন করে ৬৬ লক্ষ মানুষ ‘জবলেস ক্লেমস’ আবেদন করেছেন। ট্রাম্প চাইছেন ১লা মে থেকে কিছু নিষেধাজ্ঞা শিথিল করতে কিন্তু এই মুহূর্তে প্রশাসনের অন্যতম মুখ ডাঃ অ্যান্টনি ফাউচি একে "ওভারলি অপটিমিস্টিক" আখ্যা দিয়েছেন। নিউ ইয়র্কের গভর্নর অ্যাণ্ড্রু কুয়োমো এক সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন মানুষের বাইরে বেরোনোর অধিকার আছে কিন্তু অন্যকে ইনফেক্টেড করার অধিকার কারো নেই।
নিউ ইয়র্কে নির্দেশ জারি করা হচ্ছে, এখন থেকে অনির্দিষ্ট কালের জন্য বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক বা কাপড়ে নাক ও মুখ ঢেকে তবেই জনবহুল জায়গায় যাওয়া যাবে। কুয়োমোর মতে এভাবে এক থেকে একাধিক মানুষে সংক্রমণ ঠেকানো যাবে।
হসপিটালে মুমূর্ষু রোগীদের পরিবারের সাথে শেষ বারের মত যোগাযোগ স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি নন প্রফিট সংস্থা ল্যাপটপসহ অন্যান্য ডিভাইসের ব্যবস্থা করেছে। এই ভাবেই প্রিয়জনের সঙ্গে শেষবারের মতো দেখা হচ্ছে। এর থেকে কষ্টের আর কীই বা হতে পারে?
আমার পরিচিত এক অন্তঃস্বত্ত্বা মহিলাকে নিয়মিত হেল্থ চেক-আপ করাতে হসপিটাল যেতে হয়। কিন্তু বেশ কিছু দিন যাবৎ তার স্বামীকেও হসপিটালে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না, ভিডিও কলে ডাক্তার ও নার্সরা মহিলার স্বামীর সঙ্গে কথা বলছেন।
সম্প্রতি আমাদের এক পরিচিতের মা গত হয়েছেন, কিন্তু কোনোমতেই দেশে যেতে পারবেন না। এ এক অসহনীয় পরিস্থিতিতে দিন কাটাচ্ছেন তিনি।




এই মাসে আমাদের বেড়ানোর পরিকল্পনা ছিল, টিকিট বাতিল করেছি। বাঙালি অ্যাসোসিয়েশনের নববর্ষের অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
সূত্র বলছে, চিনে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পর সেখান থেকে ৪৩৪০০০ মানুষ আমেরিকায় এসেছেন, এছাড়া অন্য আক্রান্ত দেশগুলি থেকেও অসংখ্য মানুষ এদেশে এসেছেন। অতিমারি খুব সহজেই ছড়িয়ে পড়েছে।এই মুহূর্তে আগের তুলনায় অনেক বেশি টেস্ট হচ্ছে কিন্তু আক্রান্ত ও মৃতের গ্রাফ ক্রমশঃ ঊর্ধমুখী।
ভারতের অবস্থা এখনও এতটা ভয়াবহ নয়, তবু দেশের জন্য বড় চিন্তা হয়। এখনও পর্যন্ত কোনও থেরাপিউটিক ড্রাগ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়নি। সুতরাং সামগ্রিক সচেতনতা এবং পর্যাপ্ত আর্থ-সামাজিক সুরক্ষাই পারে এই অদৃশ্য শত্রুকে প্রতিহত করে মানব সভ্যতার সর্বকল্যান সাধন করতে এবং সেই সংকল্পসম্পাদনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, ইচ্ছাশক্তি, কর্তব্যবোধ সর্বান্তকরণে সহায়ক হবে।