নয়াদিল্লি: জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে গোটা পৃথিবীর কাছে এখন ত্রাসের একটাই নাম, করোনাভাইরাস। আর এই মারণ ভাইরাসের মোকাবিলায় এবার জাতি-ধর্ম ভুলে লড়াইয়ের ডাক দিলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিবাল। সম্প্রতি দিল্লির করোনাভাইরাস সংক্রমিত রোগীদের ওপর পরীক্ষামূলক ভাবে প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ করে আশাব্যাঞ্জক ফল পাওয়া যাচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি। তাই ধর্মীয় ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে রক্ত ও প্লাজমা ডোনেশানে সমস্ত মানুষকে এগিয়ে আসতে আর্জি কেজরিবালের।


করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েও যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাঁদের শরীর থেকে প্রথমে সংগ্রহ করা হয় রক্ত ও প্লাজমা। দাবি, তাঁদের রক্ত ও প্লাজমায় মিলতে পারে করোনা প্রতিরোধের অ্যান্টিবডি। তারপর সেই অ্যান্টিবডি প্রবেশ করানো হয় আক্রান্তের শরীরে। এতে আক্রান্তের শরীরেও তৈরি হতে পারে করোনার সঙ্গে লড়াইয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অ্যান্টিবডি। এই পদ্ধতির নামই প্লাজমা থেরাপি। তবে এখনও এই পদ্ধতি পরীক্ষামূলক পর্যায়ে রয়েছে।  কেজরিবাল জানান, দিল্লির কয়েকটি হাসপাতালে করোনা রোগীদের ওপর প্লাজমা থেরাপি প্রয়োগ কর সাড়া মিলেছে। লোকনায়ক জয়প্রকাশ নারায়ণ হাসপাতালের চার করোনা রোগীর চিকিৎসা এই প্লাজমা থেরাপি দিয়েই করা হয়েছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জনের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। ৪৯ বছরের এক ব্যক্তি প্রায় সুস্থ হওয়ার পথে।

এদিন সাংবাদিক সম্মেলনে মুখ্যমন্ত্রী বলেন,  ''হিন্দু-মুসলিম ভেদাভেদের সময় এখন নয়। প্লাজমা কে দিচ্ছেন সেটা বড় কথা নয়, প্রাণ বাঁচানোই মূল লক্ষ্য। হতেই পারে কোনও মুসলিমের দেওয়া প্লাজমাতেই প্রাণ বাঁচল অত্যন্ত গম্ভীর পরিস্থিতিতে থাকা এক হিন্দুর, আবার কোনও হিন্দুর দেওয়া প্লাজমাতে সুস্থ হয়ে উঠলেন কোনও মুসলিম মা-বাবা।''

কেজরিওয়াল আরও বলেন, 'ভাইরাস কখনও জাত-ধর্ম দেখে হানা দেয় না। এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন যে কেউ। তাই সব বিভেদ ভুলে নিঃস্বার্থভাবে এগিয়ে আসতে হবে। ভগবান এইসব ধর্মের ভেদাভেদ তৈরি করেননি। এই সবই মানুষের সৃষ্টি।'

ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চের (আইসিএমআর) অনুমোদনের পরেই দিল্লি, গুজরাত ও কেরলে প্লাজমা থেরাপির ট্রায়াল শুরু হয়েছে। দিল্লিতে করোনা রোগীদের উপরে এই থেরাপির প্রয়োগ সন্তোষজনক বলেই ঘোষণা করা হয়েছে সরকারের তরফে। জানা গিয়েছে, কোনও ব্যক্তি করোনা সংক্রমণ থেকে সেরে ওঠার পরে একাধিকবার তাঁর শরীরে পরীক্ষা করে দেখা হয়। একবার সুস্থ হওয়ার পর ১৪ দিন ধরে যদি তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে, তখন তাঁকে পুরোপুরি সুস্থ বলা যায়। এরকম হলে তবেই তাঁর প্লাজমা এই থেরাপির জন্য নেওয়া হবে। করোনা চিকিৎসায় প্লাজমা থেরাপি নিয়ে গবেষণা চলছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন ও ব্রিটেনে।

লকডাউন সম্পর্কে কেজরি সরকার জানান, বাজার ও শপিং মল কমপ্লেক্টগুলি আপাতত ৩ মে অবধি বন্ধ থাকবে। একই নিয়ম থাকবে কন্টেনমেন্ট জোনগুলিতেও। ৩ মে অবধি দিল্লিতে লকডাউনে কোনও শিথিলতা নেই। এখন কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে দিল্লি। ৩ মের পর কেন্দ্রীয় সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়া হবে, বলেন কেজরিবাল।

গোটা দেশে বর্তমানে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ২০৮৩৫ জন। এর মধ্যে দিল্লিতে আক্রান্তের সংখ্যা ২৯১৮ জন।