নয়াদিল্লি: করোনাভাইরাসের দাপট অব্যাহত। দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্তের সংখ্যা ১ লক্ষ ৬৮ হাজার ৯১২ জন। গতকাল দৈনিক আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৭৯। সবমিলিয়ে দেশে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১ কোটি ৩৫ লক্ষ ২৭ হাজার ৭১৭। এরই মধ্যে করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়েছেন ১ কোটি ২১ লক্ষ ৫৬ হাজার ৫২৯ জন। দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ১ লক্ষ ৭০ হাজার ১৭৯ জনের।করোনা সংক্রমণের এই বাড়বাড়ন্ত ঠেকাতে বিভিন্ন রাজ্য সরকার নাইট কার্ফু ও লকডাউনের পথে হেঁটেছে।
দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন রাজ্য জারি হয়েছে কী ধরনের বিধিনিষেধ
মহারাষ্ট্র- মহারাষ্ট্রে নতুন করে লকডাউন জারির বিষয়টি বিবেচনা করে দেখা হচ্ছে। রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রাজেশ তোপে জানিয়েছেন, ১৪ এপ্রিলের পর মহারাষ্ট্রে লকডাউন জারির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মহারাষ্ট্র সরকার এর আগে সপ্তাহান্তে শুক্রবার রাত ৮ টা থেকে সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত লকডাউন জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। সেইসঙ্গে রয়েছে অন্যান্য বিধিনিষেধ, যা ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে।
উত্তরপ্রদেশ- এই রাজ্যের যে জায়গাগুলিতে নাইট কার্ফু জারি হয়েছে, সেই তালিকায় যোগ হয়েছে মথুরার নামও। মথুরা জেলা প্রশাসন রাত ৯ টা থেকে সকাল ছটা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি করেছে। সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগী আদিত্যনাথ সরকার ধর্মীয় স্থানে পাঁচজনের বেশি জমায়েতে নিয়ন্ত্রণ জারি করেছে। জানা গেছে, লখনউ, কানপুর ও বারানসীতেও নৈশ কার্ফু জারি থাকবে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। এছাড়াও মীরাটে আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত রাত ১০ টা থেকে ভোর পাঁচটা, গাজিয়াবাদে ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত রাত ১০ টা থেকে ভোর পাঁচটা এবং নয়ডাতেও ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত একই সময় পর্বে নৈশ কার্ফু জারি হয়েছে।
কানপুরে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাত ১০ টা থেকে সকাল ৬ টা কার্ফু জারি থাকবে। প্রয়াগরাজে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রাত ১০ টা থেকে সকাল ৮ নৈশ কার্ফু জারি থাকবে। বরেলি, আগ্রা, মোরাদাবাদেও নৈশ কার্ফু জারি হয়েছে।
দিল্লি-দিল্লি সরকারও একাধিক বিধিনিষেধ জারি করেছে।সরকারের এই নির্দেশিকায় জনসমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ছাড়াও রেস্তোরাঁ, থিয়েটার, গণ পরিবহণ ও বিয়ে, শেষকৃত্যর অনুষ্ঠানে জনসমাগমের সীমা বেঁধে দেওয়া হয়েছে।
নতুন এই বিধি আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এর পাশাপাশি আগেই রাত দশটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নাইট কার্ফুর ঘোষণা করা হয়েছে। সেইসঙ্গে দিল্লিতে সমস্ত রাজনৈতিক, সামাজিক, খেলা, বিনোদন, পড়াশোনা, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। বিয়ের অনুষ্ঠানে ৫০ জন ও শেষকৃত্যানুষ্ঠানে ২০ জনের বেশি অংশ নিতে পারবেন না। রেস্তোরাঁ, বার ও সিনেমা হলগুলিতে আসন সংখ্যার ৫০ শতাংশর বেশি লোক থাকতে পারবেন না। বাস ও মেট্রোও অর্ধেক সংখ্যক যাত্রী নিয়ে চালাতে হবে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন, এমন ক্রীড়াবিদের অনুশীলনের প্রয়োজন ছাড়া সমস্ত সুইমিং পুল বন্ধ থাকবে। স্টেডিয়ামগুলিতে খেলা চলতে পারে। তবে সেখানে কোনও দর্শক থাকতে পারবেন না। চলতি সপ্তাহের প্রথমেই স্কুল ও কলেজগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
মধ্যপ্রদেশ- এ রাজ্যে শহরাঞ্চলগুলিতে সপ্তাহান্তে শুক্রবার সন্ধে ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ট লকডাউন জারির ঘোষণা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান। রবিবার জব্বলপুর প্রশাসন নৈশ কার্ফুর ঘোষণা করেছে। জানা গেছে, ইন্দোর শহর, রাউ, শাজাপুর, উজ্জ্বয়নী, বারওয়ানি, রাজগড়, বিদিশায় লকডাউন জারি হয়। অতিরিক্ত মুখ্যসচিব (স্বরাষ্ট্র) রাজেশ রাজোরা বলেছেন, ইন্দোর শহর, রাউ, মউ,শাজাপুর শহর ও উজ্জ্বয়নী, বারওয়ানি, রাজগড় ও বিদিশার মতো জেলাগুলিতে ১৯ এপ্রিল সন্ধে ছয়টা পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। জব্বলপুর শহর সহ বালাঘাট, নরসিংহপুর ও সেওনি জেলায় ২২ এপ্রিল সকাল পর্যন্ত লকডাউন থাকবে। সংশ্লিষ্ট কালেক্টররা খুব শীঘ্রই ১৪৪ ধারা ঘোষণা করবেন।
জম্মু ও কাশ্মীর: কেন্দ্রশাসিত এই অঞ্চলের আট জেলার শহরাঞ্চলে নৈশ কার্ফু জারি হয়েছে। আগামী ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সমস্ত স্কুল বন্ধ রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
পঞ্জাব- আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত রাজ্যে রাত নটা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারি হয়েছে।
রাজস্থান- গত শুক্রবার রাজ্যের দশ শহরে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত নৈশ কার্ফু ঘোষণা করেছে রাজস্থান সরকার।
ওড়িশা- এ রাজ্যের সুন্দরগড়, ঝড়সুগুড়া, সম্বলপুর, বারগড়, বোলাঙ্গির, নুয়াপাড়া, কালাহাণ্ডি, নওয়ারংপুর, কোরাপুট ও মালকানগিরি জেলায় রাত ১০ টা থেকে ভোর পাঁচটা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু ঘোষণা করা হয়েছে।
গুজরাত- সমস্ত সরকারি ও বেসরকারি কলেজগুলিতে অফলাইন পঠনপাঠন আগামী ৩০ এপ্রিল বন্ধ রখার নির্দেশ দিয়েছে গুজরাত সরকার। গুজরাত হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, সরকার রাজ্যের ২০ শহরে রাত ৮ টা থেকে সকাল ছয়টা পর্যন্ত নৈশ কার্ফু জারির সিদ্ধান্ত নিয়েছে।