নয়াদিল্লি: সোমবার থেকে দেশজুড়ে শুরু হল ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে প্রত্যেকের জন্য বিনামূল্যে টিকাকরণ। প্রথম দিনই বিপুল সাড়া পাওয়া গেল। দেশজুড়ে ৮০ লক্ষেরও বেশি ভ্যাকসিন ডোজ দেওয়া হয়েছে। এর আগে স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল, সারা দেশে ৬৯ লক্ষেরও বেশি মানুষকে প্রথম দিন বিনামূল্যে টিকা দেওয়া হবে। কিন্তু আজ তার চেয়ে অনেক বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া সম্ভব হয়েছে।


টিকাকরণের এই হার দেখে খুশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। তাঁর ট্যুইট, ‘আজ টিকাকরণের রেকর্ড ভেঙে যেতে দেখে আনন্দ হচ্ছে। করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ভ্যাকসিনই আমাদের সবচেয়ে শক্তিশালী অস্ত্র। যাঁরা ভ্যাকসিন পেয়েছেন, তাঁদের অভিনন্দন। এত নাগরিককে ভ্যাকসিন দেওয়ার যে প্রথমসারির যোদ্ধারা কঠোর পরিশ্রম করছেন, তাঁদের কুর্ণিশ জানাই। ওয়েল ডান ইন্ডিয়া!’


স্বাস্থ্যমন্ত্রকের দেওয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, সোমবার সকাল সাতটা পর্যন্ত সারা দেশে ২৮,০০,৩৬,৮৯৮ ডোজ ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। এরপর আজ সারাদিনে ৮০ লক্ষেরও বেশি মানুষকে ভ্যাকসিন দেওয়া হল।


তবে আজ দেশজুড়ে বিনামূল্যে গণ টিকাকরণ চালু হলেও, বাদ রইল বাংলা। ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত জোগান না থাকায় ভ্যাকসিনেশন চালু করা গেল না বলে দাবি রাজ্যের। এই সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছে চিকিৎসক সংগঠনের একাংশ। টিকার অভাব মানতে নারাজ বিজেপি। রাজ্যকে কটাক্ষ করেছে কংগ্রস।


রবিবারই স্বাস্থ্যভবনের তরফে জানিয়ে দেওয়া, ভ্যাকসিনের পর্যাপ্ত জোগান নেই। তাই এখনই গণভাবে ১৮ ঊর্ধ্বদের বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদান চালু করা সম্ভব নয়। স্বাস্থ্য ভবনের তরফে জানানো হয়েছে, এখন রাজ্যে ৪৫ বছরের ঊর্ধ্ব এবং প্রায়োরিটি গ্রুপকেই বিনামূল্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। এই প্রায়োরিটি গ্রুপের মধ্যে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীদের পরিবারের সদস্য, হকার, দোকানদার ও পরিবহণ কর্মীরা।


এই প্রেক্ষাপটে সোমবার থেকে বাংলায় গণ ভ্যাকসিনেশন শুরু না হওয়ায় সরকারের সমালোচনায় সরব চিকিৎসক সংগঠনগুলির একাংশ। সরব বিজেপিও।


অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ্ সার্ভিস ডক্টরস্-এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা দাবি করেছেন, ‘রাজ্য যথেষ্ট সময় পেয়েছে ভ্যাকসিন আনানোর। অনেক রাজ্য গ্লোবাল টেন্ডার ডাকছে। কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনায় ভ্যাকসিন জোগাড় করেছে কেউ কেউ, আমাদের রাজ্য কিছুই করল না। মানুষকে বঞ্চিত করা হল।’


রাজ্য বিজেপি সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার বলেছেন, ‘১৮ লক্ষ টিকা এসেছে, সেটা কোথায় গেল? কেন দেওয়া গেল না? অন্যের ওপর দোষারোপ না করে সেটা দেখা হোক।’


গোটা দেশে ভ্যাকসিন সরবরাহের দায়িত্বে এখন কেন্দ্রীয় সরকার। তাই পাল্টা মোদি সরকারের দিকেই আঙুল তুলছে তৃণমূল। পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেছেন, ‘কেন সেকেন্ড ওয়েভ এসেছিল এখন বুঝতে পারছি। বাইরে থেকে লোক এসেছে, নির্বাচন ছিল। অরিজিনাল ভ্যাকসিন কত আছে বোঝা যাচ্ছে না। কেনা বন্ধ করে দিল, আবার জোগান নেই। উত্তরপ্রদেশে কম ভ্যাকসিনেশন হচ্ছে, সেখানে বেশি পাঠাচ্ছে। কেমোফ্লেজ পলিটিক্স।’


তৃণমূল সাংসদ ও আইএমএ (রাজ্য শাখা) সাধারণ সম্পাদক শান্তনু সেন বলেছেন, ‘আমার কাছে পর্যাপ্ত টিকা না থাকলে কী করে চালু করব? টিকার জোগান না দিয়েই ঘোষণা করে দিল। এটা কেন্দ্রের গিমিক ছাড়া কিছুই না।’


প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী বলেছেন, ‘দোষারোপ করলে হবে না। প্রয়োজনে রাজ্য সরকারকে আদালতে যেতে হবে। অন্য রাজ্য তো যাচ্ছে। দোষারোপের পালা বন্ধ করতে হবে।’


সবমিলিয়ে আপাতত দোষারোপের গেরোয় বঙ্গে বিশ বাঁও জলে বিনামূল্যে গণ ভ্যাকসিনেশন। 


এরই মধ্যে রাজ্যে একদিনে করোনা আক্রান্ত ২ হাজারের নীচে। রাজ্যে একদিনে করোনা আক্রান্ত ১ হাজার ৮৭৯ জন। রাজ্যে একদিনে করোনায় ৪২ জনের মৃত্যু হল। দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যুতে রাজ্যের মধ্যে শীর্ষে উত্তর ২৪ পরগনা। এই জেলায় একদিনে করোনা আক্রান্ত ২৯৫ জন, মৃত্যু ১০ জনের। কলকাতায় একদিনে আক্রান্ত ১৭১ জন, মৃত্যু ৯ জনের। হাওড়ায় একদিনে সংক্রমিত ১৩০ জন, মৃত্যু ৫ জনের। 


রাজ্যে এখনও পর্যন্ত মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৪,৮৩,৫৮৬ জন। রাজ্যে অ্যাকটিভ করোনা রোগীর সংখ্যা ২২,৭৪০ জন। হাসপাতাল থেকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে ১৪,৪৩,৪৫৬ জনকে। রাজ্যে এখনও পর্যন্ত করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১৭,৩৯০ জনের। রাজ্যে সংক্রমণের তুলনায় সুস্থতার হার ৯৭.৩০ শতাংশ।


রাজ্যের মতোই দেশেও কমল দৈনিক করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। কমল দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যাও। স্বাস্থ্যমন্ত্রকের সোমবারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ২৪ ঘণ্টায় ১ হাজার ৪২২ জনের মৃত্যু হয়েছে।  
একদিনে আক্রান্তের সংখ্যা ৫৩ হাজার ২৫৬। যা ৮৮ দিন পর দেশে সর্বনিম্ন। দেশে এখনও পর্যন্ত করোনায় মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৮ হাজার ১৩৫ জনের। মোট আক্রান্তের সংখ্যা ২ কোটি ৯৯ লক্ষ ৩৫ হাজার ২২১। অ্যাক্টিভ কেসের সংখ্যা ৭ লক্ষ ২ হাজার ৮৮৭। এরই মধ্যে করোনাকে জয় করে সুস্থ হয়েছেন ২ কোটি ৮৮ লক্ষ ৪৪ হাজার ১৯৯ জন। একদিনে সুস্থতার সংখ্যা ৭৮ হাজার ১৯০।