কলকাতা: সিপিএমের প্রচারে সুনীল গাওস্কর! হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন। সত্তরেরে মহানায়ক, ক্রিকেটের কিংবদন্তি সেই সুনীল গাওস্করকেই প্রচারে ব্যবহার করল সিপিএমের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটি। ১৯৭৭ সালের ২১ জুলাই, পশ্চিমবঙ্গে প্রথমবারের জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল বামফ্রন্ট সরকার। রাজ্যে প্রথম কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন জ্যোতি বসু। ইএমএস নাম্বুদিরিপাদের পর ভারতের একমাত্র বাঙালি এবং কমিউনিস্ট মুখ্যমন্ত্রী হন তিনি। ২৪ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন জ্যোতি বসু। যা রেকর্ড। একই সঙ্গে কোনও এক রাজ্যে একটি দলের প্রায় সাড়ে তিন দশক ক্ষমতায় থাকার ঘটনাও বেনজির এবং বিস্ময়েরও।



সাতের দশকে ওয়েস্ট ইন্ডিজে সফর করতে গিয়ে ‘ক্যারিবিয়ান দানবদের ঠেঙানি’ থেকে ক্লাইভ লয়েডের দলের বিরুদ্ধে স্মরণীয় শতরান করে আসা সুনীল ছিলেন ভারতের নয়নমণি। শিরস্ত্রাণ ছাড়া ক্রিকেটে ‘রান মেশিন’ ছিলেন সুনীলই। টেস্ট ক্রিকেট দশ হাজার রান, সঙ্গে ৩৪টি শতরান। এই রেকর্ডেই নিজেক বিশ্ব ক্রিকেটে বিস্ময় বানিয়েছিলেন এই ‘ডানপন্থী’।


এদিকে রাজ্য রাজনীতিতে পালাবদলে কংগ্রেসের বিকল্প হিসেবে উত্থান হল বামপন্থীদের। খাদ্য আন্দোলন, বন্যা বিধ্বস্ত বাংলার ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া, তখন ত্রাতা ও দাতা বামফ্রন্ট-ই। জ্যোতি বসুর নেতৃত্বে ভূমি সংস্কার আন্দোলন, পঞ্চায়েত পর্যন্ত ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ গোটা ভূ-ভারতেই ব্যাপক সাড়া ফেলল। যার সুফলও বামেরা পেল। একের পর এক নির্বাচন, আর একের পর এক জয়। এমন পরিস্থিতি তৈরি হল, জ্যোতি বসুর প্রধানমন্ত্রী হওয়ারও সুযোগ এল। তবে তা হল না। এরপর তাঁর রাজনৈতিক অবসরে নতুন মুখ পেল সিপিএম। মুখ্যমন্ত্রী হলেন সংস্কৃতিমনস্ক রাজনৈতিক বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি সরকার চালালেন ১০ বছর। ২০১১ সালে পরাস্ত হয়ে ‘রাজনৈতিক সন্ন্যাস’ নিলেন বুদ্ধও। সেই থেকে রাজ্যে সিপিএম ক্রমশ ক্ষয়িষ্ণু। আছে ঠিকই, তবে ভুগছে ‘রক্তাল্পতায়’। ভোট কমেছে, আসন কমেছে। হারিয়েছে ‘সরকারি বিরোধী’ তকমাও। তবে অতীতের ৩৪ বছরের সেই বিরাট ইনিংস এখনও সিপিএম-এর সম্পদ।



আগামী বছর রাজ্যে বিধানসভা ভোট। প্রচার শুরু করে দিয়েছে বিজেপি। তলেতলে কাজ শুরু করে দিয়েছে তৃণমূলও। আসরে নামতে দেরি করল না বামেরাও। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে সোশাল মাধ্যমে সম্পর্ক গড়তে মরিয়া পক্ককেশ সিপিএম। সেখানেই ব্যবহার করা হল সুনীল গাওস্করের মতো কিংবদন্তি ক্রিকেটারের নাম। গাওস্করের ৩৪টি শতরানের সঙ্গেই তুলনা টানা হল বামফ্রন্টের ৩৪ বছরের সরকারের। ফেসবুক প্রচারে সিপিএম সাহায্য নিয়েছে ‘ব্র্যান্ড’ বুদ্ধেরও। সূর্যকান্ত মিশ্র, শ্যামল চক্রবর্তী, শমিক লাহিড়ীর কথপোকথনের সঙ্গে এবিপি আনন্দকে দেওয়া বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শেষ সাক্ষাৎকার জুড়ে দিয়েই চলছে প্রচার।