কলকাতা: বিশ্বকাপের আগে ১৪ ম্যাচে ৫ উইকেট। পাকিস্তানের সেরা বোলিং অস্ত্রের নিষ্প্রভ থাকা উদ্বেগে রেখেছিল সমর্থকদের। প্রশ্ন উঠে গিয়েছিল, বল হাতে মহম্মদ আমিরের ম্যাজিক কি তবে শেষের প্রহর গুনছে?

যদিও সমস্ত প্রশ্নকে মাঠের বাইরে ফেলে বিশ্বকাপে ফের আগুনে ছন্দে আবির্ভূত আমির। তিন ম্যাচে দশ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা বোলারদের তালিকার শীর্ষে তিনি। আগের ম্যাচে তাঁর স্পেল সামলাতে হিমসিম খেয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। রবিবার ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচেও আমিরই যে পাকিস্তানের প্রধান ভরসা, একবাক্যে মেনে নিচ্ছেন ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা।

কিন্তু কী করে হল এমন ভোলবদল? কীভাবে ফের হারানো ছন্দ ফিরে পেলেন পাকিস্তানের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি জয়ের নায়ক?

ভারত-পাক মহারণের দুদিন আগে আমিরের প্রত্যাবর্তনের নেপথ্য কাহিনি জানালেন আসিফ বাজওয়া। আমিরের ব্যক্তিগত কোচ জানালেন, প্রাক্তনীদের সমালোচনাই তাঁর তারকা ছাত্রকে ঘুরে দাঁড়ানোর রসদ জুগিয়েছে। সঙ্গে এ-ও জানালেন, শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের দলে অন্তর্ভুক্তির পর কীভাবে একটি ফোন কল আরও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ করে তুলেছিল পাক পেসারকে।

শুক্রবার লাহৌর থেকে হোয়াটসঅ্যাপ কলে আসিফ বললেন, ‘বিশ্বকাপের আগে একেবারেই ফর্মে ছিল না আমির। ১৪টি ওয়ান ডে খেলে মাত্র ৫ উইকেট পেয়েছিল। সমস্যা বাড়িয়েছিল চিকেন পক্স। বিশ্বকাপের আগে কার্যত শয্যাশায়ী ছিল। শেষ মুহূর্তে বিশ্বকাপের জন্য জাতীয় দলে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পরেও তাই মানসিক জড়তা ছিল ওর।’

নিজের ফর্ম নিয়ে অসন্তুষ্ট আমির এরপরই ফোন করেছিলেন শৈশবের কোচকে। প্রশ্ন করেছিলেন, কোথায় ভুল হচ্ছে? কীভাবেই বা তা কাটিয়ে ছন্দে ফেরা যায়?

ফোনে সেই কথোপকথনের অভিজ্ঞতা নিয়ে আসিফ বলছেন, ‘ও আত্মবিশ্বাসের অভাবে ভুগছিল। আমি শুধু আমিরকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, নিজেকে ১৪ ম্যাচে ৫ উইকেট নেওয়ার মতো বোলার বলে ও নিজে মনে করে কি না। কোনও উত্তর দেয়নি। তারপরই আমির বলে, পাকিস্তানের প্রাক্তন ক্রিকেটারেরা যেভাবে সমালোচনা করছেন, তাতে ও ভীষণ আহত। আমি পরামর্শ দিই, নিজের খেলায় মনোনিবেশ করতে। আর বিশ্বকাপের শুরু থেকে নিজের স্বাভাবিক বোলিংটা করতে। শুধু একটা প্রতিশ্রুতি দিতে বলি। চার ম্যাচে ১০ উইকেট নাও। ও কথা দিয়েছিল, প্রথম চার ম্যাচে ১১ উইকেট নেবে।‘ ছাত্রের পারফরম্যান্সে তৃপ্ত কোচ বলছেন, ‘তিন ম্যাচে দশ উইকেট নিয়েছে। বৃষ্টিতে একটা ম্যাচ পণ্ড না হলে আরও উইকেট নিত আমির।’

কী সমস্যা হচ্ছিল আমিরের বোলিংয়ে? আসিফ বলছেন, ‘ছন্দ পাচ্ছিল না। বাড়তি কিছু করার তাগিদে নিজের ওপর আরও চাপ তৈরি করে ফেলেছিল।’ রোগ ধরা পড়ার পরই ফিরে আসার লড়াই শুরু হয়। আসিফ বলছেন, ‘ওকে নিজের স্বাভাবিক বোলিংটা করতে বলেছিলাম। লাইন-লেংথে জোর দিতে বলেছিলাম। লক্ষ্য করলে দেখবেন, বিশ্বকাপে ও কিন্তু বাড়তি প্রচেষ্টা করছে না। স্বাভাবিক, সহজাত বোলিংটা করছে। তাতেই সাফল্য পাচ্ছে।’

ছাত্রের সঙ্গে প্রায় প্রত্যেকদিনই ফোনে কথা হয় আসিফের। পরের ম্যাচের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ভারত। আমির বনাম বিরাট কোহলি দ্বৈরথ দেখার অপেক্ষায় রয়েছে বিশ্ব। কোহলির বিরুদ্ধে আমিরের স্ট্র্যাটেজি কী হবে? আসিফ বললেন, ‘ভারতের বিরুদ্ধে ম্যাচ সমস্ত পাকিস্তানি ক্রিকেটারদের কাছেই বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তবে ব্যাটসম্যান কোহলিকে আমির ভীষণ শ্রদ্ধা করে। ওর বিরুদ্ধে কোনও আলাদা পরিকল্পনা থাকছে না। ভারতের কোনও ব্যাটসম্যানের জন্যই নির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা সাজাচ্ছে না আমির। বরং জোর দিচ্ছে লাইন-লেংথে। সুইং পাওয়ার জন্য ভারতীয়দের সম্ভবত একটু ওপরের দিকে বল করবে। ড্রাইভ মারার প্রলোভন দেখাবে। ইংল্যান্ডে বেশ কিছুদিন ধরে ক্লাব ক্রিকেট খেলেছে আমির। ওখানকার পরিবেশ-পরিস্থিতিতে এটাই ওর সবচেয়ে গ্রহণযোগ্য পরিকল্পনা বলে মনে হয়েছে।’

চার ম্যাচে দুটি পরাজয়। মাত্র তিন পয়েন্ট পেয়েছে পাকিস্তান। বিশ্বকাপে দলের সম্ভাবনা নিয়ে কী বলেছেন আমির? পাক পেসারের কোচ বলছেন, ‘ও মনে করে সেমিফাইনালে যাওয়ার আশা এখনও শেষ হয়নি। পরবর্তী লক্ষ্যও স্থির করে ফেলেছে। পরের চারটি ম্যাচে অন্তত তিনটি জয়। ৯ পয়েন্টে পৌঁছে গেলেই শেষ চারের দৌড়ে ঢুকে পড়বে পাকিস্তান।’