ভুবনেশ্বর: ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে আজ উচ্চপর্যায়ের বৈঠক করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এই বৈঠকে হাজির ছিলেন ক্যাবিনেট সচিব, প্রধানমন্ত্রীর প্রধান সচিব, প্রধানমন্ত্রীর অতিরিক্ত প্রধান সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, জাতীয় আবহাওয়া দফতর, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী এবং প্রধানমন্ত্রীর দফতরের আধিকারিকরা। ঘূর্ণিঝড়ের পথ এবং এর মোকাবিলায় কী সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে, সে বিষয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। দুর্গত মানুষের সাহায্যার্থে সম্পদ সংগ্রহ করে রাখা, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী ও সেনাবাহিনী মোতায়েন, পানীয় জল সরবরাহের ব্যবস্থা এবং বিদ্যুৎ ও টেলি যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। জরুরি পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উচ্চপদস্থ আধিকারিকদের সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।


এদিকে, ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলি থেকে আট লক্ষেরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। আজ সন্ধের মধ্যেই পর্যটকদের পুরী ছাড়তে বলা হয়েছে। আজ থেকে শনিবার পর্যন্ত নন্দনকানন বন্ধ রাখা হয়েছে। গঞ্জাম, গজপতি, পুরী, খুরদা, নয়াগড়, কটক, জাজপুর, ভদ্রক, কেন্দ্রাপাড়া, জগৎসিংহপুর, বালাসোর ও ময়ূরভঞ্জ জেলায় সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ আজ থেকে তিনদিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ওড়িশার উচ্চশিক্ষা দফতর। পারাদ্বীপ বন্দরের সব কাজ বন্ধ রাখা হয়েছে।

একনজরে দেখে নেওয়া যাক, ‘ফণী’ মোকাবিলায় কী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে-

· আবহাওয়া বিভাগের শেষ খবর অনুযায়ী, পুরী থেকে ‘ফণী’-র দূরত্ব ৪২০ কিমি। দিঘা থেকে ‘ফণী’-র অবস্থান ৬১৫ কিমি। কলকাতা থেকে ‘ফণী’-র দূরত্ব ৭৩০ কিমি। উত্তর-উত্তরপূর্ব দিকে যাচ্ছে এই ঘূর্ণিঝড়। আগামীকাল সন্ধেয় ১৭০ থেকে ১৮০ কিমি বেগে পুরী উপকূলে আছড়ে পড়তে পারে ‘ফণী’।

· ওড়িশার বিশেষ ত্রাণ কমিশনার বি পি শেঠি জানিয়েছেন, উপকূলবর্তী জেলাগুলিতে থাকা লোকজনকে ৮৮০টি সাইক্লোন সেন্টার, স্কুল-কলেজ সহ বিভিন্ন নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। দেশের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে বড় উদ্ধারকার্য। আট লক্ষ মানুষকে নিরাপদে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

· ওড়িশার ১৪টি জেলা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাড়ু ও পশ্চিমবঙ্গে ‘ফণী’-র প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা।

· গতকাল সন্ধেয় এক জরুরি বৈঠকে বসেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়েক। তিনি অন্ত:সত্ত্বা মহিলা, শিশু, বয়স্ক ব্যক্তি ও বিশেষভাবে সক্ষম ব্যক্তিদের দিকে বিশেষ নজর দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

· ১৯৯৯ সালের সুপার সাইক্লোনে যে অঞ্চলগুলিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছিল, সেখানে বিলি করার জন্য এক লক্ষেরও বেশি শুকনো খাবারের প্যাকেট তৈরি রাখা হয়েছে।

· জরুরি পরিস্থিতির মোকাবিলায় তৈরি রাখা হয়েছে নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, উপকূলরক্ষীবাহিনী, জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা দফতর, ওড়িশা ডিজাস্টার র‌্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স এবং দমকলকে তৈরি রাখা হয়েছে।

· পূর্ব উপকূল রেল ১০৩টি ট্রেন বাতিল করেছে। পুরী থেকে যাত্রীদের হাওড়া ও শালিমারে নিয়ে আসার জন্য তিনটি বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আজ সন্ধে থেকে দু’দিনের জন্য ভদ্রক থেকে বিজিয়ানাগরম পর্যন্ত ট্রেন পরিষেবা বন্ধ থাকছে।

· ওড়িশার উপকূলবর্তী অঞ্চল সহ বিভিন্ন জেলায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির পূর্বভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।

· সমুদ্র উত্তাল থাকার আশঙ্কায় শনিবার পর্যন্ত মৎস্যজীবীদের বঙ্গোপসাগরে না যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ·      বঙ্গোপসাগর থেকে ৫০০ কর্মীকে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে গিয়েছে ওএনজিসি।

· বিমানবন্দরগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী সুরেশ প্রভু।

· ইন্ডিগোর পক্ষ থেকে ট্যুইট করে জানানো হয়েছে, আজ বিশাখাপত্তনম বিমানবন্দরে সব উড়ান বাতিল করা হয়েছে।

· ভিস্তারার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আজ থেকে রবিবার পর্যন্ত কলকাতা-ভুবনেশ্বরের মধ্যে উড়ানের দিন ও সময় বদল এবং বাতিল করার জন্য কোনও অর্থ ধার্য করা হবে না।