শ্রীনগর ও নয়াদিল্লি: জম্মু ও কাশ্মীরের ইতিহাসে প্রথম ব্লক ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিল (বিডিসি) ভোটে মুখ থুবড়ে পড়ল বিজেপি। ৩১৬টি ব্লকের মধ্যে ২১৭টিতে জয়ী নির্দল। যদিও, ভোট-প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে মেটায় উচ্ছ্বসিত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। একাধিক টুইটের মাধ্যমে রাজ্যবাসীকে জানালেন অভিনন্দন।
৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর এই প্রথম জম্মু ও কাশ্মীরে কোনও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হল।  তার ওপর রাজ্যের ইতিহাসে এই প্রথম বিডিসি ভোট। ভোটগ্রহণ হয় জম্মু, কাশ্মীর, লেহ ও লাদাখে। সব মিলিয়ে ৩১৬টি ব্লকে মোট ১,০৬৫ প্রার্থী লড়াই চালিয়েছিলেন। মূলত, গ্রাম পঞ্চায়েত সভাপতি ও সদস্যরা এই ভোটদানে অংশগ্রহণ করেছিলেন।





স্বভাবতই, উদ্দীপনা ও উৎসাহ ছিল চোখে পড়ার মতো। ৯৮.৩ শতাংশ ভোট পড়েছল, যা দৃষ্টান্তমূলক বটে। সাম্বা জেলার পান্ডোরা পঞ্চায়েত সদস্য সঞ্জীব কুমার জানান, জম্মু ও কাশ্মীরের প্রথম বিডিসি নির্বাচনে অংশ নিয়ে ইতিহাসের সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে পড়েছি। আমরা ভীষণ খুশি। রাজ্যের তৃণমূলস্তরীয় গণতন্ত্রের জন্য এটা ভীষণই ভাল পদক্ষেপ।
গত ৫ অগাস্ট, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের মাধ্যমে জম্মু ও কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করে কেন্দ্র। রাজ্যসভা এবং লোকসভা দুই কক্ষেই পাস হয় জম্মু-কাশ্মীর পুনর্গঠন বিল। যেখানে, পৃথক কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে পরিণত হয় জম্মু-কাশ্মীর এবং লাদাখ।





সেই সময় রাজ্যে কোনও প্রকার অপ্রীতিকর ও অনভিপ্রেত ঘটনা রুখতে গোটা উপত্যকায় কার্যত নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। প্রায় ৪০০ রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীকে হয় আটক না হয় গৃববন্দি করে রাখা হয়। পরে, জম্মুর নেতাজের ছাড়া হলেও, এখনও কাশ্মীরের কোনও নেতা-নেত্রীকে ছাড়া হয়নি। সেই তালিকায় রয়েছেন রাজ্যের তিন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী-- ন্যাশনাল কলফারেন্স প্রধান ফারুখ আবদুল্লা, তাঁর ছেলে ওমর এবং পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতি।





যে কারণে, এই ভোট বয়কট করেছিল কংগ্রেস, সিপিএম, এনসি, পিডিপি সহ রাজ্যের অধিকাংশ রাজনৈতিক দল। এক কথায় গত বৃহস্পতিবার হওয়া এই ভোটে বিজেপি ছাড়া আর কোনও প্রথম সারির রাজনৈতিক দল লড়াই করেনি। অর্থাৎ, কার্যত ফাঁকা মাঠ ছিল গেরুয়া শিবিরের সামনে। কিন্তু, তাতেও তারা মুখ থুবড়ে পড়ল।
কিন্তু, ফল বের হতে দেখা যায়, বিজেপি জোর ধাক্কা খেয়েছে। কারণ, মোট আসনের মধ্যে মাত্র ৮১টিতে জিতেছে গেরুয়া শিবির। ২১৭ আসনে জয়ী নির্দল প্রার্থীরা। বিজেপির গড় বলে পরিচিত জম্মু। সেখানে ১৪৮টি ব্লকে ভোট হয়। কিন্তু, সেখানে মাত্র ৫২টিতে জেতে গেরুয়া শিবির। নির্দল জেতে ৮৮টিতে। প্যান্থার জেতে ৮টিতে। লাদাখের ৩১টি ব্লকে বিজেপি জিতেছে ১১টিতে। নির্দল জিতেছে ২০টিতে। আর কাশ্মীরে বিজেপি জিতেছে ১৬টিতে। অন্যদিকে, নির্দল জিতেছে ৯৭টিতে।





যদিও ফলাফল নিয়ে ভাবতে রাজি নন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। উল্টে উপত্যকার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়ায় উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। গণতন্ত্রের ওপর আস্থা রাখার জন্য একের পর এক টুইটে তিনি মানুষকে অভিনন্দন ও ধন্যবাদ জানান। একইসঙ্গে তিনি এই সফল ভোটের জন্য অগাস্ট মাসে নেওয়া ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তকে কৃতিত্ব দেন।