নয়াদিল্লি: হরিয়ানায় সরকার গঠন নিয়ে দুই যুযুধান শিবিরের প্রবল তত্পরতার মধ্যেই বিজেপির গোপাল কান্ডা সহ নির্দল বিধায়কদের সমর্থন পাওয়ার চেষ্টাকে কেন্দ্র করে সোস্যাল মিডিয়ায় ব্যঙ্গ-বিদ্রূপের ঝড়। ৪০ জন বিধায়ক আছে, রাজ্যে মসনদে ফিরতে আরও ৬ জনের সমর্থন চাই। বিজেপির দাবি, গোপাল সহ ৬ জন নির্দল বিধায়ক ইতিমধ্যেই তাদের সমর্থনের গ্যারান্টি দিয়েছেন। মিডিয়ার খবর, বৃহস্পতিবার রাতে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের দিল্লিগামী চার্টার্ড বিমানে দুই নির্দল বিধায়কের সঙ্গী হয়েছেন সিরসার বিজেপি সাংসদ সুনীতা দুগ্গল। সেই দুজনের একজন গোপাল, অপরজন রানিয়া থেকে নির্বাচিত রঞ্জিত সিংহ। তিনজনের ছবিও ভাইরাল হয় সোস্যাল মিডিয়ায়।
হরিয়ানা লোকহিত পার্টির নেতা গোপাল সিরসা থেকে মাত্র ৬০২ ভোটে জেতেন। ২০১৪-য় হরিয়ানা লোকহিত পার্টি গঠন করেন তিনি। রাজনৈতিক কেরিয়ারে বহু বছর ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদলে(আইএনএলডি) ছিলেন তিনি। ২০০৯-এর বিধানসভা নির্বাচনে টিকিট না পেযে তাদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন গোপাল। সিরসা থেকে নির্দল হিসাবে লড়ে জিতে ভূপিন্দন সিংহ হুডার কংগ্রেস সরকারকে সমর্থন দেন। পুরস্কারও পান। তাঁকে স্বরাষ্ট্র রাষ্ট্রমন্ত্রী করেন হুডা। ২০১২-র আগস্টে দিল্লিতে এক বিমানসেবিকার আত্মহত্যায় গোপালের নাম জড়ায়। ওই বিমানসেবিকা গোপালের মালিকানাধীন এমডিএলআর এয়ারলাইন্সে কাজ করতেন। সুইসাইড নোটে গোপাল তাঁকে ‘খারাপ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন’ বলে লিখে যান তিনি। তখন বিজেপি সহ একাধিক দলের রোষের সম্মুখীন হন গোপাল। দিনদশেক পালিয়ে বেড়ানোর পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণের পর ধর্ষণ ও আত্মহত্যায় প্ররোচনা সহ একাধিক অভিযোগে গ্রেফতার হন তিনি। দোষী সাব্যস্ত হয়ে প্রায় ১৮ মাস জেলে কাটানোর পর ২০১৪-র মার্চ জামিন পান দিল্লির এক দায়রা আদালতে। ঘটনাচক্রে আত্মঘাতী বিমানসেবিকার মা-ও ২০১৩র ফেব্রুয়ারিতে দিল্লিতে আত্মহত্যা করেন। সুইসাইড নোটে তিনিও বলে যান, মেয়ের পরিণতির জন্য দায়ী গোপাল ও তার সঙ্গীসাথীরাই।
জুতোর ব্যাবসা দিয়ে শুরু, ক্রমশ রিয়েল এস্টেট ও হসপিটালিটি পরিষেবা ব্যাবসায় পা রাখেন গোপাল। তৈরি করেন এমডিএলআর এয়ারলাইন্স। ২০০৯ সালে ওই বিমানসংস্থা ঝাপ গুটোয়। ২০১৯-এর ভোটে দায়ের করা মনোনয়নপত্র তাঁর ৭৮ কোটি টাকা দেনা আছে বলে উল্লেখ করেছেন গোপাল।


এমন বিতর্কিত একজনকে, যাঁর বিরুদ্ধে তারাই একসময় সরব ছিল, এখন হরিয়ানায় সরকার গড়তে সঙ্গে নেওয়ায় বিজেপির সমালোচনা হচ্ছে সোস্যাল মিডিয়ায়। ২০১২-এ গোপালের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের বিজেপির ছবি পোস্ট করে তাদের ট্রোল করা হচ্ছে। সমালোচকদের মধ্যে আছেন কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিংভিও।


তিনি ট্যুইট করেছেন, ২০১২-এ গোপাল কান্ডাকে আত্মহত্যায় প্ররোচনা, প্রমাণ নষ্টের দায়ে অভিযুক্ত করে দিল্লি পুলিশ। ২০১৯-এ হরিয়ানায় কিংমেকার গোপাল কান্ডা। বিজেপিতে ঢুকতে হলে এভাবেই নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও কর্মসূচিকেও ঠাট্টা করে তিনি ট্যুইট করেন, ব্রেকিং-হরিয়ানায় বিজেপির কিংমেকারের ভূমিকা পালনের পর ওকে এবার বেটি বাঁচাওয়ের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর হতেও বলা হবে!