বিজেন্দ্র সিংহ, নয়াদিল্লি: ত্রিপুরায় বিজেপি শাসনে গণতন্ত্র বিপন্ন। একদলীয় ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েম করতে চাইছে বিজেপি। কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না বিরোধীদের। এবিপি আনন্দকে এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে দাবি করলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সিপিএম নেতা মানিক সরকার। তিনি বলেছেন, ভোটের পর থেকেই ত্রিপুরায় আক্রান্ত হচ্ছে সিপিএম। এখন বিজেপির নিশানায় তৃণমূলও। কোনও বিরোধী দল আক্রান্ত হলেই চুপ থাকবে না সিপিএম।
মানিক সরকারের অভিযোগ, সংবিধান মেনে কাজ করছে না ত্রিপুরার বিজেপি সরকার। তাঁর এই অভিযোগের কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, রাজ্যে বিরোধীদের কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না। সংসদীয় গণতন্ত্রে বিরোধী দলের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সংসদ বা বিধানসভার ভেতরে ও বাইরে বিরোধীদের সক্রিয় ভূমিকা সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু বিরোধীরা বাধাপ্রাপ্ত হলে সংসদীয় গণতন্ত্র টিকবে কী করে? সেটা হলে গণতন্ত্র থাকবে কী করে? সংসদীয় গণতন্ত্রই তো সংবিধানের অন্যতম আদর্শ।
মানিক সরকার বলেছেন, আমরা বিজেপি শাসনের প্রথম থেকে আক্রান্ত। অন্য বামগুলিও আক্রমণের শিকার হয়েছে। কংগ্রেসও আক্রান্ত। এখন তৃণমূল যাওয়ার চেষ্টা করছে। তাদের ওপর আক্রমণ করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বিজেপির লক্ষ্য একটাই, অন্য কাউকে কাজ করতে দেওয়া হবে না। যা করব আমরা করবই। এভাবে একদলীয় একনায়কতান্ত্রিক ফ্যাসিস্ট ব্যবস্থা তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে।
মানিক সরকার বলেছেন, আমাদের বিরোধী ১৬ জন বিধায়ক রয়েছেন। তাঁদের রাজ্যে গতিবিধিতে লাগাম টানা হয়েছে। তাঁদের কোথাও যেতে দেওযা হচ্ছে না।
তিনি বলেছেন, আমি বিরোধী দলনেতা, একটা সময় মুখ্যমন্ত্রী ছিলাম। কাজেই শুধু নিজের বিধানসভাতেই আটকে থাকলে চলবে না, এটা দস্তুর নয়ও। নানা জায়গায় ঘুরে ফিরে মানুষের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলার চেষ্টা করি। রাজ্যে মানুষের কাজ নেই, খাদ্য নেই, সন্তান বিক্রি, অনাহারে মৃত্যুর মতো ঘটনা ঘটেছে। রেগার কাজ নেই। ওগুলো দেখতে যাচ্ছি। কিন্তু যেতে দিচ্ছে না। আমার বিধানসভা কেন্দ্র প্রথম দিকে পার্টি অফিস ভেঙেছে। সারা ত্রিপুরাতেই ভেঙেছে। তখন দেখতে যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু লোকসভা ভোটের পরিমণ্ডল তৈরির হওয়ার পর থেকেই আমাদের বাধা দেওয়া শুরু হয়। ভোটের প্রচারে বাজারে হাতে মাইক নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলব, সেটাও করতে দিচ্ছে না।
তাঁর অভিযোগ, বিরোধীদের ওপর এখন সরাসরি আক্রমণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি শান্তিবাজারে আমি ছিলাম, বাদলবাবু সহ অন্যান্য নেতারা ছিলেন। সেখানে পুলিশের সামনেই আমাদের ওপর আক্রমণ করা হয়।
ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর অভিযোগ, সংবাদমাধ্যমকেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী হুমকি দিচ্ছেন । মিডিয়া হাউসগুলিও আক্রান্ত হচ্ছে। ৮ তারিখে দু-তিনটি মিডিয়া হাউসে আক্রমণ।
একদলীয় ফ্যাসিস্ট রাজত্ব কায়েমের জন্য বিজেপির কাছে ত্রিপুরা একটি পরীক্ষাগার হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ করেছেন মানিক সরকার। এই অভিযোগের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মানিক সরকার বলেছেন, বিজেপি তো শুধু ত্রিপুরাতেই ক্ষমতায় নেই। অন্য রাজ্যেও আছে। ত্রিপুরায় বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির জয়কে বিশাল সাফল্য বলে অভিহিত করেছিলেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী। যে রাজ্যে মাত্র দুটি লোকসভা আসন রয়েছে, সেই রাজ্যে জয়কে এতটা গুরুত্ব দিচ্ছেন কেন? এর কারণ হিসেবে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন যে, এটা আসলে আদর্শগত সংগ্রাম ছিল।
মানিক সরকার বলেছেন, আসলে ভারতে সর্বত্র সমানভাবে কমিউনিস্ট আন্দোলন বিস্তার লাভ করতে পারেনি। যে জায়গাগুলিতে হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে ত্রিপুরা। সেখানে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছি। এমন একটি রাজ্য়ে জয়ের জন্য ২০১৮-র বিধানসভা নির্বাচনে সর্বশক্তি দিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল বিজেপি। অর্থবল, মিডিয়া, মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে অপ্রত্যাশিত সাফল্য পেয়েছিল তারা। তারপর থেকে বিরোধীদের দমন করার চেষ্টা চালাচ্ছে বিজেপি। তারপর তারা এভাবে সবাইকে দমন করে যদি একদলীয় শাসন কায়েম করা যায়, তার পরীক্ষানিরীক্ষা করছে। আর এই একদলীয় শাসনের কথা সারা ভারতেই বলছে বিজেপি। ত্রিপুরায় সফল হলে ওই ধাঁচ অন্য জায়গাগুলিতে প্রয়োগ করবে।
মানিক সরকারের দাবি, ৪২ মাসের অভিজ্ঞতা থেকে মানুষ বিজেপি শাসনের কুফল বুঝতে পেরেছেন। আমরা মানুষের সঙ্গে থেকে কাজ করার চেষ্টা করছি। সেজন্যই আমাদের ওপর আক্রমণ নেমে আসছে।
মানিক সরকারের অভিযোগ, বিজেপি সরকারের পারফরম্যান্স শূন্যেরও নীচে। কোনও প্রতিশ্রুতিই তারা পূরণ করতে পারেনি।
তৃণমূল কংগ্রেসের ত্রিপুরায় নিজেদের পায়ের তলার জমি শক্ত করতে নেমেছে। এ ব্যাপারে মানিক সরকার বলেছেন, প্রত্যেক মানুষ নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা থেকে সিদ্ধান্ত নেন। তৃণমূল রাজ্যে আসতেই পারে। তাদের ওপর আক্রমণের নিন্দা করছি।কোনও বিরোধী দল আক্রান্ত হলেই চুপ থাকবে না সিপিএম। দীর্ঘমেয়াদি সংগ্রামের মাধ্যমে গড়ে উঠেছে বামফ্রন্ট। তাই তৃণমূলের সঙ্গে জোটের কোনও প্রশ্নই নেই।