কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় উমপুনের তাণ্ডবে বিধ্বস্ত শহর কলকাতা। দু’দিন কেটে গেলেও এখনও অনেক জায়গা বিদ্যুত্‍হীন। পানীয় জলের সঙ্কট। সমস্যা সমাধানে মরিয়া হয়ে একাধিক জায়গায় রাস্তা অবরোধ স্থানীয়দের। এদিকে, অনেক জায়গাতেই রাস্তায় পড়ে বহু গাছ। ঝুঁকি নিয়ে তার ফাঁক দিয়েই চলছে যাতায়াত।

অতি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় উমপুনের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড কলকাতা। অনেক জায়গাতেই ভোল বদলে গিয়েছে তিলোত্তমার। দু’দিন পরেও কলকাতাজুড়ে ছড়িয়ে তাণ্ডবের ক্ষত চিহ্ন। দু’দিন ধরে নেই বিদ্যুৎ, পানীয় জল। ফলে দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়েই জেরবার অবস্থা। যেমন বেলগাছিয়ার এলআইজি আবাসন। দু’দিন কেটে গেলেও বিশাল এই আবাসনের বিভিন্ন জায়গায় এখনও গাছ পড়ে রয়েছে। কয়েক জায়গায় বিদ্যুতের খুঁটি-সহ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে গাছ। বিদ্যুত্‍হীন গোটা আবাসন চত্বর। অন্ধকারে দিন কাটছে দেড় হাজার বাসিন্দার। এলআইজি আবাসনের এক বাসিন্দা জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ নেই। ফলে পানীয় জলের সঙ্কটও মারাত্মক আকার নিয়েছে। একটু জলের আশায় মাথা খুঁটে মরার মতো পরিস্থিতি। অগতির গতি হয়ে দাঁড়িয়েছে আবাসনের দু’টি ট্যাপ কল। জল পেতে কম বয়সী থেকে বয়স্ক, ট্যাপের সামনে মানুষের দীর্ঘ লাইন।

গাছ উপড়ে বিপর্যস্ত অবস্থা টালা পার্কের বিস্তীর্ণ এলাকারও। এখনও রাস্তায় পড়ে রয়েছে গাছ, বিদ্যুতের খুঁটি। ভেঙে গিয়েছে শিব মন্দিরও। ঘরে জল না থাকায় বাইরে থেকে কেনা জলই ভরসা। কিন্তু, গাছ পড়ে রাস্তা যে বন্ধ! তাহলে উপায়! সমস্যা লাঘবে বুদ্ধি করে উপায় বাতলেছেন স্থানীয়রাই। গাছের তলা দিয়েই পানীয় জল সংগ্রহের কাজ চলছে।

শহরের দক্ষিণাংশেও অবস্থা তথৈবচ। ঘূর্ণিঝড়ের পর পঞ্চসায়র এলাকায় দু’দিন ধরে রাস্তায় পড়ে রয়েছে বহু গাছ। গড়িয়া স্টেশন থেকে ইএম বাইপাস আসার মূল দু’টি রাস্তা বন্ধ। কোথাও কোথাও বাড়ির ওপরেও পড়েছে বিশালাকার গাছ। গাছের ফাঁক দিয়ে কোনওমতে চলছে যাতায়াত। একে গাছ পড়ে বন্ধ রাস্তা। তারওপর বাতিস্তম্ভ পড়ে গিয়ে এখনও নিষ্প্রদীপ গোটা এলাকা। চরম সমস্যায় এলাকাবাসী।

প্রকৃতির তাণ্ডবের পর এখনও নেই বিদ্যুৎ, জল। দুর্ভোগে পড়া অজয়নগরের বাসিন্দারা রীতিমতো ক্ষুব্ধ। আর তারই রেশ পড়ল এদিন। সকালে ইএম বাইপাসের ওপর রাস্তা অবরোধে নামেন এলাকাবাসী। বাইপাসের একাংশে তৈরি হয় তীব্র যানজট। আধ ঘণ্টা অবরোধ চলার পর পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ তোলেন স্থানীয়রা।

ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবলীলার পর অবস্থা শোচনীয় বেহালাতেও। পানীয় জল, বিদ্যুৎ না থাকায়, দু’দিন ধরে বেহাল অবস্থা সকলের। জলের জন্য এদিক ওদিক ছুটোছুটি। এই গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ না থাকায় গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা। তাই বাধ্য হয়ে এদিন ডায়মন্ড হারবার রোডে ওডিআরসি সরকারি আবাসনের কাছে রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তাঁদের একটাই দাবি, গাছ কেটে দ্রুত বিদ্যুৎ ফিরিয়ে দিতে হবে। একই দাবিতে বেহালা চৌরাস্তা ও জেমস লং সরণি ক্রসিংয়েও রাস্তা অবরোধ করেন স্থানীয়রা। তিনটে সিইএসসির গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখান অবরোধকারীরা। বেহালার জেমস লং সরণি ও সত্যেন রায় রোড ক্রসিংয়েও বিদ্যুতের দাবিতে অবরোধ করেন এখানকার বাসিন্দারা। পুলিশ গেলে বিক্ষোভের মাত্রা আরও বেড়ে যায়।

গাছ উপড়ে বিপর্যস্ত অবস্থা গল্ফ গ্রিনেও। গাছ উপড়ে পড়েছে মিনিবাসের ওপর। ভেঙে তুবড়ে গিয়েছে বাস। দু’দিন কেটে গেলেও বালিগঞ্জ সার্কুলার রোডে রাস্তার ওপর পড়ে রয়েছে গাছ ও ভেঙে পড়া বাতিস্তম্ভ। ঝুঁকি নিয়ে পারাপার করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। শহরবাসী সমস্যায় জেরবার হলেও পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক হতে আরও সাতদিন লাগবে বলে জানিয়েছেন পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী।

প্রাকৃতিক দুর্যোগে জেরবার ম্যান্ডেভিলা গার্ডেন্সের। একটি আবাসনের বাসিন্দারাও। বেসমেন্টে জমে রয়েছে জল। ফলে জলে ডুবে রয়েছে বহু গাড়ি। সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী তথা স্থানীয় বিধায়ক সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

উমপুনের ধাক্কা লেগেছে কলকাতার সৌন্দর্যায়নে। ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডবে লেকটাউনে ক্ষতিগ্রস্ত বিগ বেনের ঘড়ি। ভেঙেচুরে দুমড়ে-মুচড়ে গিয়েছে ঘড়ির ডায়াল ও কাঁটা।