কলকাতা: উমপুনের দাপটে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে মালদার আমের। ঝড়ের দাপটে ২৫ হাজার মেট্রিক টন আম নষ্ট হয়েছে মালদায়। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ২৫ কোটি টাকা। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা। পাশাপাশি উমপুনের দাপটে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা ব্লকের বিস্তীর্ণ এলাকা।


দেগঙ্গার চৌরাশী, শিমুলিয়া আমুলিয়া হাদিপুর, নুরনগর চাঁপাতলা সহ বিস্তীর্ণ গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় হাজার হাজার বিঘা জুড়ে আমের গাছ ভেঙে তছনছ হয়ে গিয়েছে।  চাষিরা তীব্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বড় বড় প্রাচীন আমগাছগুলি গোড়া থেকে উপড়ে পড়েছে রাস্তার ধারের বাড়ির উপরে।  দেগঙ্গা ব্লক এর প্রায় প্রায় ২০০টির উপরে টালির বাড়ি ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।  গোটা এলাকায় বিদ্যুতের খুঁটিগুলো ভেঙে পড়েছে। ট্রান্সফর্মারগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আগামী একমাস ওই এলাকায় বিদ্যুৎ পরিষেবা থাকবে না বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।

আয়লা, বুলবুল, ফনির থেকেও বিধ্বংসী আকার ধারণ করেছিল ঘূর্ণিঝড় উমপুন।  ঝড় ঘণ্টায় প্রায় ২০০ কিলোমিটার বেগে দেগঙ্গার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়াও গোটা এলাকা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। এলাকাবাসীর দাবি, সাম্প্রতিককালে এত তীব্র সাইক্লোন কেউই দেখেনি। গোটা দেগঙ্গা ব্লক জুড়ে প্রায় ৫০ হাজার কুইন্টাল আম নষ্ট হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আম চাষীরা বিপুল পরিমাণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন । এই অবস্থায় তাঁরা সরকারি সাহায্য প্রার্থনা করেছেন। নিরুপায় হয়ে জালালউদ্দিন, আব্দুল রশিদ মণ্ডলের মতো আমচাষীদের কেউ কেউ এমনও বলছেন যে, সরকারি সাহায্য না পেলে হয়তো তাঁদের আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও পথ থাকবে না।

উমপুন এর প্রভাবে মালদায় বোরো ধানে ব্যাপক ক্ষতি। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১১ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমির ধান। মাথায় হাত মালদার ধানচাষীদের। এখনো ক্ষয়ক্ষতির পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট তৈরি হয়নি বলে জানিয়েছেন মালদার কৃষি দপ্তরের আধিকারিক অশোক কুমার মহন্ত। উমপুন এর প্রভাবে বুধবার সকাল থেকে শুরু হয় ঝিরঝির বৃষ্টি ও হাওয়া। সন্ধ্যার পর থেকে একদিকে যেমন হাওয়ার গতিবেগ বাড়ে তেমনই বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বাড়তে থাকে। জেলার বেশ কিছু জায়গায় গাছের ডাল ভেঙে পড়েছে। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর গঙ্গার পার্শ্ববর্তী ব্লকগুলিতে ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। হাওয়া এবং বৃষ্টির প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধান চাষ। এবছর প্রায় ৬৩ হাজার একর জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছিল। যার মধ্যে ১১ হাজারেরও বেশি হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়েছে বলে সেচ দপ্তর জানিয়েছে। যদিও এটা একেবারে প্রাথমিক রিপোর্ট।

ঝড়ের তাণ্ডবে মাথায় হাত মালদার আমচাষীদের। উদ্যানপালন দপ্তরের আধিকারিক রাহুল চক্রবর্তী বলেন, জেলায় ২৫ হাজার মেট্রিক টন আম নষ্ট হয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।

আর কয়েকদিন বাদেই জামাই ষষ্ঠী। তাই বাজারজাত করার জন্য আম পাড়ার প্রস্তুতি চলছিল চাষীদের মধ্যে। হুগলী জেলার সিঙ্গুর,পোলবা,চন্দননগর, চুঁচুড়ার বিস্তীর্ণ অঞ্চলে কয়েক হাজার আমচাষী রয়েছেন। মাথায় হাত তাঁদেরও। অনেকে আবার অগ্ৰিম অর্থ জমা দিয়ে আম গাছ লিজ নিয়েছিলেন। ক্ষতিগ্ৰস্ত তাঁরাও।