কলকাতা: একের পর এক নেতার দলবদল আর সেটাকে কেন্দ্র করে ক্ষোভ-বিক্ষোভ। নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই চড়ছে রাজ্য রাজনীতির পারদ। ২ দিনের বঙ্গসফরে আজ, শনিবার রাজ্যে এসেছেন অমিত শাহ। মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সভায় বিজেপিতে যোগদান করেন অন্যান্য দলের এক ঝাঁক সাংসদ-বিধায়ক ও কর্মী-সমর্থক। সমস্ত জল্পনার অবসান ঘটিয়ে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগদান করেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

একের পর এক হেভিওয়েট নেতার বিজেপিতে যোগদান তৃণমূলের অস্বস্তি ক্রমশ বাড়াচ্ছে। কিন্তু তাতে গুরুত্ব দিতে নারাজ অভিনেত্রী তথা বসিরহাটের তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান। দলবদলের নাটকীয়তার মধ্যেও তিনি নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিচ্ছেন। শনিবার এবিপি আনন্দকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে নুসরত বলেছেন, ''ঝড় বা মুশকিলের আভাস পেয়ে জাহাজ পাল্টানোর মানুষ আমি নয়। যাদের রাজনৈতিক আদর্শ রাতারাতি পাল্টে যায়, মানুষকে তাদের জবাব দিতে হবে। ৫-১০ বছর মন্ত্রী-বিধায়ক থেকে হঠাৎ নির্বাচনের ৪ মাস আগে কী হল সেটা কি ভাবার বিষয়? জনগণ সবটাই বুঝতে পারে।''

তৃণমূলের দলত্যাগী একাধিক নেতা-নেত্রী অভিযোগ তুলেছেন দলের অন্দরে কাজ করার পরিবেশ নিয়ে। তৃণমূলে থেকে সত্যিই কি মানুষের জন্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে? এই প্রসঙ্গেও সোজাসাপ্টা নুসরত। বলছেন, ''কাজ করার স্বাধীনতা কি ৪ মাস আগে হঠাৎ করেই চলে গেল? গত ১০ বছর ছিল? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মানুষের জন্য কাজ করার কোনও অসুবিধা নেই। কিন্তু কারও নিজের লাভের সমস্যা হতেই পারে। কারণ দিদি সব জানেন, সব খবর রাখেন।''

শনিবার মেদিনীপুরের সভামঞ্চ থেকে তৃণমূলের বিরুদ্ধে একাধিক তোপ দাগেন শুভেন্দু। সেই সঙ্গে নাম না করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিঁধেছেন তিনি। 'তোলাবাজ ভাইপো হঠাও' স্লোগান তুলেছেন শুভেন্দু অধিকারী। পাশাপাশি দলবদলের পর একাধিক নেতা অভিযোগের আঙুল তুলেছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের দিকে। বলা হচ্ছে, অভিষেকের জন্যই তৃণমূলে অনেকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন না। এবিপি আনন্দকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে অবশ্য অভিষেকের পাশে দাঁড়িয়ে নাম না করে শুভেন্দুর বিরুদ্ধেই আক্রমণ শানালেন নুসরত। বুঝিয়ে দিলেন, নতুন নেতৃত্বের গুরুত্বও। নুসরত বলছেন, ''দলে বর্ষীয়ান নেতারা অভিজ্ঞতা আনেন আর নতুন প্রজন্ম আনে নতুন কৌশল। একটা দলে এই ২টো জিনিসেরই সমান ভারসাম্য থাকা দরকার। সমস্যা খুঁজলে ১০০০ টা পাওয়া যাবে। কিন্তু ইচ্ছা থাকলে সমস্যার সমাধান খোঁজার চেষ্টা করা উচিত। লোকজনের প্রশান্ত কিশোরকে নিয়েও সমস্যা, তাঁরা বিজেপিতে যোগদান করছেন। তাঁরা কি জানেন না পিকের অতীত কী? পিকে একজন পেশাদার ভোটকুশলী। ২০১৪ সালে বিজেপির জাতীয় স্তরে প্রচারের সমস্ত কৃতিত্ব ছিল সম্পূর্ণ পিকের সংস্থা আইপ্যাকের।''

পাখির চোখ একুশ। তার আগেই সরগরম রাজ্য-রাজনীতি। কিন্তু বাংলার মানুষের ওপর থেকে ভরসা হারাচ্ছেন না নুসরত। বলছেন, ''মানুষ দিদিকে চেনেন। মানুষের কাছে একটাই মুখ, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সিপিএম থেকে বাঁচিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। দাঙ্গাবাজদের রুখেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষকদের জন্য লড়াই করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাংলাকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মানুষ সেটা জানেন এবং এটাই মনে রাখবেন।''

শুভেন্দু-শীলভদ্র দত্তদের বিজেপিতে যোগদানের দিনই রাজনীতির আঙিনায় নতুন লড়াইয়ের অঙ্গীকার তৃণমূল সাংসদ তথা অভিনেত্রী নুসরতের গলায়।