নয়াদিল্লি: প্রয়াত ভারতের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। আজ বিকেল পাঁচটা পাঁচ মিনিটে নয়াদিল্লির এইমস-এ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। হাসপাতালের পক্ষ থেকে এই ঘোষণা করা হয়েছে। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর। তিনি কিডনি ও মূত্রনালির সংক্রমণের সমস্যা নিয়ে গত ১১ জুন থেকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট সিস্টেমে রাখা হয়েছিল। আজ তাঁর জীবনাবসান হল। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই দেশজুড়ে শোকের ছায়া। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ, কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীরা শোকপ্রকাশ করেছেন। আগামীকাল বিকেল পাঁচটায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।


১৯২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর মধ্যপ্রদেশের গ্বালিয়রে জন্ম হয় বাজপেয়ীর। স্কুলের পড়াশোনা শেষ করে তিনি ভিক্টোরিয়া কলেজ (লক্ষ্মীবাই কলেজ) থেকে স্নাতক হন। এরপর কানপুরের ডিএভি কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে এমএ পাশ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আরএসএস-এ যোগ দেন। জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন তিনি। সাংবাদিকতা শুরু করেন বাজপেয়ী। এই দার্শনিক রাজনীতিবিদ কবিতা লিখতেন। তিনি ১৯৫৭ সালে উত্তরপ্রদেশের বলরামপুর থেকে প্রথমবার লোকসভার সাংসদ নির্বাচিত হন। সংসদে প্রথম বক্তব্যেই তিনি তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহরুর নজর কেড়ে নেন। ৪৭ বছর ধরে তিনি সাংসদ ছিলেন। ১০ বার লোকসভা ও দু’বার রাজ্যসভার সাংসদ হন তিনি। ১৯৯৬ সালে প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। সেবার জোট সরকার টেকে মাত্র ১৩ দিন। ১৯৯৮ সালে ক্ষমতায় ফেরে বাজপেয়ীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ। সেবার ১৩ মাস পরে সরকারের পতন হয়। ১৯৯৯ সালের অক্টোবরে তৃতীয়বারের জন্য প্রধানমন্ত্রী হন বাজপেয়ী। এবার তিনি নির্ধারিত পাঁচ বছরই ক্ষমতায় থাকেন।

সব রাজনৈতিক দলের নেতা-নেত্রীদের সঙ্গেই সুসম্পর্ক ছিল বাজপেয়ীর। তিনি ১৯৭৭ সালে মোরারজি দেশাইয়ের নেতৃত্বাধীন জনতা পার্টির সরকারের বিদেশমন্ত্রী ছিলেন। তিনিই প্রথম রাজনীতিবিদ হিসেবে রাষ্ট্রপুঞ্জে হিন্দিতে ভাষণ দেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকার সময়ই ১৯৯৮ সালের মে মাসে রাজস্থানের পোখরানে পরীক্ষামূলকভাবে পরমাণু বিস্ফোরণ ঘটায় ভারত। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তিস্থাপনের লক্ষ্যে ১৯৯৯-এর ফেব্রুয়ারিতে নয়াদিল্লি-লাহৌর বাস চালু করেন বাজপেয়ী। তাঁকে ২০১৫ সালের মার্চে ভারতরত্ন খেতাবে ভূষিত করা হয়।