কলকাতা: ১৫ জুন নয়াদিল্লিতে নীতি আয়োগের বৈঠকে যাচ্ছেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। ওই বৈঠকে থাকতে পারছেন না, এ কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে চিঠি পাঠিয়েছেন তিনি। ‘রাজ্য সরকারের প্ল্যান, পরিকল্পনায় সাহায্য করার কোনও আর্থিক ক্ষমতা’ নীতি আয়োগের না থাকায় সেখানে যোগদান ‘নিষ্ফল’ বলে সওয়াল করেছেন মমতা। অতীতেও পলিসিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য গঠিত নীতি আয়োগের বৈঠকে যাননি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী।
লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে বিজেপির কাছে ধাক্কা খাওয়ার পর রাজনৈতিক সংঘাতের প্রেক্ষাপটে নীতি আয়োগ সম্পর্কে আগের অবস্থান বহাল রেখে ফের সেখানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত তাঁর।
উন্নয়ন সংক্রান্ত নানা ইস্যুতে নীতি আয়োগের বৈঠকে পৌরহিত্য করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটি পঞ্চম বৈঠক নীতি আয়োগের। সংস্থার সিইও সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে সেখানে অংশ গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। নীতি আয়োগের পরিচালনা পর্ষদে আছেন সব মুখ্যমন্ত্রী।
অতীতে যোজনা কমিশন তুলে দিয়ে নীতি আয়োগ নামে নতুন সংস্থা সৃষ্টির সিদ্ধান্তে অসন্তুষ্ট মমতা থিঙ্কট্যাঙ্কের বৈঠকগুলিতে গরহাজির ছিলেন। প্রধানমন্ত্রীকে লেখা চিঠিতে তিনি বলেছেন, নীতি আয়োগের রাজ্যের পরিকল্পনায় মদত দেওয়ার কোনও আর্থিক অধিকার, ক্ষমতা নেই। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের, যার কোনও আর্থিক ক্ষমতাই নেই, বৈঠকে সামিল হওয়া আমার কাছে নিষ্ফল।
আমন্ত্রণ ফিরিয়ে মমতা এও জানিয়েছেন, কেন্দ্রের প্রাক্তন এনডিএ সরকার ২০১৫-র ১ জানুয়ারি যোজনা কমিশনের পরিবর্তে নীতি আয়োগ স্থাপনের সিদ্ধান্তই নিয়েছিল রাজ্যগুলির সঙ্গে কোনও কথা না বলে। মমতা লিখেছেন, যোজনা কমিশন দেশের ফেডেরাল নীতি তুলে ধরত। অর্থনীতি ও সম্পদ বন্টনের মতো বিষয়ে সহযোগিতামূলক ফেডেরালতন্ত্রই ছিল তার লক্ষ্য। আপনাদের একতরফা ঘোষণায় আমি হতবাক। ওই ঘোষণার আগে মুখ্যমন্ত্রীদের কোনও মতামতই নেওয়া হয়নি। ১৯৩৮ সালে আর কেউ নন, নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় পরিকল্পনা কমিশন গঠন করেছিলেন বলে চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মমতা। লিখেছেন, যোজনা কমিশনের কাছে প্রস্তাব আসত একেবারে ব্লক থেকে শুরু করে জেলা স্তর-প্রতিটি রাজ্যের তৃণমূল স্তর থেকে।
সহযোগিতামূলক ফেডেরাল কাঠামো, ফেডেরাল নীতি জোরদার করার লক্ষ্যে ইন্টার-স্টেট কাউন্সিলের দিকে নজর ঘোরানোর কথা বলেছেন মমতা। লিখেছেন, নীতি আয়োগ নিয়ে গত সাড়ে চার বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমার আগের সেই প্রস্তাবের কথাই বলছি যে, সংবিধানের ২৬৩ অনুচ্ছেদের আওতায় গঠিত ইন্টার-স্টেট কাউন্সিলেই প্রয়োজনীয় সংশোধন ঘটিয়ে জোর দেওয়া হোক যাতে তা দেশের মূল প্রতিষ্ঠান হিসাবে তার বর্ধিত ভূমিকা ঠিকঠাক পালন করতে পারে। এতে সহযোগিতামূলক ফেডেরাল সম্পর্ক গভীর ও ফেডেরাল নীতি শক্তিশালী হবে। ইন্টার-স্টেট কাউন্সিলের মধ্যে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলকেও চালু করা যেতে পারে। দীর্ঘ সময় ধরে ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট কাউন্সিলকে নিষ্ক্রিয় করা রাখা হয়েছে।
আঞ্চলিক অসাম্যের সমস্যা মোকাবিলায় নীতি আয়োগকে তহবিল বরাদ্দের ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে নীতি আয়োগের কিছু অফিসার ও এক প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিবৃতিরও দৃষ্টান্ত হিসাবে উল্লেখ করেছেন মমতা।