সেবাগ্রাম:  কেন্দ্রের নরেন্দ্র মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর তুঙ্গে নিয়ে গেল কংগ্রেস। ‘ঘৃণা ও হিংসা’র তত্ত্বর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য মোদি সরকারের বিরুদ্ধে ‘দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামে’র ডাক দিল কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটি। দল বলেছে, ‘ঘৃণা ও হিংসা’র ওই তত্ত্বের কারণেই খুন হতে হয়েছিল মহাত্মা গাঁধীকে।

গাঁধীজীর ১৪৯ তম জন্মবার্ষিকীতে কংগ্রেসের ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় মহারাষ্ট্রের ওয়ার্ধা জেলার সেবাগ্রাম আশ্রমের মহাদেব ভবনে। কংগ্রেস রাজধানী দিল্লিতে বিক্ষোভরত কৃষকদের ওপর শক্তিপ্রয়োগেরও কঠোর নিন্দা করেছে।  ৭৫ বছর পর সেবাগ্রামে কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির দ্বিতীয় বৈঠক।১৯৪২-এ এখানে প্রথমবার ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক হয়েছিল। ওই বৈঠকে মহাত্মার নেতৃত্বে ‘ভারত ছাড়ো’ প্রস্তাব গৃহীত হয়েছিল।

কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেছেন, মহাত্মার লক্ষ্য ছিল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দেশকে ভাগ করার লক্ষ্যে কাজ করছেন।মহাত্মার ১৫০ তম জন্মবার্ষিকী বর্ষ উপলক্ষ্যে একটি সমাবেশে রাহুল রাফাল যুদ্ধবিমান ক্রয় চুক্তি নিয়েও মোদি সরকারের বিরুদ্ধে সুর চড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, ফরাসি সংস্থা দাসল্ট অ্যাভিয়েশনের অফসেট পার্টনার হিসেবে রাষ্ট্রায়ত্ত হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (হ্যাল)-এর পরিবর্তে কেন অনিল অম্বানির রিলায়েন্স ডিফেন্সকে বেছে নেওয়া হল, তার ব্যাখ্যা দেশের কাছে দেওয়া উচিত মোদির।

রাহুল বলেছেন, এ ব্যাপারে সংসদে যখন তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন তখন মোদি ‘চোখে চোখ মেলাতে’ পারেননি। কেননা, এ ব্যাপারে দেশের কাছে ‘মিথ্যে’ বলেছিলেন মোদি।

কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, মহাত্মার লক্ষ্য ছিল দেশকে ঐক্যবদ্ধ করা, অন্যদিকে, বিভিন্ন সম্প্রদায়কে লড়িয়ে দিয়ে মোদীকে দেশকে বিভক্ত করছেন।

কৃষক ইস্যুতেও বিজেপি সরকারকে একহাত নিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি। তিনি বলেছেন, এনডিএ সরকার তাদের ঘনিষ্ঠ পুঁজিপতিদের ৩.২০ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ মকুব করেছে। কিন্তু কৃষকদের ঋণ মকুব করেনি।

নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে তিনি বলেছেন, এর মাধ্যমে দেশের ‘চোরেরা’ পিছনের দরজা দিয়ে তাদের কালো টাকা সাদা করে নিয়েছে। অন্যদিকে, বাতিল ১০০০ ও ৫০০ টাকার নোট জমা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ব্যাঙ্কে লাইন দিতে দিতে হয়েছে।

রাহুলের অভিযোগ, ‘মোদি চৌকিদার নন, ভাগীদার’ (পুঁজিপতিদের অংশীদার)।

তিনি বলেছেন, দেশের মানুষ ভরসা রেখেছিলেন, সেই ভরসা ভেঙেছেন মোদি। তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কংগ্রেস ও মহাত্মা গাঁধীর আদর্শের প্রতি আস্থা রাখার আর্জিও জানিয়েছেন রাহুল।

কংগ্রেস মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালা সাংবাদিক বৈঠকে বলেছেন, ভারতের চিন্তাভাবনা এবং আত্মা ও দেহে মহাত্মা গাঁধীর অবদান নিয়ে দুটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী লালবাহাদুর শাস্ত্রীর ‘জয় জওয়ান, জয় কিষান’ শুধু স্লোগান নয়, জীবন ধারা। কৃষকদের অধিকারের জন্য কংগ্রেস লড়াই চালিয়ে যাবে।

সুরজেওয়ালা বলেছেন, ঘৃণা, বিভেদ, আতঙ্ক, মেরুকরণ, বিতর্ক ও ভিন্নমতকে দমনের রাজনীতির প্রতিবাদে মোদি সরকারের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় স্বাধীনতা সংগ্রাম হবে। তিনি অভিযোগ করেছেন, মোদি সরকার দেশের বহুত্ববাদের বিরুদ্ধে এবং প্রতিশোধ, মিথ্যা ও বিশ্বাসঘাতকতার রাজনীতিতে লিপ্ত। ভাষণে গাঁধীজীর কথা বলা খুব সহজ। ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠকে তুলে ধরা হয়েছে যে, যারা একটা সময় গাঁধীজী ও তাঁর মতাদর্শকে কালিমালিপ্ত করেছিল, তারাই এখন তাঁর স্তুতি করছে। তিনি বলেছেন, ওই মতাদর্শে বিশ্বাসীরা প্রচারের জন্য গাঁধীজীর চশমাই ব্যবহার করতে পারে। এ ধরনের লোকজনদের ফাঁপাবুলি ও দুমুখো বক্তব্যের বিষয়টি তুলে ধরবে কংগ্রেস।