নয়াদিল্লি: সস্ত্রীক চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতকে নিয়ে তামিলনাড়ুর কুন্নুরে নীলগিরি পাহাড়ে ভেঙে পড়ল বায়ুসেনার Mi-17 কপ্টার। এই দুর্ঘটনায় কপ্টারে থাকা ১৪ জনের মধ্যে ১৩ জনেরই মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর জখম গ্রুপ ক্যাপ্টেন বরুণ সিংহ। ওয়েলিংটনের সেনা হাসপাতালে তাঁর চিকিৎসা চলছে।
চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল রাওয়াত সহ ১৩ জনের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন সেনাপ্রধান জেনারেল মনোজ মুকুন্দ নরবণে সহ উচ্চপদস্থ সেনা আধিকারিকরা।
রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ বহু বিশিষ্ট ব্যক্তি এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন।
১৯৭৮ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছিলেন বিপিন রাওয়াত। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সেনাপ্রধান হন তিনি। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ হন তিনি। দু’বছরের মাথায় সেই ডিসেম্বরেই ভয়াবহ কপ্টার দুর্ঘটনার কবলে পড়লেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে থাকাকালীন গত চার দশকে অনেক কঠিন পরিস্থিতিতেই পড়েছেন বিপিন রাওয়াত। সেসব সামলে একের পর এক ধাপ পেরিয়ে উঠে আসেন ভারতীয় সেনার সর্বোচ্চ পদে। মোদি সরকারের আমলে প্রথম তৈরি করা হয় চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ অথবা সিডিএস পদটি। আর এই গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য বিপিন রাওয়াতকেই বেছে নেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
মূলত তিন বাহিনীর যৌথ বিষয়ে প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মূল পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। তিন বাহিনীর যৌথ মঞ্চ, ট্রাই-সার্ভিস অর্গানাইজেশনের প্রশাসনিক দায়িত্বও তাঁরই হাতে। প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত সরঞ্জাম কেনা এবং পরিকল্পনা কমিটির সদস্যও চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। বিভিন্ন বিষয়ে বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় বাড়ানো, সামরিক বিষয়ে কৌশল তৈরি করে সরকারের সরকারের কাছে তা পেশ করেন চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। তিন বাহিনীর যৌথ কার্যকলাপের উপরে বাৎসরিক রিপোর্টও দেন তিনি।
১৯৭৮ সালের ১৬ ডিসেম্বর, ইলেভেন গোর্খা রাইফেলসের ফিফথ ব্যাটালিয়ানে যোগ দেন বিপিন রাওয়াত। তাঁর বাবাও ছিলেন সেনা অফিসার। হাই অল্টিটিউড ওয়ারফেয়ার অর্থাৎ দুর্গম উচ্চ এলাকায় অপারেশনে বিশেষ অভিজ্ঞতা তাঁর। ১৯৮৭ সালে অরুণাচল সীমান্তে উত্তেজনার সময় চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মির মুখোমুখি হয়েছিল বিপিন রাওয়াতের নেতৃত্বাধীন ভারতীয় সেনার ব্যাটালিয়ান। ২০১৫ সালে মায়ানমার থেকে ভারতে ঢুকে মণিপুরে ভারতীয় সেনার ১৮ জন জওয়ানকে মেরেছিল জঙ্গিরা। পাল্টা মায়ানমারে ঢুকে জঙ্গি নিধন করেছিল ভারতীয় সেনা। ২১ প্যারাশুট রেজিমেন্ট সেই অভিযানের দায়িত্বে ছিল। সেই সময় ডিমাপুরের থার্ড কোরের দায়িত্বে ছিলেন বিপিন রাওয়াত।
২০১৬ সালের ১৭ ডিসেম্বর ২৭-তম ভারতীয় সেনাপ্রধান হিসেবে দায়িত্বভার নেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত। স্যাম মানেকশ ও দলবীর সিংহ সুহাগের পর তিনি গোর্খা ব্রিগেডের তৃতীয় অফিসার, যিনি দেশের সেনাপ্রধান হন। সেনাপ্রধান পদে অবসরের পর দেশের প্রথম চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ পদে নিয়োগ করা হয় বিপিন রাওয়াতকে। সাধারণত সেনার তিন বাহিনীর শীর্ষ পদাধিকারীদের অবসরের বয়স হয় ৬২ বছর। চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফের ক্ষেত্রে অবসরের বয়স করা হয় ৬৫ বছর।
ডোকলামে যখন ভারত ও চিনের মধ্যে সংঘাতের পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন সেনাপ্রধান ছিলেন বিপিন রাওয়াত। আবার প্যাংগং লেকে যখন চিনা সেনার মুখোমুখি হয় ভারত, তখন জেনারেল রাওয়াত চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ। চিনই ভারতের প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বিপজ্জনক, বরাবর এই তত্ত্বে বিশ্বাসী জেনারেল বিপিন রাওয়াত।
ভারতীয় সেনাবাহিনীতে নিজের অবদানের জন্য পরম বিশিষ্ট সেনা মেডেল, উত্তম যুদ্ধ সেবা মেডেল, অতি বিশিষ্ট সেবা মেডেলে ভূষিত হয়েছেন জেনারেল বিপিন রাওয়াত।