কলকাতা: করোনাকালে ভোটের সময় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকাকে তুলোধনা করে সংবাদ শিরোনামে রইলেন এক বঙ্গ বিচারপতি। সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মুহূর্তে মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে আসীন তিনি। তবে এই প্রথম মোটেই নয়, বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ-রায় এর আগেও একাধিকবার দিয়েছেন তিনি। ঝলকে সেরকমই কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ-রায় ফিরে দেখা যাক।


সোমবার কড়া ভাষায় নির্বাচন কমিশনকে তুলোধনা করে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের জন্য দায়ী কমিশন। অফিসারদের বিরুদ্ধে খুনের মামলা রুজু হওয়া দরকার। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না জানালে ২ মে ভোট গণনা বন্ধ করে দেব।‘ তাঁর যে রায়ে চিকিৎসক মহল থেকে আম জনতা সকলেই দেখছেন আশার আলো।


ঠিক যেমনটা বঙ্গে করোনার প্রথম ধাক্কার সময় হয়েছিল। সেই সময় কলকাতা হাইকোর্টের অন্যতম সিনিয়র বিচারপতি পদে ছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর ও বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ডিভিশন বেঞ্চ পুজোয় প্যান্ডেলে জনসাধারণের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারির সাহসী রায় দিয়েছিল। বাধ্য হয়ে দূর থেকে ঠাকুর দর্শনে জোর দিয়ে বঙ্গবাসীর স্বাস্থ্য ঠিক রাখার দিকটায় জোর দেওয়াটা বেশি প্রয়োজনীয় বলে পর্যবেক্ষণ ছিল তাঁদের। পুজো করার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সংখ্যক লোক বেঁধে দেওয়া থেকে প্যান্ডেলে কাজের সময় প্রয়োজনীয়ভাবে মাস্ক, স্যানিটাইজার ব্যবহার, সবরকম সতর্কতা পালনের নিদান ছিল তাঁদের রায়ে।


করোনার উপদ্রব গতবারের কালীপুজোর সময় না কমায় গোটা রাজ্যে বাজি পোড়ানোর ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা জারির রায়দানেও যুক্ত ছিলেন তিনি। উৎসবপালন মানুষের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার থেকে বেশি গুরুত্ব পেতে পারে না বলেই পর্যবেক্ষণ ছিল চলতি বছরের ৪ জানুয়ারি মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির পদে বসা সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের।


প্রসঙ্গত কয়েকদিন আগে করোনাকালে ভোট করানোর প্রসঙ্গে কমিশনের ভূমিকা নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিল কলকাতা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ। কলকাতা হাইকোর্টের বর্তমান প্রধান বিচারপতি টিবিএন রাধাকৃষ্ণণের সঙ্গে যে বেঞ্চে ছিলেন বিচারপতি অরিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।


এদিকে, গতবছর করোনাকালে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রায় ছাড়াও কলকাতার প্রাইভেট স্কুলগুলিতে ফি কমানো, প্রাপ্তবয়স্ক মহিলাদের পছন্দের জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়া ও বিয়ে করার স্বাধীনতার পক্ষে সওয়ালের মতো একাধিক উল্লেখযোগ্য পর্যবেক্ষণ-রায়ও দিয়েছেন বাঙালি বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়।


করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকা সত্বেও অভিভাবকদের থেকে পুরো টাকা নেওয়ার অভিযোগে কলকাতা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়েছিলেন কিছু অভিভাবক। সেই মামলার রায়ে বিচারপতি সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিচারপতি মৌসুমি ভট্টাচার্য ২০২০-২১ অর্থবর্ষের জন্য বেসরকারি স্কুলগুলিকে পড়ুয়াদের থেকে নেওয়া টাকায় ২০ শতাংশ ফি-কমানোর নির্দেশ দিয়েছিল।


গত বছরের শেষের দিকেই সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ধর্মান্তরিত হয়ে বিয়ে করা প্রসঙ্গে পর্যবেক্ষণ ছিল, প্রাপ্তবয়স্ক কোনও মহিলা ধর্মান্তরিত হয়ে নিজের পছন্দে বিয়ে করে যদি বাপের বাড়ি না ফিরে আসতে চান, সেক্ষেত্রে আদালত কোনও হস্তক্ষেপ করতে পারে না।


কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে স্নাতক ও এলএলবি করার পর ১৯৯০ সালে আইনজীবী হিসেবে কলকাতা হাইকোর্টে কাজ শুরু করেছিলেন সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতা হাইকোর্টের পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টেও ছিল আইনজীবী হিসেবে তাঁর সফল বিচরণ। ২০০৬-র মাঝামাঝি থেকে গত বছরের শেষ পর্যন্ত সামলেছেন কলকাতা হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারকের ভূমিকা। তারপর দায়িত্ব পেয়েছেন মাদ্রাজ হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির গুরুত্বপূর্ণ পদ সামলানোর।